শিরোনাম
রবিবার, ২৬ জুন, ২০২২ ০০:০০ টা

উনি ঠিক কথা বলেননি

মহিউদ্দিন খান মোহন

উনি ঠিক কথা বলেননি

অত্যন্ত দুঃখজনক হলো, পদ্মা সেতু উদ্বোধনের আগ মুহূর্তে বিরোধী দল বিএনপির পক্ষ থেকে একটি অহেতুক বিতর্কের অবতারণা করেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সম্প্রতি তিনি বলেছেন, পদ্মা সেতুর প্রথম ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। বলে নেওয়া দরকার মির্জা আলমগীর সাহেব যে সময়ের কথা বলেছেন, তখন আমি প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সহকারী প্রেস সচিব ছিলাম। ওই মেয়াদে বেগম খালেদা জিয়া চারবার মুন্সীগঞ্জ জেলায় গিয়েছিলেন। একবার মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার মোল্লাকান্দি ইউনিয়নে ‘রজতরেখা’ নামে একটি গুচ্ছগ্রাম উদ্বোধন করতে, দ্বিতীয়বার মুক্তারপুরে, তৃতীয়বার লৌহজংয়ে নতুন উপজেলা ভবন উদ্বোধন করতে এবং চতুর্থবার গজারিয়ায় ইঞ্জিনিয়ারিং স্টাফ কলেজের ভিত্তি স্থাপন করতে। এর কোনোবারই তিনি মাওয়া পয়েন্টে পদ্মা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেননি। সবচেয়ে বড় কথা হলো, তার সহকারী প্রেস সচিব হওয়ায় তিনি মুন্সীগঞ্জ সফরে গেলে আমি তাঁর সফরসঙ্গী হতাম। বেগম খালেদা জিয়া পদ্মা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন এমন কোনো ঘটনা আমার জানা নেই। বিষয়টি নিয়ে আমি কথা বলেছি তাঁর তৎকালীন সহকারী একান্ত সচিব মো. আবদুল মতিনের সঙ্গে। তিনি ওই সময়ে প্রধানমন্ত্রী প্রতিশ্রুত উন্নয়ন প্রকল্পগুলো দেখভাল করতেন। মতিন সাহেবও তেমন কোনো ঘটনার কথা স্মরণ করতে পারলেন না। তাহলে মির্জা আলমগীর সাহেব কোথায় পেলেন এমন একটি ভিত্তিহীন তথ্য? সচেতন ব্যক্তিরা এ ব্যাপারটি খেয়াল করেছেন, ইদানীং মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তাঁর

দলীয় নেত্রীকে উপরের দিকে তুলে ধরতে মাঝে-মধ্যেই বিতর্কিত মন্তব্য করছেন। এর আগে তিনি বেগম খালেদা জিয়াকে দেশের ‘প্রথম নারী মুক্তিযোদ্ধা’ বলে উল্লেখ করে বিতর্কের সূত্রপাত করেছিলেন। দেশবাসীর কাছে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর একজন শিক্ষিত, মার্জিত, রুচিবান এবং সংযত বক্তব্য দানকারী রাজনীতিক হিসেবেই পরিচিত। এ পর্যায়ে এসে কেন তিনি কোনো কোনো বিষয়ে প্রগলভ হয়ে পড়ছেন, অনেকের কাছেই তা বোধগম্য নয়। তার তো মনে রাখা দরকার, যিনি যে কৃতিত্বের অধিকারী নন, তাকে সে কৃতিত্বের সার্টিফিকেট দেওয়ার চেষ্টা ওই ব্যক্তির জন্য কখনো সম্মানজনক নয়, বরং বিব্রতকর।

পদ্মা সেতু নির্মাণের পরিকল্পনাও যমুনা সেতুর মতো দীর্ঘদিনের। কিন্তু এর সুসংগঠিত রূপটি এসেছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের হাতে। ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন থেকে শুরু করে নির্মাণকাজ সম্পন্ন করা সবই হয়েছে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে। তবে এটা ঠিক যে, খালেদা জিয়ার ২০০১-২০০৬ মেয়াদের সরকারের সময় এর সম্ভাব্যতা যাচাইসহ প্রারম্ভিক কাজ অনেকটাই এগিয়েছিল। ওই মেয়াদেই প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া রাজবাড়ীর এক জনসভায় এলাকাবাসীর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বলেছিলেন, শুধু মাওয়া নয়, পাটুরিয়া পয়েন্টেও আরেকটি পদ্মা সেতু নির্মাণ করা হবে। সৌভাগ্যবশত ওই প্রোগ্রামেও আমি উপস্থিত ছিলাম। সুতরাং আমি এটা নিশ্চিত করেই বলতে পারি, বেগম খালেদা জিয়া পদ্মা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেননি। জাতি হিসেবে আমাদের একটি বড় দুর্ভাগ্য যে, আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো একে অপরের ভালো কাজকে স্বীকার করতে চায় না। সর্বশেষ খবর হলো, বিএনপি মহাসচিব তাঁর পূর্বোক্ত অবস্থান থেকে সরে এসেছেন। গত ১৪ জুন ঠাকুরগাঁওয়ে তিনি বলেছেন, খালেদা জিয়ার সরকারের আমলেই পদ্মা সেতুর সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজটি হয়েছিল। মির্জা আলমগীরকে ধন্যবাদ যে, তিনি আগের বক্তব্যে স্থির থেকে নেত্রীকে অধিকতর বিব্রতকর অবস্থায় ফেলেননি।

বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা এখন দৃশ্যমান। বৈশ্বিক নানা প্রতিকূলতা সত্ত্বেও আমরা সামনের দিকে এগোচ্ছি। এই এগিয়ে যাওয়া অব্যাহত রাখতে যেটা সবচেয়ে বেশি দরকার তা হলো, উন্নয়ন প্রশ্নে সব সংকীর্ণতা ঝেড়ে ফেলে একাত্ম হওয়া। যারা রাজনীতি করেন, তাদের মনে রাখা দরকার, রাজনীতি যার যার, দেশটা সবার। সরকার যদি ভুল বা অন্যায় করে, তাহলে যেমন বিরোধী দল তার সমালোচনা-প্রতিবাদ করবে, তেমনি ভালো কাজ করলে ধন্যবাদ দেবে, সহযোগিতা করবে, দেশবাসী এমনটিই চায়। তবে, জনগণের সে প্রত্যাশা কোনো দিন পূরণ হবে কি না তা বোধ করি বিধাতাই জানেন।

                লেখক : সাংবাদিক ও রাজনীতি বিশ্লেষক।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর