বুধবার, ৯ মার্চ, ২০২২ ০০:০০ টা

জাতীয় দুর্যোগ প্রস্তুতি দিবস-২০২২

জাতীয় দুর্যোগ প্রস্তুতি দিবস-২০২২

প্রতি বছর বন্যা ও নদী ভাঙনে শেষ সম্বলটুকু হারান অসংখ্য মানুষ। বন্যার কারণে দারিদ্র্যের কশাঘাত থেকে কখনই উঠে দাঁড়াতে পারে না চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চলের মানুষ। অথচ বন্যাপ্রবণ এলাকায় শুধু বসতভিটা উঁচু করেই এ সমস্যার সমাধান সম্ভব। আর অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞান কাজে লাগিয়ে টেকসই বেড়িবাঁধ করার মাধ্যমে দূর করা যায় নদী ভাঙন। জাতীয় দুর্যোগ প্রস্তুতি দিবস-২০২২ উপলক্ষে সম্প্রতি ‘উত্তরাঞ্চলের চরের মানুষের দুর্যোগ মোকাবিলা ও জীবনমান উন্নয়নে করণীয়’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় বক্তারা এ অভিমত ব্যক্ত করেন। এডব্লিউও ইন্টারন্যাশনাল ও বিএমজেড-এর সহযোগিতায় ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপ লিমিটেডের কনফারেন্স হলে এ আলোচনার আয়োজন করে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতর ও গণউন্নয়ন কেন্দ্র।  অনুষ্ঠান আয়োজনে আরও সহযোগী হিসেবে ছিল বাংলাদেশ প্রতিদিন। ওই আলেচনার চুম্বক অংশ তুলে ধরেছেন- আবদুল কাদেরসাইফ ইমন

 

ডেল্টা প্ল্যান বাস্তবায়ন হলে বাংলাদেশ হয়ে যাবে সব দুর্যোগ সহনীয় রাষ্ট্র

ডা. এনামুর রহমান

প্রতিমন্ত্রী, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়

দীর্ঘদিন ধরে চর এলাকায় ভিটি উঁচুকরণ প্রকল্প চলছে। এটার সফলতা সম্পর্কে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও ওয়াকিবহাল আছেন। তিনি আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন, চর এলাকায় প্রতিটি বাড়ির ভিটি বন্যার পানির সর্বোচ্চ উচ্চতার ওপরে করার জন্য। এতে বন্যার কারণে ঘরবাড়ি ছেড়ে মানুষের স্থানান্তরের বিষয়টি এড়ানো যায়। মানুষ গবাদিপশু ও শস্য নিয়ে ঘরেই থাকতে পারে। এটা চলমান থাকলে অবশ্যই চর এলাকার মানুষের জীবনযাত্রার মান বাড়বে। দারিদ্র্যমুক্ত হবে। একই সঙ্গে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় যৌথভাবে বৈঠক করে চরগুলোকে বেড়িবাঁধের আওতায় আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এতে পানির গতির জন্য ভূমিধস বা ভাঙন বন্ধ করতে পারব। চরের বালি সরিয়ে ফসল উৎপাদনের উপযোগী করে গড়ে তোলা। মাটির উর্বরতা বাড়ানোর জন্য কাজ করতে হবে। পাশাপাশি চরাঞ্চলের মানুষের উন্নয়নে প্রশিক্ষণ প্রদান ইত্যাদি বিষয়ে মন্ত্রণালয়ে আলোচনা সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ ছাড়া দুর্যোগ হিসেবে ভূমিকম্প ব্যবস্থাপনার জন্য বাংলাদেশ ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড প্রণয়ন করা হয়েছে। এই কোড অনুযায়ী সাড়ে ৭ রিখটার স্কেল স্ট্যান্ডার্ড ধরে এখনকার ভবনগুলো হবে। যেসব স্থাপনা বেশি পুরনো সেগুলো ভেঙে বিল্ডিং কোড অনুযায়ী নতুনভাবে তৈরি করব। ইতোমধ্যে প্রকল্পটির জন্য জাপান আর্থিক ও কারিগরি সহায়তায় এগিয়ে এসেছে। যেসব ভবন ২০-৩০ তলা হয়ে গেছে, সেগুলো ভূমিকম্প সহনশীল কি না যাচাই-বাছাই করে বিল্ডিং কোড অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এই তিনটি ধাপে কাজ করতে পারলে ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ পাবে উন্নত শহর-বন্দর। ভূমিকম্পের সময় গ্যাস ও বিদ্যুৎ স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধের ব্যবস্থা করতে কাজ চলছে। অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকি হ্রাসেও নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয় অবৈধ সংযোগ বন্ধে কাজ করে যাচ্ছে। রাজউক অগ্নিকাণ্ড রোধে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে অগ্নি নির্বাপন, জরুরি অবতরণ ও পানির পর্যাপ্ত ব্যবস্থা আছে কি না সেগুলো দেখার জন্য কমিটি গঠন করেছে। তারা সব কাগজপত্র যাচাই করে ভবনে বসবাসের অনুমতি দেবে। প্রাকৃতিক দুর্যোগে সহনীয় হওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী আমাদের ডেল্টা প্ল্যান দিয়েছেন। অনেক বড় বাজেট। ছয়টি হটস্পট। ডেল্টা প্ল্যান বাস্তবায়ন হলে বাংলাদেশ সব দুর্যোগে সহনীয় রাষ্ট্র হয়ে যাবে। অনুষ্ঠানের শুরুতে প্রাকৃতিক দুর্যোগে উত্তরাঞ্চলের চরের মানুষের জীবনযাপন চিত্র তুলে ধরেন চরাঞ্চল গবেষক ও গণউন্নয়ন কেন্দ্রের নির্বাহী প্রধান এম আবদুস সালাম। একই সঙ্গে গণউন্নয়ন কেন্দ্রের প্রকল্পের মাধ্যমে চরাঞ্চলের মানুষের ভিটামাটি উঁচু করে কীভাবে তাদের বন্যার ক্ষয়ক্ষতি থেকে রক্ষা করেছেন তা ব্যাখ্যা করেন। তিনি বলেন, আমরা গণউন্নয়ন কেন্দ্র ৪০টি পরিবারের জন্য এমন একটি প্রকল্পের নকশা করেছি ১৪৪.৪২ শতক জমিতে। ঘরবাড়িগুলো ৮ ফুট উঁচু। সোলার লাইট দিয়েছি। টয়লেট, টিউবওয়েল, নারী ও কিশোরীদের জন্য ১০টি গোসলখানা, পয়ঃনিষ্কাশনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। মোট খরচ ২০ লাখ ৬৭ হাজার টাকা। গড়ে প্রতি পরিবারের পেছনে ব্যয় ৫০ হাজার টাকা। এটা খুব বেশি নয়।  এ পরিবারগুলোর বন্যায় যে ক্ষতি হয়, সরকারি ও বেসরকারিভাবে যে সাহায্য দিতে হয়, তা ৫০ হাজার টাকার চেয়ে অনেক বেশি।

 

সহায়-সম্বলহীন মানুষকে সুন্দর জীবন দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী এসব উদ্যোগ নিয়েছেন

ক্যাপ্টেন (অব.) বি তাজুল ইসলাম

সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়

গণমানুষের কল্যাণের জন্য কাজ করে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। আর এসব কর্মকাণ্ডের একটাই উদ্দেশ্য সাধারণ মানুষ যেন ভালো মানের জীবনের সন্ধান পায়। দারিদ্র্যবিমোচনের জন্য সরকারের এই মুহূর্তে ১৪৭টি প্রকল্প রয়েছে। যার কিছু করে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়, কিছু করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ ও অন্যান্য মন্ত্রণালয়। সাধারণ মানুষের ভাগ্যোন্নয়নে এ রকম একান্তভাবে কাজ করার সুযোগ আমরা পেয়েছি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঐকান্তিক প্রচেষ্টার কারণে। আমাদের সংবিধানে রয়েছে- অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য। সবগুলোই আমাদের রাষ্ট্রের মানুষের নৈতিক অধিকার। আজ ভূমিহীনদের ভূমি ও ঘর করে দেওয়া হচ্ছে। বিশ্ব পরিমণ্ডলে আমাদের বাংলাদেশকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে; যা এসব প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে ভূমিহীন রেখে করা সম্ভব নয়। সে কারণে সহায়-সম্বলহীনদের সুন্দর জীবন দেওয়ার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। এক সময়- ঘূর্ণিঝড়, সাইক্লোন, জলোচ্ছ্বাসে অনেক প্রাণহানি ঘটত। সত্তরের মুক্তিযুদ্ধে লাখ লাখ লোক মারা যায়। সেখান থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাত ধরে আসে দুর্যোগ পূর্ববর্তী আপডেট। এখন দুর্যোগ মোকাবিলার প্রস্তুতি নেওয়ার মতো আগাম তথ্য থাকে। যার ফলে ক্ষয়ক্ষতিও অনেক কম হচ্ছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাসের চেয়ে সামাজিক দুর্যোগ এখন বেশি ক্ষতি করছে।  সামাজিক ঝুঁকি এড়াতে আরও কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।

 

জনসচেতনতা সবার প্রচেষ্টায় সম্ভব দুর্যোগ পরবর্তী ক্ষয়ক্ষতি কমানো

কামরুল হাসান এনডিসি

সচিব, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়

নদী ভাঙনে সকালে যিনি রাজা, বিকালে তিনি ফকির। এটাই নদী  পাড়ের মানুষের বাস্তবতা। এতে শেষ সম্বল হারিয়ে অনেকেই হয়ে পড়েন সর্বস্বান্ত। জীবিকার তাগিদে তারা চলে যাচ্ছেন অন্যত্র। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় অধিক গুরুত্বারোপ করেছেন। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে দুর্যোগ সহনীয় ঘর করে দিচ্ছে। যেখানে ঠাঁই হচ্ছে নদী ভাঙনে ভুক্তভোগীদের। এ ছাড়া আমরা ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকায় অবস্থান করছি। বিগত ১৫০ বছরের ইতিহাস বলছে, বাংলাদেশের মানুষ প্রায় ৮ রিখটার স্কেলের ভূমিকম্প দেখেছে। আমরা ভূমিকম্প নিয়েও কাজ করছি। মানুষের কাছ থেকে উঠে আসা অভিজ্ঞতাকে গুরুত্ব দিচ্ছে আমাদের মন্ত্রণালয়। এসব অর্জিত জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে দুর্যোগের কারণে ক্ষয়ক্ষতি নিরসনে কাজ চলছে। উপকূলীয় এলাকায় ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাসের কারণে প্রতি বছর অনেক মানুষ মারা যেত। দুর্যোগভেদে যার মাত্রা প্রায় ৭ ডিজিট পর্যন্ত উঠে যেত।  সেটাকে আমরা কমিয়ে আনতে পেরেছি। সবই সম্ভব হয়েছে জনসচেতনতা এবং সবার প্রচেষ্টার কারণেই।

 

এমন উদ্যোগগুলো মানুষের কল্যাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে

এম আবদুস সালাম

নির্বাহী প্রধান, গণউন্নয়ন কেন্দ্র

চরের মানুষের জীবন-জীবিকার জন্য প্রথমেই দরকার কীভাবে বন্যা মোকাবিলা করে টিকে থাকবে সেটি বোঝা। এ বিষয়ে একটি অভিজ্ঞতা শেয়ার করছি। গাইবান্ধার সিংহাই চরে বন্যার পানির ছোঁয়াও লাগেনি। ভিটামাটি উঁচু করে বন্যার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ অনেক মানুষের জীবন বাঁচাতে পারে, যা অনেকেই সাধারণ হিসেবে দেখে। চরের মানুষের সুরক্ষায় বসতবাড়ি উঁচু করে দেয় বেসরকারি সংগঠন গণউন্নয়ন কেন্দ্র। আমি মনে করি এটা গোটা দেশের জন্য একটি মডেল হতে পারে, যা অন্যান্য ক্ষেত্রেও ভালো ভূমিকা পালন করবে। এ ধরনের কার্যক্রম বন্যার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগেও মানুষের জীবযাত্রাকে স্বাভাবিক থাকতে সাহায্য করবে। এটাকে অনেকে সাধারণ বিষয় মনে করে। কিন্তু মনে রাখতে হবে, এ রকম এমন উদ্যোগ মানুষের কল্যাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। এমন দুর্যোগে ভুক্তভোগীরা আশ্রয় নিতে পারছে।  যারা নিচু জমিতে বাস করেন তারাও এখানে আশ্রয় নিতে পারে। এখানে খাওয়ার পানি ও পয়ঃনিষ্কাশনের ব্যবস্থাও থাকে। গবাদিপশু নিরাপদে লালন-পালন করতে পারে।

 

চরাঞ্চলের দুর্যোগের পাশাপাশি শহুরে মানুষের ভূমিকম্প অগ্নিঝুঁকি নিয়ে ভাবা দরকার

নঈম নিজাম

সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রতিদিন

১৯৯১ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তখন বিরোধীদলীয় নেতা ছিলেন, তাঁর সঙ্গে সাংবাদিক হিসেবে বিভিন্ন দুর্যোগপ্রবণ এলাকা পরিদর্শন করেছি। ২০১৭ ও ২০১৯ সালে কম্বল বিতরণ করতে গিয়ে দেখেছি সেসব এলাকায় পরিবর্তনের ছোঁয়া। আগের অবস্থা  নেই এখন। চরাঞ্চলের প্রাকৃতিক দুর্যোগের পাশাপাশি শহরের মানুষের ভূমিকম্প ও অগ্নিকাণ্ড ঝুঁকি নিয়েও ভাবা দরকার। রংপুর অঞ্চলে ২০১৮ সালে কম্বল বিতরণ করতে গিয়েছিলাম আমাদের ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের পক্ষ থেকে। ১৯৯১ সাল আর এখন, হিসাব মিলাতে পারি না। আগের অবস্থা এখন আর নেই। আমি একটা বিষয় বলতে চাই যে, ভূমিকম্পটা আমাদের দেশে যেভাবে বাড়ছে এই জনপদকে এই শহরকে সুরক্ষিত রাখার মতো আমাদের কতটুকু অবস্থান আছে? এটা নিয়ে ভাবতে হবে। সাভারে যখন বিল্ডিং ধসে পড়ল, দীর্ঘ সময় লেগেছিল উদ্ধার কাজে।  এ ধরনের দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় ইকুইপমেন্ট নেই। মন্ত্রণালয়কে এসব বিষয়ে শক্তিশালী করা প্রয়োজন। ব্যাপক পরিসরে চিন্তা করতে হবে।

 

প্রকল্প বাস্তবায়নে ঘরের মালিকের অংশীদারিত্ব থাকায় খরচ কমবে

মো. আতিকুল হক

মহাপরিচালক, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতর

প্রতি বছরই নদী ভাঙন ও বন্যার মতো দুর্যোগ মোকাবিলায় আমাদের কাজ করতে হয়। ২০২০ সালের বন্যার সময় ক্ষতিগ্রস্তদের আশ্রয় কেন্দ্রে আনতে পারিনি। গবাদিপশু রেখে তারা আসতে চায় না। তারা বন্যায় ভাসছে। তখন সিদ্ধান্ত হয় যে, তাদের ভিটিগুলো উঁচু করে দেওয়া হোক। সে সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় শুরু করে পাইলট প্রকল্প। পাঁচটি জেলায় ৬০০ ঘরের ভিটি উঁচু করার প্রকল্প গঠন করি। খরচ হবে ৯ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। প্রকল্প বাস্তবায়নে ঘরের মালিকের অংশীদারিত্ব থাকায় খরচ কিছুটা কম হবে। স্থানীয় এনজিও সংস্থাগুলোও এর সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়। তবে আলোচনায় আসে টেকসইয়ের বিষয়। মাটির সঙ্গে গোবর ও খড় মিশিয়ে প্রলেপ দেওয়া হলে ঘর টেকসই হবে। আমরা গণউন্নয়ন কেন্দ্রের বানানো ঘরগুলো পরিদর্শন করেছি। খুবই টেকসই হয়েছে। এক যুগে মাত্র ৯ পার্সেন্ট ঘরের ক্ষতি হয়েছে।

 

ঘরবাড়ি করতে গিয়ে সেসব এলাকার প্রাণবৈচিত্র্য নষ্ট করা যাবে না

অধ্যাপক . মাহবুবা নাসরীন

প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর, বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় আমরা কাজ করছি। মাঠ পর্যায়ে চলছে গবেষণা। ১৯৮৮ সালের বন্যার ওপরে আমি পিএইচডি করি। আমার ৩০ বছরের অভিজ্ঞতায় আমি চরের মানুষের জীবন দেখেছি। মাঠ পর্যায়ে কাজ করে যাচ্ছি, দেখেছি ছোট ছোট বিষয় উঠে আসে। আগে কখনো এমন করে দেখিনি। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সম্পর্কিত স্থায়ী আদেশাবলিতে যে বিষয় রয়েছে তা বহুদিন পরিবর্তন হতে দেখিনি। এ পর্যন্ত তিনবার স্থায়ী আদেশাবলি হালনাগাদ করা হয়েছে। দুর্যোগের ইতিহাসের মতো দেশের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার ইতিহাস দীর্ঘ নয়। দেশের সব এলাকার ভৌগোলিক অবস্থান এক রকম নয়। তাই ঘূর্ণিঝড়প্রবণ এলাকার ব্যবস্থাপনা এবং চরাঞ্চলের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অবশ্যই আলাদা হতে হবে। বন্যা, নদী ভাঙন এলাকায় দুর্যোগ সহনশীল ঘর তৈরি হচ্ছে।  কিন্তু ঘরবাড়ি তৈরি করতে গিয়ে সেসব এলাকার প্রাণবৈচিত্র্য নষ্ট করা যাবে না।

 

চরের মানুষকে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আবাদি জমি বাড়ানো সম্ভব

কুন্তলা চৌধুরী

সহকারী অধ্যাপক, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়

একটা অভিজ্ঞতা শেয়ার করি। থাইল্যান্ডের নারী-পুরুষের যে জীববৈচিত্র্যকরণ এবং ওখানকার যে ক্রস ডায়পারপিকেশন এপ্রোচ, তারা বন্যার সঙ্গে কীভাবে এপ্রোচ করার চেষ্টা করছে সেটা নিয়ে আমি কাজ করছি। বন্যার বা চরাঞ্চলে জমিতে যে বালির আস্তর থাকে সে বালিটাকে উঠিয়ে সেখানে তারা গর্ত করে মাটি দিচ্ছে। পাশাপাশি তারা সেখানে সার দিচ্ছে। চরে বসবাসকারীদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কাজটি সম্পন্ন করা হয়। তবে চরের তরুণরা বাইরে শ্রমিক হিসেবে কাজ করে থাকে। এতে তারা বেশি লাভবান হয়। কিন্তু সমস্যাটি হলো- এই ‘ক্রস ডায়পারপিকেশন’ কাজটিকে খুব একটা জনপ্রিয় করা যাচ্ছে না। কারণ চরের মানুষ বলছেন, এটা ব্যয়বহুল।  এর পরিবর্তে যদি সেখানে স্কোয়াশ কিংবা কুমড়ার ফলন করেন তাহলে বেশি লাভবান হওয়া সম্ভব। সে অভিজ্ঞতা আমাদের দেশেও কাজে লাগানো যেতে পারে।

 

স্থায়ী দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ

কেরামত উল্লাহ বিপ্লব

এডিটর, কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স, এটিএন বাংলা

সরকারের উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর সঙ্গে মানুষের ভাগ্য উন্নয়নের বিষয়গুলোও যুক্ত। আগে ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে রিলিফ হিসেবে চাল, গম বরাদ্দ দেওয়া হতো। কাজের বিনিময়ে খাদ্য (কাবিখা), টিআর ইত্যাদি প্রকল্পগুলো এখন নেই। প্রকল্পগুলো পরিবর্তন হচ্ছে। সরকার স্থায়ী সমাধান কিংবা স্থায়ী ব্যবস্থাপনার দিকে এগোচ্ছে। চরের মানুষের ভাগ্য উন্নয়ন, তাদের দুর্ভোগ লাঘবে আমরা এমন কিছু করব, যেন প্রতি বছর নদী ভাঙনের ফলে জনসাধারণকে ত্রাণ দিতে না হয়। স্থায়ী ব্যবস্থাপনা করা যেন তারা দুর্যোগকালীন নিজেদের ভিটামাটিতে থাকতে পারে। সেখানে থাকবে তাদের গবাদিপশুও। সেখানে তাদের ফসল আবাদ কিংবা জীবিকানির্বাহের জন্য সামান্য ব্যবস্থা হলেও থাকবে। এ লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ।  দুর্যোগ প্রশমন ও প্রস্তুতির পাশাপাশি ওই অঞ্চলের মানুষের জীবিকা ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা যেন থাকে।

সর্বশেষ খবর