রবিবার, ৩ জুলাই, ২০২২ ০০:০০ টা

দেশে দেশে চিকিৎসা মানেই সেবা

আবদুল কাদের

দেশে দেশে চিকিৎসা মানেই সেবা

আধুনিক ও উন্নতমানের চিকিৎসা নিশ্চিত করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করে উন্নত দেশগুলো। ইউরোপ-আমেরিকায় সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে কম খরচে উন্নত চিকিৎসা পেয়ে থাকেন রোগীরা। সেসব দেশে রয়েছে আধুনিক চিকিৎসানীতি।  সরকার জনগণের করের টাকায় এমন প্রাতিষ্ঠানিক স্বাস্থ্যসেবা কৌশল গড়ে তুলেছে, সাধারণ মানুষ কিছু ক্ষেত্রে বিনামূল্যে এবং কিছু ক্ষেত্রে নামমাত্র ফি দিয়েই ডাক্তার দেখানো, পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা ও ওষুধ কেনাসহ নানা ধরনের সেবা পেয়ে থাকেন।

 

উন্নত দেশগুলোয় বলা হয়ে থাকে, জীবনের সেরা জিনিসগুলো হয় বিনামূল্যে- কিন্তু কথাটি স্বাস্থ্যসেবায় কতটুকু প্রযোজ্য? অনেকের কাছে বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবার ধারণাটি সত্য বলে মনে হতে পারে। কথাটি একটু বিভ্রান্তিকর। কেননা- এসব দেশের নাগরিক এবং বাসিন্দারা জাতীয় স্বাস্থ্যসেবা তহবিলের অর্থায়নের জন্য সরকারকে কর প্রদান করে থাকেন। তারই বিপরীতে, সরকার নাগরিকদের চিকিৎসার খরচ বহন করে থাকে। প্রকৃতপক্ষে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা প্রদান করে- এমন দেশগুলোর একটি দীর্ঘ তালিকা রয়েছে; যারা মূলত তাদের নাগরিকদের বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা, সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে থাকে। আসলে কোনো দেশের অর্থনৈতিক বা কর্মসংস্থানের অবস্থা, নারী-পুরুষের চিকিৎসা ইত্যাদি বিবেচনা করে বিশ্বের ৩২টির বেশি দেশে বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করা হয়।

 

বিদেশে কি সত্যিই চিকিৎসা ‘ফ্রি’!

এটা মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে, ‘ফ্রি’ স্বাস্থ্যসেবা আসলে এতটা বিনামূল্যে নয়। এসব দেশগুলোর সরকারি চিকিৎসা সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো পরোক্ষভাবে স্বাস্থ্যসেবা পরোক্ষভাবে নাগরিকদের অর্থ দ্বারাই প্রদান করা হয়। এর অর্থ আসে নাগরিকদের দেওয়া স্বাস্থ্যসেবার কর থেকে। বুদ্ধিমান ভ্রমণকারীরা বিষয়টি নিয়ে অযৌক্তিক মন্তব্য করেন না। কারণ তারা জানেন যে, বিদেশের স্থানীয় বাসিন্দারা তাদের দেশে বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা পাওয়ার জন্য তার সরকারকে কর প্রদান করে। এ ছাড়া স্বাস্থ্য বীমার মাধ্যমেও এর অর্থ সরকারি স্বাস্থ্যসেবা তহবিলে জমা হয়। অনেক দেশে রোগীরা যখনই হাসপাতালে বা ডাক্তারের কাছে চিকিৎসার জন্য যান, তখন রোগীর কাছ থেকে একটি ছোট ফি কেটে নেওয়া হয়। কখনো কখনো রোগীদের অগ্রিম অর্থ প্রদান করতে হয়। তারপর সরকারের কাছে  পরিশোধিত সেই রশিদটি জমা দিতে হয়। অতএব, বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবার জন্যও সেসব দেশে অর্থের প্রয়োজন হয়।

ফ্রি বনাম ইউনিভার্সাল হেলথ কেয়ার

বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা থেকে আলাদা। দুটি সেবাই বিনিয়োগযোগ্য। তবে এর মধ্যেও রয়েছে পার্থক্য।

ফ্রি হেলথ কেয়ার : ফ্রি হেলথ কেয়ার বা বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবার অর্থ হলো- সব নাগরিক বিনা খরচে বা খুব কম খরচে তাদের স্বাস্থ্যসেবার সুবিধা পান।

ইউনিভার্সাল হেলথ কেয়ার : ইউনিভার্সাল হেলথ কেয়ার বা সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা হলো- এমন একটি স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা, যার মাধ্যমে কোনো দেশ তাদের অন্তত ৯০% নাগরিক চিকিৎসাসেবা প্রদান করে।

ওপরের দুটি সেবারই অর্থের জোগানদাতা দেশটির সরকারি কোষাগার। যার উৎস সে দেশের নাগরিকদের থেকে আদায়কৃত কর। অনেক ক্ষেত্রে তা আসে স্বাস্থ্য বীমা থেকেও। সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবার একটি রূপ- যখন সরকার তার নাগরিকদের স্বাস্থ্যসেবার জন্য অর্থ প্রদান করে, একে মূলত ‘একক প্রদানকারী’ ব্যবস্থা বলা হয়। যদিও এটি একমাত্র ব্যবস্থা নয়। একটি দেশে সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা থাকতে পারে- এক অর্থে সরকারিভাবে প্রণীত আইনের মাধ্যমে। আরেকটি পদ্ধতি হলো বাধ্যতামূলক বীমা। এ ছাড়াও এই সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবার প্রাথমিক স্তরও থাকতে পারে। সেসব দেশের বাস্তবতা হলো- বেশির ভাগ নাগরিকই এখনো চিকিৎসা বীমা ক্রয় করে থাকেন। কারণ একটাই, উন্নত চিকিৎসা নিশ্চিত করা।

 

কোথায় মিলবে সেবা

ভ্রমণ করতে আসা মানুষের জন্য বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবার বিষয়টি প্রায়ই আলোচনায় আসে। কেউ কী চাইলেই উন্নত দেশে বিনা খরচে চিকিৎসাসেবার সুযোগ নিতে পারেন? কানাডার কথাই ধরা যাক। এ দেশে বেড়াতে আসা মানুষের জন্য চিকিৎসা নেওয়া অনেক ব্যয়বহুল একটি ব্যাপার। এমনকি অনেক বছর দেশের বাইরে থেকে কানাডায় ফেরার পরও সেখানকার মানুষকে স্বাস্থ্যবিষয়ক ইন্স্যুরেন্স কার্ডের জন্য পুনরায় আবেদন করতে হয়। ইউরোপের অনেক দেশেই দেখা যায়, সেসব দেশের সরকারি হাসপাতালে পর্যটকরা বিপুল অঙ্কের খরচ করে চিকিৎসাসেবা নেন। অনেক হাসপাতাল আবার রোগীর সামর্থ্য বিবেচনা করে খরচের ব্যাপারটা নির্ধারণ করেন। এসটিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিশ্বের প্রায় ৪৩টি দেশের সরকার তাদের নাগরিকদের জন্য ইউনিভার্সাল হেলথ কেয়ার প্রদান করে থাকে। এসব দেশের তালিকায় প্রথমেই রয়েছে নরওয়ে। এটি বিশ্বের প্রথম দেশ, যারা ১৯১২ সালে ফ্রি হেলথ কেয়ার চালু করেছিল এবং তাদের দেশের চিকিৎসার মান অন্য সব দেশের চেয়ে অনেক আধুনিক। অন্যদিকে স্বাস্থ্যসেবায় সবচেয়ে খারাপ অবস্থানে রয়েছে যুদ্ধবিধ্বস্ত ইয়েমেন। সেখানে ক্রমবর্ধমান সংঘাতের কারণে আন্তর্জাতিক ত্রাণ সংস্থার স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করাও সম্ভব হয়ে উঠছে না।

 

ইউনিভার্সাল হেলথ কেয়ার প্রদানকারী দেশগুলো...

অস্ট্রেলিয়া, অস্ট্রিয়া, বাহরাইন, বেলজিয়াম, ব্রুনাই, কানাডা, সাইপ্রাস, ডেনমার্ক, ফিনল্যান্ড, ফ্রান্স, জার্মানি, গ্রিস, হংকং, আইসল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড, ইসরায়েল, ইতালি, জাপান, কুয়েত, লুক্সেমবার্গ, নেদারল্যান্ডস, নিউজিল্যান্ড, নরওয়ে, পর্তুগাল, সিঙ্গাপুর, স্লোভেনিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, স্পেন, সুইডেন, সুইজারল্যান্ড, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং যুক্তরাজ্য। এসব দেশের সরকার তাদের নাগরিকদের জন্য উন্নত ফ্রি চিকিৎসাসেবা এবং সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করে। এ ছাড়া বিশ্বের অনেক দেশের নাগরিক বা বাসিন্দা বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত। এর কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে- এ ধরনের চিকিৎসা ব্যবস্থা গ্রহণে অনাগ্রহ এবং দুর্নীতি।

 

প্রবাসীদের চিকিৎসাসেবা প্রদানকারী সেরা দেশ...

এসব দেশের সরকার বিদেশিদের জন্য সেরা স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করে থাকে। দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে নিউজিল্যান্ড, জাপান, মেক্সিকো, জার্মানি, থাইল্যান্ড, কানাডা, যুক্তরাজ্য, স্পেন, নরওয়ে,  সুইডেন এবং  দক্ষিণ কোরিয়া।

 

মেক্সিকো

মেক্সিকোর প্রতিটি নাগরিকই রয়েছেন সর্বজনীন চিকিৎসাসেবার আওতায়। শুধু দেশটির নাগরিকই নন, প্রবাসীরাও এই সেবায় অন্তর্ভুক্ত। মেক্সিকান পাবলিক হেলথ ইন্স্যুরেন্সের দুটি সেক্টর রয়েছে। এক. ইনস্টিটিউটো দে সালুদ প্যারা এল বিয়েনেস্টার (আইএনএসএবিআই) এবং দুই. ইনস্টিটিউটো মেক্সিকানো দেল সেগুরো সোশ্যাল (আইএমএসএস)। দ্বিতীয় সংস্থাটি (আইএমএসএস) নারী-পুরুষ এবং জাতীয়তা নির্বিশেষে প্রত্যেক নাগরিককে সর্বজনীন চিকিৎসা প্রদান করে থাকে। মূলত এটি মেক্সিকান আইন অনুযায়ী প্রণীত সেবা। আর প্রথম সংস্থা (আইএনএসএবিআই) করোনাকালীন অর্থাৎ ২০২০ সালে বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা চালু করে। প্রতিষ্ঠানটি মূলত বেকার, অর্থনৈতিকভাবে সামর্থ্যহীন নাগরিকদের এই স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করে থাকে। আইএনএসএবিআই সংস্থাটির প্রদানকৃত সেবা দেশটিতে ব্যাপক জনপ্রিয়। ২০১৯ সালের ডিসেম্বর থেকে সংস্থাটি এই সেবা প্রদান করে আসছে। 

 

জার্মানি

জার্মানি (জার্মান স্বাস্থ্য ব্যবস্থা) বিশ্বের অন্যতম সেরা চিকিৎসা সেবাদানকারী দেশ হিসেবে জগদ্বিখ্যাত। দেশটির প্রতিটি নাগরিক, বিদেশি কর্মী, প্রবাসী এমনকি দেশটিতে পড়াশোনা করতে যাওয়া শিক্ষার্থীদেরও বাধ্যতামূলত স্বাস্থ্য বীমা গ্রহণ করতে হয়। জার্মানিতে স্বাস্থ্য বীমা ব্যবস্থা সরকারি এবং বেসরকারি দুই ভাগে বিভক্ত। জার্মান আইন অনুসারে, দেশটিতে কেউ মাসে অন্তত ৫ হাজার ৬৩ ইউরো উপার্জন করলে তাকে পাবলিক ইন্স্যুরেন্সের আওতায় রেজিস্ট্রেশন করতে হয় এবং আয়ের ৭.৩% শতাংশ বাধ্যতামূলক স্বাস্থ্য বীমা প্রদান করতে হয়। যারা মাসিক ৫ হাজার ৬৩ ইউরোর বেশি উপার্জন করেন তারা সরকারি এবং বেসরকারি যে কোনো বীমার আওতায় তাদের প্রিমিয়াম বেছে নিতে পারেন। তবে দেশটির বেশির ভাগ লোকই পাবলিক হেলথ ইন্স্যুরেন্স স্কিমের অধীনে নথিভুক্ত হন। কারণ একটাই, ছোট ছোট প্রিমিয়াম (কিস্তি)।

 

নিউজিল্যান্ড

কম খরচে বা বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা গ্রহণে নিউজিল্যান্ডবাসীকে প্রদান করতে হয় চিকিৎসা বীমা। এ ছাড়া প্রবাসী কোনো ব্যক্তিকে এই বীমার আওতায় আসার জন্য কমপক্ষে দুই বছরের বেশি বৈধ কাজের ভিসা দেখাতে হয়। দেশটিতে স্বাস্থ্যসেবার জন্য চিকিৎসা বীমা নেওয়ার বিকল্পও রয়েছে। যদিও অনেক নিউজিল্যান্ডবাসী তা পছন্দ করেন না। দেশটির ন্যাশনাল হেলথ ইনডেক্স প্রতিটি নাগরিকের স্বাস্থ্যসেবার দিকে খেয়াল রাখে। এর আওতায় দেশটির যে কোনো স্থানের হাসপাতাল বা ক্লিনিক থেকে যে কেউ ২৪ ঘণ্টা সেবা গ্রহণ করতে পারবে। সংস্থাটি নাগরিকদের সুস্বাস্থ্যে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা, ওষুধে ছাড়, এমনকি অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিসের প্রতিটি ধাপে সন্তোষজনক সেবা প্রদান করে থাকে।

 

থাইল্যান্ড

থাইল্যান্ডে সর্বজনীন চিকিৎসার অন্যতম উৎস পাবলিক হেলথ ইন্স্যুরেন্স স্কিম। দেশটিতে কর্মরত প্রবাসীদেরও এই বীমার আওতায় নিয়মিত কিস্তি প্রদান করতে হয়। এর থেকে উপকৃতও হন তারা। হাতে পান ‘বীমা কার্ড’। এজন্য অবশ্য প্রত্যেক নাগরিককে সামাজিক নিরাপত্তা প্রকল্পের আওতায় তার মোট বেতনের ৫ শতাংশ বীমা কিস্তি প্রদান করতে হয়। এর মাধ্যমে প্রবাসীরা একটি সামাজিক নিরাপত্তা নম্বর পাবেন। তারা জাতীয় বীমা নেটওয়ার্কের অধীনে রেজিস্ট্রেশনের মাধ্যমে একটি হাসপাতালে নিয়োগ পাবেন। পরবর্তীতে অসুখকালীন সময় তারা ওই হাসপাতাল থেকে বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা পেতে পারে। অন্য হাসপাতালে (বা ব্যক্তিগতভাবে) চিকিৎসা নেওয়ার জন্য এই ‘কার্ড’ ব্যবহার করা যাবে না।

 

কানাডা

আপনি যদি কানাডার নাগরিক বা স্থায়ী বাসিন্দা হন, তবে আপনাকে অবশ্যই জাতীয় প্রকল্পের আওতায় হেলথ ইন্স্যুরেন্স করতে হবে। এর থেকে আপনি দারুণভাবে উপকৃতও হতে পারেন। বেশির ভাগ বিনামূল্যের স্বাস্থ্যসেবা দেশগুলোর মতো এখানেও বাসিন্দাদের প্রদেয় করের একটি অংশ জাতীয় স্বাস্থ্য তহবিলে জমা হয় এবং সেখান থেকে সরকার যে কোনো নাগরিকের চিকিৎসা ব্যয়ের জন্য অর্থ প্রদান করে থাকে। মূলত বীমা বা করের অর্থ থেকেই কানাডিয়ান স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা তাদের নাগরিকদের বেশির ভাগ চিকিৎসার ভার বহন করে থাকে। কিন্তু অনেক প্রবাসী এমন সেবা গ্রহণে একই পরিমাণের ব্যক্তিগত বীমা ব্যবস্থা বেছে নেন। এতে করে তারা পাবলিক ইন্স্যুরেন্সের সেবা পান না।

 

যুক্তরাজ্য

নারী-পুরুষ নির্বিশেষে কেবল যুক্তরাজ্যের নাগরিকরাই দেশটির সর্বজনীন চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করতে পারেন। দেশটির আইন অনুযায়ী কেবল নিজেদের নাগরিকদের এই বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করে। দেশটির জাতীয় স্বাস্থ্যসেবা অধিদফতর এই চিকিৎসার অর্থ প্রদান করে থাকে। তবে প্রবাসীদের ভিসা বা ইমিগ্রেশনের সময় একটি নির্দিষ্ট হেলথ চার্জ দিতে হয়। সেই অর্থের পরিমাণ জনপ্রতি দাঁড়ায় বাৎসরিক অন্তত ৬২৪ পাউন্ড। এর পরিবর্তে জাতীয় স্বাস্থ্যসেবা দেশটির সব চিকিৎসক নিয়োগ এবং প্রেসক্রিপশনের ওষুধের ওপর মূল্যছাড় দেয়। ফলে যে কোনো ওষুধের সর্বোচ্চ মূল্য দাঁড়ায় মাত্র ১২ পাউন্ড।

 


স্পেন

স্প্যানিশ নাগরিকদের কর এবং সামাজিক নিরাপত্তার অর্থ জাতীয় স্বাস্থ্যসেবা তহবিলের অর্থায়নে সহায়তা করে।  দেশটিতে আপনি একবার জাতীয় স্বাস্থ্য বীমার অধীনে নিবন্ধিত হলে এর সুফল ভোগ করবেন আজীবন। সরকার আপনাকে প্রদান করবে একটি ‘স্বাস্থ্য কার্ড’। যার মাধ্যমে স্প্যানিশ হাসপাতালগুলো থেকে মিলবে বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা এবং প্রেসক্রিপশনের ওষুধের জন্য ফি কমানোর অনুমতি। জাতীয় স্বাস্থ্য কার্ড পেতে স্থানীয় টাউন হলে নিবন্ধন করাতে হয়। এই নিবন্ধন সম্পন্ন হলে আপনাকে প্রদান করা হবে একটি প্রশংসাপত্র। এর মাধ্যমে আপনি পেয়ে যাবেন একটি ‘স্বাস্থ্য কার্ড’।

 

জাপান

জাপান তার জিডিপির প্রায় ৮.২ শতাংশ চিকিৎসার পেছনে ব্যয় করে। জাপানে কর্মসংস্থানের ওপর ভিত্তি করে দুটি ‘স্বাস্থ্যসেবা’ প্রকল্প চালু রয়েছে। একজন পূর্ণ সময়ের কর্মীকে জাপানি স্বাস্থ্য বীমা দেওয়া হয়। এ ছাড়াও দেশটির জাতীয় স্বাস্থ্য বীমার আওতায় নিবন্ধিত হতে পারবে শিক্ষার্থী, সপ্তাহে ৩০ ঘণ্টার বেশি কাজ করতে পারেন এমন কর্মচারী এবং কর্মসংস্থানহীন নারী-পুরুষ উভয়ই। এর মাধ্যমে দেশটির সরকার রোগীর চিকিৎসা খরচের ৭০ শতাংশ বহন করে থাকে। ‘ইউনিভার্সাল হেলথ কেয়ার সিস্টেম’ এর আওতায় যে কোনো সরকারি হাসপাতালে রোগী দেখানো, চিকিৎসা ব্যয় ইত্যাদির খরচ বহনে এগিয়ে আসে সরকার।

 

অস্ট্রেলিয়া

জনগণের ট্যাক্সের টাকায় অস্ট্রেলিয়া সরকার গড়ে তুলেছে ‘মেডিকেয়ার’। এর মাধ্যমে সে দেশের নাগরিকরা সরকারি হাসপাতালে বিনামূল্যে চিকিৎসা করাতে পারেন। এ ছাড়া প্রাইভেট হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ারও সুযোগ রয়েছে। তবে সে ক্ষেত্রে খরচটা অনেক বেশি। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তাই সাধারণ মানুষের ভরসা সরকারি হাসপাতালগুলো। প্রতিটি অঞ্চলে, শহরে সরকারি হাসপাতালগুলো আধুনিক চিকিৎসার সব আয়োজন নিয়ে প্রস্তুত রয়েছে। ‘প্রাইভেট হেলথকেয়ার ইন্স্যুরেন্স’ পদ্ধতির মাধ্যমে মাসে মাসে কিছু নির্ধারিত টাকা জমাতে পারেন সাধারণ জনগণ। এর বিনিময়ে জনসাধারণ প্রাইভেট হাসপাতালগুলো থেকেও খুব কম খরচে জরুরি চিকিৎসাসেবা গ্রহণ করতে পারছেন।

 

ইতালি

উন্নত চিকিৎসা প্রাপ্তির অন্যতম গন্তব্য ইতালির সরকার সে দেশের সব নাগরিকের জন্য কিছু ক্ষেত্রে ফ্রি ও কিছু ক্ষেত্রে নামমাত্র ফি দিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছে। ‘সারভিজিও স্যানিতারিও নাজিওনালে’ (এসএসএন)-এর মাধ্যমে সরকার এ সুযোগ জনগণকে দিয়ে থাকে। সরকারি হাসপাতালে ডাক্তার দেখানো, চিকিৎসা করানো, ওষুধ কেনা, ডায়াগনস্টিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা, অ্যাম্বুলেন্সের ভাড়া প্রদানের মতো সব ধরনের চিকিৎসাসেবা প্রায় ফ্রি করে দিয়েছে সে দেশের সরকার। প্রাইভেট হাসপাতালে এমনিতে চিকিৎসা ব্যয় অনেক বেশি হলেও ইন্স্যুরেন্সের আওতায় থাকলে নামমাত্র ফি দিয়ে ডাক্তার দেখানো যাবে। এ ছাড়া দেশটিতে জরুরি স্বাস্থ্যসেবার জন্য অ্যাম্বুলেন্স, ওষুধে ছাড়ও দেওয়া হয়ে থাকে।

 

সিঙ্গাপুর

২০০০ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এশিয়ার সেরা চিকিৎসাসেবা প্রদানকারী দেশ হিসেবে সিঙ্গাপুরের নাম ঘোষণা করে। সরকারিভাবে এ দেশের চিকিৎসানীতি  দারুণ শক্তিশালী ও নাগরিকবান্ধব। বেসরকারিভাবে উন্নত ও আধুনিক চিকিৎসা নিশ্চিতে বিশ্বের কাছে দেশটি দারুণভাবে প্রশংসিত। সিঙ্গাপুরের সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে, এখানকার চিকিৎসার মান বিশ্বসেরা। একই সঙ্গে সরকারিভাবে এ দেশের প্রতিটি প্রান্তে হাসপাতাল ও ক্লিনিক গড়ে তুলেছে। সে দেশের নাগরিকরা চাইলেই যখন-তখন এসব হাসপাতাল থেকে সর্বাধুনিক চিকিৎসা পেতে পারেন একেবারে নামমাত্র ফি দিয়ে। সরকার চিকিৎসার খরচে বড় ধরনের ভর্তুকি দেওয়ার কারণে মানুষ খুব সহজেই এত সস্তায় উন্নতমানের চিকিৎসা পেতে পারছেন।

সর্বশেষ খবর