মঙ্গলবার, ১৭ মে, ২০২২ ০০:০০ টা

জাতির মনে জাগরণ

মো. সাহাবুদ্দিন চুপপু

জাতির মনে জাগরণ

সব ভয়-সংশয় ভুলে মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে দেশে এসেছিলেন বঙ্গকন্যা। ১৯৮১ সালের ১১ মে বিশ্বখ্যাত নিউজউইক পত্রিকায় দেওয়া সাক্ষাৎকারে শেখ হাসিনা বলেছিলেন, ‘‘জীবনের ঝুঁকি আছে এটা জেনেই আমি বাংলাদেশে যাচ্ছি।’ তিনি এ-ও বলেছিলেন, ‘জীবনে ঝুঁকি নিতেই হয়। মৃত্যুকে ভয় করলে জীবন মহত্ত্ব থেকে বঞ্চিত হয়।”

বঙ্গবন্ধু হত্যার পর টানা কয়েক বছর যখন জাতি হতাশায় নিমজ্জিত ছিল। জাতিকে যখন আশা দেওয়ার মতো কেউ ছিল না, ঠিক তখনই ভরসাস্থল হয়ে ক্ষত পূরণের দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন কন্যা শেখ হাসিনা। তারিখটা ছিল ১৭ মে ১৯৮১, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৩৮৮ রবিবার। রাষ্ট্রযন্ত্রের ক্ষমতায় তখন খুনি মোশতাকের সহচর জেনারেল জিয়া। তার রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে জননেত্রী শেখ হাসিনা দেশে আশার সাহসী সিদ্ধান্ত নিলেন। যদিও দেশের মাটিতে পা রাখার আগেই বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা ১৯৮১ সালের ১৪, ১৫ ও ১৬ ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত জাতীয় কাউন্সিলে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বাস্তবায়নের দৃঢ় অঙ্গীকার, বঙ্গবন্ধু হত্যা ও জাতীয় চার নেতা হত্যার বিচার, স্বৈরতন্ত্রের চির অবসান ঘটিয়ে জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা, সংসদীয় পদ্ধতির শাসন ও সরকার প্রতিষ্ঠার শপথ নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন শেখ হাসিনা।

বাংলার মানুষের হারিয়ে যাওয়া অধিকার পুনরুদ্ধার করতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বারবার সামরিক স্বৈরাচারের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করেছেন শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগ সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণের পর দীর্ঘ চার দশকের রাজনৈতিক পথচলায় বঙ্গবন্ধু কন্যার নেতৃত্বে স্বৈরশাসনের অবসান, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা, বাঙালির ভাত ও ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা, বাংলাদেশের মানুষের জীবনের মানোন্নয়ন করে এক সময়ের মঙ্গা কবলিত, দুর্ভিক্ষ জর্জরিত বাংলাদেশ আজকে সারা বিশ্বে একটি আত্মমর্যাদাশীল ও উন্নয়নশীল রাষ্ট্রে উন্নীত করেছেন।

১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশে ফিরে লাখ লাখ জনতার সংবর্ধনার জবাবে শেখ হাসিনা বলেছিলেন, ‘সব হারিয়ে আমি আপনাদের মাঝে এসেছি, বঙ্গবন্ধুর নির্দেশিত পথে তার আদর্শ বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে জাতির পিতার হত্যার প্রতিশোধ গ্রহণে আমি জীবন উৎসর্গ করতে চাই’। তিনি আরও বলেন, ‘আমার আর হারানোর কিছুই নেই। পিতামাতা, ভাই রাসেল সবাইকে হারিয়ে আমি আপনাদের কাছে এসেছি, আমি আপনাদের মাঝেই তাদের ফিরে পেতে চাই। আপনাদের নিয়েই আমি বঙ্গবন্ধুর নির্দেশিত পথে বাঙালি জাতির আর্থসামাজিক তথা সার্বিক মুক্তি ছিনিয়ে আনতে চাই’।

সেদিন প্রকৃতি ছিল বৈরী। প্রচন্ড ঝড়-বৃষ্টি। যদিও তাতে যায়-আসেনি! ঝঞ্ঝা-দুর্যোগ সেদিন শেখ হাসিনার আগমন তো বটেই, গণতন্ত্রকামী লাখো মানুষের মিছিলও গতিরোধ করতে পারেনি। তার আগমনে যেন প্রকৃতি প্রাণ ফিরে পেল, ধরণি হলো  স্নিগ্ধ। এদিন গ্রাম-শহর-নগর-বন্দর থেকে রাজধানীতে ছুটে এসেছিল অধিকারবঞ্চিত লাখ লাখ মানুষ। উদ্দেশ্য- বঙ্গবন্ধুর একমাত্র আশার প্রদীপ শেখ হাসিনাকে অভিবাদন জানানো। আমি তখন পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক। সঙ্গত কারণে শত শত নেতা-কর্মীসহ আমিও ছিলাম সেই মিছিলে।

।। দুই।।

১৭ মে বঙ্গবন্ধুকন্যাকে ঘিরে আপামর জনগণের উচ্ছ্বাস কেমন ছিল? তার একটি খন্ডচিত্র পাওয়া ১৯৮১ সালের ১৮ মে প্রকাশিত দৈনিক ইত্তেফাকে। সেখানে লেখা হয় : “... দীর্ঘ ছ’বছর বিদেশে অবস্থানের পর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠ কন্যা, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা গতকাল সতরোই মে বাংলাদেশে ফিরে এসেছেন। লাখো জনতা অকৃপণ প্রাণঢালা অভ্যর্থনার মধ্যদিয়ে বরণ করে নেন তাদের নেত্রীকে। মধ্যাহ্ন থেকে লক্ষাধিক মানুষ কুর্মিটোলা বিমানবন্দর এলাকায় অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিলেন কখন শেখ হাসিনাকে বহনকারী বিমানটি অবতরণ করবে। বিকেল সাড়ে তিনটা থেকে বিমানবন্দরে কোনো নিয়ম-শৃঙ্খলা রক্ষা করা সম্ভব হয়নি।”

লেখক : বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সদস্য উপদেষ্টা পরিষদ এবং চেয়ারম্যান, প্রচার ও প্রকাশনা উপ-কমিটি, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর