মঙ্গলবার, ১৭ মে, ২০২২ ০০:০০ টা

বাংলাদেশের পুনর্জন্ম

এ কে এম এনামুল হক শামীম এমপি

বাংলাদেশের পুনর্জন্ম

বাংলাদেশ আজ বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল। বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। মাথাপিছু আয় দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৮২৪ মার্কিন ডলার। স্বাস্থ্য, শিক্ষা, খাদ্য ও বিদ্যুৎ যোগাযোগসহ সর্বক্ষেত্রে দ্রুত উন্নয়ন সাধিত হচ্ছে। রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় দিয়ে তিনি বিশ্বব্যাপী ‘মাদার অব হিউমিনিটি’ উপাধি পেয়েছেন। বিভিন্ন ইতিবাচক কাজের জন্য পেয়েছেন প্রচুর প্রশংসা ও উপাধি। শেখ হাসিনা এগিয়ে যাচ্ছেন, বাংলাদেশও এগিয়ে যাচ্ছে আগামীর পথে। আজ থেকে ৪১ বছর আগে ছয় বছর নির্বাসিত থেকে বঙ্গবন্ধুবিহীন বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলায় আলোর মশাল হাতে কান্ডারি হয়ে স্বদেশের মাটিতে এসেছিলেন জাতির পিতার জ্যেষ্ঠ কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা। সেদিনই বঙ্গবন্ধুবিহীন বাংলাদেশের পুনর্জন্ম হয়েছিল। এখন জননেত্রী শেখ হাসিনা বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রী আছেন বলেই দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। চার দশক আগে যদি শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের নৌকার বৈঠা না ধরতেন, বাংলাদেশের নেতৃত্বে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত না করতেন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী না হতেন, তাহলে বাংলাদেশের আজকের এ উন্নতি, এ অগ্রগতি সুদূরপরাহত ছিল। আওয়ামী লীগের গণমুখী রাজনীতি থাকত না। দেশে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রতিষ্ঠিত হতো না। গণতন্ত্র আসত না। বঙ্গবন্ধুর হত্যাকান্ডের বিচার হতো না। যুদ্ধাপরাধীদেরও বিচার অসম্পন্ন থাকত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই জাতিকে কলঙ্কমুক্ত করেছেন। দেশকে বিশ্বের বুকে মর্যাদাবান করেছেন। শেখ হাসিনা রাজনীতিতে না এলে স্বাধীনতার নেতৃত্বদানকারী দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী পালন করার সুযোগ পেত না। জননেত্রী শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের হাল না ধরলে আমাদের নেতা-কর্মীদের অস্তিত্বও বিপন্ন হতো। দেড় লাখ গৃহহীন-ভূমিহীন পরিবার পাকা বাড়িসহ ঘর পেত না। আমাদের সৌভাগ্য আমরা শেখ হাসিনার মতো একজন যোগ্য, সৎ, সাহসী, কর্মঠ নেতা পেয়েছি। নেতৃত্ব পেয়েছি- শোকর আলহামদুলিল্লাহ। জননেত্রী শেখ হাসিনা সেই নেত্রী যিনি মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটও পাঠান আবার একেবারে সমাজের সবচেয়ে অবহেলিত হতদরিদ্র, অসহায়, বয়স্ক নারী-পুরুষ, বিধবা, স্বামী পরিত্যক্তা, প্রতিবন্ধীদের মাসিক ভাতার ব্যবস্থাও করেন। তিনি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য বাসযোগ্য দেশ করে দিয়ে যাওয়ার জন্য নিরলস সংগ্রাম করে যাচ্ছেন। সারা দেশের মানুষকে নদী ভাঙনের হাত থেকে রক্ষার জন্য, বন্যা, ঝড়, জলোচ্ছ্বাস, হাওরের মানুষকে হাসিমুখে ফসল ঘরে তোলার জন্য স্থায়ী প্রকল্প গ্রহণ করছেন। উন্নত ভবিষ্যৎ নির্মাণের জন্য তিনি ডেল্টাপ্ল্যান ২১০০ ঘোষণা করেছেন। তিনি শুধু বর্তমান নিয়েই ভাবেন না, ভবিষ্যৎও তাঁর ভাবনায় থাকে। অন্যরা ক্ষমতা আর বর্তমানকে নিয়ে ভাবে। এখানে জননেত্রী শেখ হাসিনা অন্যদের থেকে আলাদা। জননেত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে অশান্ত পাহাড়ে শান্তি ফিরেছে। ভারতের সঙ্গে গঙ্গা পানি চুক্তি হয়েছে, সিট মহল সমাধান হয়েছে, আন্তর্জাতিক আদালতের মাধ্যমে বিশাল সুনীল অর্থনীতির আধার অর্জন করেছে সমুদ্রসীমা নির্ধারণের মাধ্যমে। জাতির পিতার কন্যার হাতধরে ছাত্ররাজনীতি ও জাতীয় রাজনীতির গুণগত পরিবর্তনও এসেছে।

১৯৮১ সালের ১৭ মে, দিনটি ছিল রবিবার। সেদিন ঘণ্টায় ৬৫ মাইল বেগে কালবৈশাখী ঝড় হচ্ছিল। বৈরী আবহাওয়াতেও মানুষের গতি ঠেকানো যায়নি। জাতির পিতার কন্যাকে একনজর দেখার জন্য কুর্মিটোলা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে শেরেবাংলা নগর পর্যন্ত জনসমুদ্রে পরিণত হয়। ১৯৮১ সালের এই দিনে বাংলাদেশের লাখো মানুষের সঙ্গে স্কুলপড়ুয়া এক ছাত্রলীগ কর্মী হিসেবে ঢাকার কুর্মিটোলা বিমানবন্দরে উপস্থিত হওয়ার সৌভাগ্য আমারও হয়েছিল। বয়সের কারণে বঙ্গবন্ধুকে দেখার সৌভাগ্য হয়নি, কিন্তু সেদিন বঙ্গবন্ধুকন্যাকে দেখেছিলাম লাখো জনতার মধ্যে। সেদিন বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা লাখো জনতার সংবর্ধনার জবাবে বলেছিলেন, ‘আমি সবকিছু হারিয়ে আপনাদের মাঝে এসেছি। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশিত পথে তাঁর আদর্শ বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে জাতির পিতার হত্যার বিচার করতে আমি জীবন উৎসর্গ করতে চাই। বাংলার দুঃখী মানুষের সেবায় আমি আমার এ জীবন দান করতে চাই। আমার আর হারানোর কিছুই নেই। পিতা-মাতা, ভাই সবাইকে হারিয়ে আমি আপনাদের কাছে এসেছি, আমি আপনাদের মাঝেই তাদের ফিরে পেতে চাই। আপনাদের নিয়েই আমি বঙ্গবন্ধুর নির্দেশিত পথে তা বাস্তবায়ন করে বাংলার দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে চাই, বাঙালি জাতির আর্থ-সামাজিক তথা সার্বিক মুক্তি ছিনিয়ে আনতে চাই।’ শেখ হাসিনা সেদিন জনগণকে দেওয়া সেই অঙ্গীকার পূরণে ৪১ বছর ধরে প্রতিনিয়ত মৃত্যুকে আলিঙ্গন করে জনগণের ভাগ্যবদলে নিরলস প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছেন। তার জন্য বাংলাদেশ আজ ধন্য। তিনি ফিরে না এলে ১৯৯৬ ও ২০০৮ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়ে কে সরকার গঠন করত- আমাদের জানা নেই। তিনি ফিরে এসে হাল ধরেছিলেন গণতন্ত্রের। ফলে গত ১৩ বছর দেশের উন্নয়ন আকাশ ছুঁয়েছে। এ দেশ প্রকৃতপক্ষে এগিয়েছে তার অসীম সাহসিকতা ও যোগ্য নেতৃত্বের কারণে। বর্তমান প্রজন্মের কাছে শেখ হাসিনা এক সাহসী রাজনীতিকের নাম; যার সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনায় ভবিষ্যতের বাংলাদেশ উন্নয়নের ধারায় এগিয়ে চলেছে। শান্তির অগ্রদূত শেখ হাসিনা দেশের মানুষের জন্য নিজের প্রাণকে তুচ্ছ করতে পারেন নির্দ্বিধায়। সাধারণ মানুষের আস্থা ও ভরসার কেন্দ্রবিন্দু তিনি। ধৈর্য ও সাহসের প্রতিমূর্তি শেখ হাসিনা গণতন্ত্রের মানসকন্যা, দেশরত্ন, কৃষকরত্ন, জননেত্রী- বহুমাত্রিক জ্যোতিষ্ক। তাঁকে কেন্দ্র করে, তাঁর নেতৃত্বে আবর্তিত হচ্ছে বাংলাদেশ। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট, বঙ্গবন্ধু টানেল, মেট্রোরেল, গভীর সমুদ্রবন্দর প্রভৃতি বড় প্রকল্পের বাস্তবায়নই মনে করিয়ে দিচ্ছে শেখ হাসিনা প্রকৃতপক্ষে আলাদা, ভিন্ন, স্বতন্ত্র ও নেতৃত্বের গৌরবজনক আসনে সমাসীন। তিনি জনগণের ইচ্ছা অনুযায়ী অর্থনৈতিক বিকাশ ত্বরান্বিত করেছেন; সংকট উত্তরণে অনন্য ভূমিকা রেখেছেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বড় মেয়ে শেখ হাসিনাকে এই দীর্ঘ সময় দলের প্রধানের দায়িত্বে থেকে নেতৃত্ব দিতে গিয়ে অনেক বন্ধুর পথ পাড়ি দিতে হয়েছে। নানা চড়াই-উতরাই, কারাবরণ, মৃত্যুর মুখোমুখি হওয়াসহ অনেক ঘাত-প্রতিঘাত পেরিয়ে তিনি আওয়ামী লীগকে আজকের অবস্থানে এনে দাঁড় করিয়েছেন।

 

লেখক : উপ-মন্ত্রী, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়, জাকসুর সাবেক ভিপি।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর