রবিবার, ২৬ জুন, ২০২২ ০০:০০ টা

যেভাবে পদ্মা সেতু

এ কে এম শহীদুল হক

যেভাবে পদ্মা সেতু

বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে পদ্মা নদীর ওপর সেতু নির্মাণের পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। ১৯৯৮-১৯৯৯ সালে বিশেষজ্ঞ দল দ্বারা ফিজিবিলিটি স্টাডি করান। ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। বিএনপি-জামায়াত ২০০১ সালে  ক্ষমতায় আসে। পাঁচ বছরে তারা সেতু নির্মাণে উল্লেখযোগ্য কোনো পদক্ষেপই গ্রহণ করেনি।

সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ২০০৭ সালে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের সহায়তায় সেতুর নকশা তৈরি করে। ওই বছর আগস্ট মাসে একনেক সভায় সেতু নির্মাণের প্রাক্কলিত ব্যয় ১০ হাজার ১৬১ কোটি ৭৫ লাখ টাকা অনুমোদিত হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকার নির্মাণকাজ শুরু করতে পারেনি।

২০০৮ সালে সাধারণ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মা সেতুতে রেলপথ সংযোজনের নির্দেশ দেন। সে মোতাবেক সেতুর ওপরের তলায় মোটরযান সড়ক এবং নিচতলায় রেলপথ রেখে দোতলা সেতু নির্মাণের নকশা তৈরি করা হয়।

রেলপথ সংযোজন করে সেতুর নকশা পরিবর্তন, বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন পরিবর্তন, সংযোজন ও সময় ক্ষেপণের জন্য নির্মাণ ব্যয়ের প্রাক্কলনও বৃদ্ধি পায়। ২০১১ সালে প্রাক্কলিত ব্যয় দাঁড়ায় ২০ হাজার ৫০৭ কোটি ২০ লাখ টাকা। ২০১৬ সালে ব্যয় দাঁড়ায় ২৮ হাজার ৭৯৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। ২০১৮ সালে মূল সেতু, নদীশাসন, জমি অধিগ্রহণ, দুই পাড়ে সংযোগ সড়ক নির্মাণ, ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন, কর্মীদের বেতন সব মিলিয়ে তৃতীয়বারে মতো পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণ প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয় ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। প্রকল্পে প্রায় ৪ হাজার কর্মী কাজ করেন। ২০০৭ সালে মার্কিন ডলার ও টাকার বিনিময় হার ছিল ৬৮.৬৫ টাকা। ২০১৮ সালে ওই হার ৮৪.৮০ টাকা। বর্তমানে ৯০ টাকার বেশি।

প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধি পেলে প্রকল্পের ব্যয়ও বৃদ্ধি পায়। এটা একটি স্বাভাবিক প্রবণতা। শুধু পদ্মা সেতু নয়, প্রায় সব প্রকল্পেই এটা দেখা যায়। প্রকল্পের রিভাইজড ব্যয় সব সময়ই বৃদ্ধি পায়। মেয়াদ বৃদ্ধির কারণে মুদ্রাস্ফীতি ও ডলারের হার পরিবর্তনে এরকম হয়ে থাকে।

পদ্মা সেতুতে সড়ক ও রেলপথ ছাড়াও আরও আছে গ্যাস, বিদ্যুৎ ও অপটিক্যাল ফাইবার লাইন। সেতুটি তৈরি করেছে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি। এ ধরনের ব্রিজ নির্মাণের জন্য দক্ষ ও অভিজ্ঞ প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা অনেক কম। একদল বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলী সেতুটি নির্মাণ করেন। নির্মাণ প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশ সরকারের হস্তক্ষেপ করার সুযোগ নেই। ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের প্রকৌশলীরা যখন যে পরিবর্তন, সংযোজন করেছেন সেটাই করা হয়েছে। পরিবর্তনের কারণেই ব্যয় বেড়েছে। ব্যয় বাড়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকার, বাংলাদেশের প্রকৌশলী বা প্রকল্প পরিচালকের কোনো হাত নেই। কাজেই দুর্নীতির কারণে ব্যয় বেড়েছে এ কথা বলার সুযোগ নেই। যারা দুর্নীতির কথা বলেন, তারা সংকীর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্য থেকেই এ অপপ্রচার করে জনমনে বিভ্রান্ত সৃষ্টি করছেন।

পদ্মা, ব্রহ্মপুত্র ও মেঘনা নদীর অববাহিকায় সেতুটি নির্মিত হয়েছে। পদ্মা একটি অত্যন্ত খরস্রোতা নদী। নদীর তীব্র স্রোতের কারণে নির্মাণকাজ অত্যন্ত কঠিন ছিল।         কখনো কখনো ব্যাহত হয়েছে। কোনো কোনো পাইলিংয়ে  ১৩০ ফুট পর্যন্ত মাটির নিচে যেতে হয়েছে। পদ্মা নদীর ওপর সেতু নির্মাণ ছিল একটি চ্যালেঞ্জিং উদ্যোগ। আল্লাহর  রহমতে সেই চ্যালেঞ্জ উত্তরণ করে ব্রিজটি সফলভাবে নির্মিত হয়েছে।

 

লেখক : সাবেক ইন্সপেক্টর জেনারেল বাংলাদেশ পুলিশ

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর