সোমবার, ১৬ মে, ২০২২ ০০:০০ টা

বিশ্বজুড়ে যানজটের শহর

বিশ্বজুড়ে যানজটের শহর

যানজটে নাকাল সড়ক। এ সাধারণ দৃশ্যটি শুধু বাংলাদেশের রাজধানী শহরের দৃশ্য নয়। বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর বিভিন্ন নামকরা শহরও এ তালিকায় পড়ে যায়। অপরিকল্পিত নগরায়ণ থেকে শুরু করে রাস্তার অনুপাতে পরিবহনের সংখ্যা বেশি হওয়া বিভিন্ন কারণকে চিহ্নিত করা হয়ে থাকে প্রবল যানজটের পেছনে।  অনেক সড়কে ট্রাফিক সিস্টেম যথাযথ হওয়ার পরও শুধু অতিরিক্ত যান চলাচলের কারণে যানজট বাঁধতে পারে। শহরের মূল সড়কগুলো প্রশস্তকরণ ও শহরের আশপাশে নৌপথ ব্যবহার করে বেশকিছু শহরের যানজট কমানোর চেষ্টা করা হয়েছে। বিশ্বের উন্নত শহর এভাবে যানজট নিরসনে এগিয়ে গেছে।  বিশ্বের সবচেয়ে যানজটপ্রবণ শহরগুলো নিয়ে লিখেছেন - তানভীর আহমেদ

 

ঢাকা [বাংলাদেশ]

২০১৭ সালে দ্য টেলিগ্রাফের করা তালিকায় বিশ্বের সবচেয়ে যানজট বাঁধে এমন শহরের তালিকায় নেই ঢাকার নাম। তবে ২০১২ সালে বিবিসির করা একটি তালিকায় বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা রয়েছে। ২০ মিনিটের রাস্তা পার হতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকতে থাকতে অনেকেই হয়তো ভাবেন, বিশ্বের সবচেয়ে বড় যানজটে হয়তো পড়েছেন। এমনটি ভাবলে ভুল ভাবছেন। কারণ সে তালিকায় বাংলাদেশ রয়েছে শেষের দিকে। জনসংখ্যার চাপে অনেক আগেই নাকাল হয়েছে এ প্রাণের শহরটি। জনসংখ্যার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে গাড়ি। কিন্তু রাস্তার সম্প্রসারণ যেটুকু হয়েছে তাতে গাড়ির চাপ সামলানো যাচ্ছে না। গাড়ির সংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি রাস্তার সম্প্রসারণ না হওয়া, অবৈধ গাড়ির সংখ্যা বৃদ্ধি, পরিকল্পিত নগরায়ণের অভাব, ট্রাফিক আইন না মানা ইত্যাদি  কারণে ঢাকায় তীব্র যানজট বেঁধে থাকে। অনেক গুরুত্বপূর্ণ অফিস থাকার কারণে ঢাকার বাইরে থেকে বিপুল মানুষ শহরে প্রতিদিন  যাওয়া-আসা করেন। এ কারণেও যানজট সৃষ্টি হয়। রাস্তা নির্মাণে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অভাবেও বেড়েছে যানজট।

 

জাকার্তা [ইন্দোনেশিয়া]

ইন্দোনেশিয়ার জনবহুল শহর জাকার্তা। ঢাকার মতোই দিনের সূর্য ওঠার সঙ্গে সঙ্গে এ শহর গাড়িচালক ও যাত্রীদের জন্য রীতিমতো আতঙ্ক হয়ে দেখা দেয়। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ে এ যানজট। জাকার্তায় মূল সড়কে চলাচলের সময় বাড়তি ৫০ মিনিট যোগ করে রাস্তায় নামতে হয়। রাস্তায় চলা ৫৪ শতাংশ গাড়িই যানজটে দাঁড়িয়ে থাকে এ শহরে।

 

মেক্সিকো সিটি [মেক্সিকো]

ট্রাফিক জ্যামে বাংলাদেশের মতো ঘণ্টার পর ঘণ্টা জ্যামে বসে থাকা দেশগুলোর একটি মেক্সিকো। মেক্সিকো সিটির গাড়ি চালকদের সড়কে অন্তত এক ঘণ্টা বসে থাকতে হয়। রাস্তা যত দীর্ঘই হোক না কেন, এই এক ঘণ্টা জ্যামে বসে অলস সময় কাটানো ছাড়া উপায় নেই। সন্ধ্যায় এই যানজট আরও তীব্র হয়। জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে।

 

ব্যাংকক [থাইল্যান্ড]

থাইল্যান্ডের ব্যাংকক শহর। প্রায়ই ব্যাংককের রাস্তায় তৈরি হয় লম্বা যানজট। অসংখ্য গাড়ির চাপে ব্যাংকক অফিস ঘণ্টায় কার্যত অচল হয়ে পড়ে। গাড়ির পিছনে গাড়ির সারি তৈরি হতে থাকে। উপযুক্ত ট্রাফিক সিস্টেম থাকার পরও শুধু গাড়ির চাপ সামলাতে না পেরে এই দীর্ঘ যানজটের সূচনা হয়। ট্রাফিক জ্যাম শুরু হলে ব্যাংককে এক কিলোমিটার রাস্তা পাড়ি দিতে দুই ঘণ্টার মতো সময় লেগে যায়। এ সমস্যা নিরসনে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে রাস্তা সম্প্রসারণসহ বিকল্প যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও উন্নত করার দিকে ঝুঁকেছে থাইল্যান্ড।

 

মুম্বাই [ভারত]

ভারতের মুম্বাই শহর। এ শহরের রাস্তার প্রশস্ততা বাড়েনি। গাড়ির চাপও অনেক বেশি। ট্রাফিক আইন মানতেও অনীহা দেখা যায় ড্রাইভারদের মধ্যে। এসব কারণে মুম্বাইয়ের অফিস ঘণ্টায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। গত কয়েক বছরে ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় অবস্থা আরও খারাপ হয়েছে। সাধারণ মানুষ যানজটের কবলে পড়ে প্রতিদিনই হারাচ্ছে অমূল্য কর্মঘণ্টা।  যেখানে সেখানে পার্কিংয়ের কারণেও যানজট তৈরি হয় এ শহরে।

 

চংকিং [চীন]

১.৩৭ বিলিয়ন মানুষের দেশ চীন। চীনের বড় শহরগুলো মানচিত্রের কোনো কোনো দেশের চেয়েও বড়। সাংহাই, বেইজিং, শেনচেনের মতো বড় শহরে যত মানুষ বাস করে অনেক দেশের মোট জনসংখ্যাও তত নয়। এই বাড়তি জনসংখ্যার শহরগুলো যানজটে স্থবির হয়ে পড়ে। দ্য টেলিগ্রাফের করা তালিকায় তাই বিশ্বের সবচেয়ে যানজটপ্রবণ শহরগুলোর মধ্যে চীনেরই রয়েছে তিনটি শহর। চংকিং শহরে প্রায় ৮১ লাখ মানুষের বসবাস। কর্মব্যস্ত শহরে যানজটে থেমে যায় গোটা শহর। তবে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকতে হয় না যাত্রীদের।  ট্রাফিক সিগন্যাল ছাড়ে ১৫ থেকে ৩০ মিনিট পরপর।

 

নাইরোবি [কেনিয়া]

প্রাইভেট গাড়ির সঙ্গে মিনিবাস নাইরোবি শহরের প্রধান সড়কগুলো দিয়ে চলাচল করে বেশি। কেনিয়ার নাইরোবি শহরটিতে যানজট নিত্যদিনের সঙ্গী। যানজট এতটাই প্রবল যে, কখনো কখনো পুরো শহর থেমে যায়। গাড়ির পেছনে গাড়ির লম্বা সারি তৈরি হয়। ছুটির দিনে যে শহরের রাস্তা দিয়ে এক ঘণ্টায় ১২ কিলোমিটার পাড়ি দেওয়া যায় সেখানে তিন থেকে চার ঘণ্টা লেগে যায়। বড় ও প্রশস্ত রাস্তা থাকার পরও গাড়ির চাপ সামলানোই কঠিন এখানে। মিনিবাসে মানুষের চলাচল বাড়িয়ে যানজট সামলানোর উপায় নিয়েছে শহরের ট্রাফিক কর্তৃপক্ষ। সে পথ ধরে হেঁটেই অনেকটা স্বস্তিতে আছে নাইরোবি। গেল কয়েক বছরে তুলনামূলক ভালো যোগাযোগ ব্যবস্থা তৈরি হয়েছে এখানে। এরই ধারাবাহিকতায় প্রাইভেট গাড়ির চাপ সামলানোর কথা ভাবা হচ্ছে এখন। তবে বাংলাদেশের মতো নাইরোবিতে সমস্যা হয়ে উঠেছে অবৈধ গাড়ি।  এ সংখ্যাটি দিন দিন বাড়ছেই। ট্রাফিক আইন মানার ব্যাপারেও ড্রাইভাররা উদাসীন।

 

সিউল [দক্ষিণ কোরিয়া]

দক্ষিণ কোরিয়ার সিউল শহরটি তীব্র যানজটে প্রতিদিনই কাবু হচ্ছে। সিউলের প্রধান সড়কগুলো দিয়ে মূলত প্রাইভেট গাড়ির চাপ থাকে বেশি। অনেক লম্বা যানজটের ইতিহাস ঘাঁটতে গিয়ে দেখা গেছে, লাল বাতি জ্বালানোর সময়ই গাড়ি এগিয়ে যায়।  এ কারণে রাস্তার গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে মোড়ে ‘কার ব্লক’ হয়ে রাস্তা একেবারে বন্ধ হয়ে যায়।

 

লেক্সিংটন [যুক্তরাষ্ট্র]

কলকারখানা স্থাপনের পরপরই যুক্তরাষ্ট্রের লেক্সিংটনে মানুষের যাতায়াত বিস্ময়করভাবে বেড়ে চলে। এর সঙ্গে মানুষ এ শহরে বসতি স্থাপনে আগ্রহী হয়ে উঠলে দিন দিন রাস্তাগুলোতে ব্যস্ততা বাড়ে গাড়ির। একপর্যায়ে রাস্তাগুলোতে তৈরি হতে শুরু করে লম্বা লম্বা যানজট। কোনো কোনো যানজট এতটাই দীর্ঘ হয়ে থাকে যে, সেটা ছুটে যেতে ঘণ্টার  পর ঘণ্টা লেগে যায়। গাড়ি সামলাতে হিমশিম খেতে হয় ট্রাফিক পুলিশদের।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর