সোমবার, ৪ জুলাই, ২০২২ ০০:০০ টা

শস্য উৎপাদনে বিখ্যাত দেশ

আবদুল কাদের

কৃষিবিশ্ব অর্থনীতির অবিচ্ছেদ্য অংশ, বিশেষত উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য। যা সৃষ্টি করে কর্মসংস্থান, আয় এবং খাদ্যের প্রাথমিক উৎস। বিশ্বে কৃষি উৎপাদনের মাধ্যমে মেটানো হয় মানুষের চাহিদা।  যার বেশির ভাগ পূরণ করে গুটিকয়েক রাষ্ট্র...

গমের জন্য বিখ্যাত রাশিয়া

স্থলভাগে রাশিয়া বিশ্বের বৃহত্তম দেশ- কানাডার চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ বড়। উত্তর এশিয়া এবং পূর্ব ইউরোপের বেশির ভাগ অংশজুড়ে বিস্তৃত রাশিয়া। বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ রাশিয়া। প্রাকৃতিক সম্পদের জন্য বিখ্যাত হলেও- বিশ্বের শীর্ষ গম উৎপাদনকারী দেশের খেতাবও দেশটির দখলে। কেবল উৎপাদনে নয়, রপ্তানিতেও শীর্ষস্থান রাশিয়ার দখলেই। এদিকে উৎপাদন ও রপ্তানি সক্ষমতা আরও বাড়ানোর ইঙ্গিত দিয়েছে পুতিনের সরকার। ‘ওয়ার্ল্ড মার্কেটস অ্যান্ড ট্রেড রিপোর্ট’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২২-২০২৩ মৌসুমে রাশিয়া মোট ৩৯ মিলিয়ন টন রপ্তানি করতে পারে। ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, বিশ্ববাজারে সরবরাহ করা গমের ২০ শতাংশ জোগান দেয় রাশিয়া। এ ছাড়া দেশটির সর্বাধিক উৎপাদিত  ফসলগুলোর মধ্যে রয়েছে যব, চিনির বিট, আলু, ভুট্টা, বার্লি, ওটস, রাই ইত্যাদি।

 

ইউক্রেন বিখ্যাত তেলবীজে

পূর্ব ইউরোপের দেশ ইউক্রেন। রাশিয়ার পর দেশটি ইউরোপের দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশ। সারা বিশ্বের ১০ শতাংশ গম সরবরাহ করে একাই। এ ছাড়াও বিশ্বের বাজারজাত সূর্যমুখী তেলের ৫০ শতাংশ এবং ভুট্টার ১৬ শতাংশ চাহিদা পূরণ করে দেশটি। তবে সাম্প্রতিক যুদ্ধ পরিস্থিতি দেশটিকে ফেলেছে বিপাকে। শস্য রপ্তানিতে দেশটি নেমে এসেছে শূন্যের কোঠায়। ফলে দেশটিতে শস্য উৎপাদন এক-তৃতীয়াংশ কম হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে, তারপরও ইউক্রেনের গ্রেইন অ্যাসোসিয়েশনের ধারণা, দেশটির বার্ষিক ভুট্টা উৎপাদন ২ কোটি ৬০ লাখ টন, গম ১ কোটি ৯০ লাখ টন, বার্লি ৭০ লাখ টন এবং তেলবীজ উৎপাদন ১ কোটি ৩০ লাখ টন হতে পারে। সরকারের আশঙ্কা, যুদ্ধের কারণে রপ্তানি বন্ধ থাকায় চলতি বছর দেড় কোটি টন শস্য  মজুদ নিয়ে ঝামেলায় পড়তে হতে পারে।

 

ভারত সেরা চিনাবাদাম ও পিঁয়াজে

বিশ্বের কৃষি উৎপাদনে দ্বিতীয় অবস্থানে ভারত। এশিয়ার দেশটির জিডিপিতে কৃষি-সহায়ক ক্ষেত্রগুলোর অবদান ১৬.৬ শতাংশ। ভারতের মোট শ্রমশক্তির ৫২ শতাংশই কৃষিকাজে নিয়োজিত। দেশটির উৎপাদিত কৃষি পণ্যের মধ্যে রয়েছে দুগ্ধ, কাজুবাদাম, নারিকেল, চা, পাট, আদা, হরিদ্রা ও কালো মরিচ, আম, লেবু, পেঁপে, ফুলকপি ইত্যাদি। এ ছাড়া কফি উৎপাদনে ভারতের স্থান বিশ্বে ষষ্ঠ। গবাদিপশুর সংখ্যায়ও ভারতের স্থান বিশ্বে প্রথম। গম, ধান, আখ, চিনাবাদাম, পিঁয়াজ এবং মৎস্য উৎপাদনে ভারতের স্থান বিশ্বে দ্বিতীয়। ২০২১-২০২২ সালের কৃষিজ পণ্যের রপ্তানিতে ভারত সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছেছে। এ সময় দেশটির কৃষি পণ্যের রপ্তানিতে ১৯.৯২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশ্ব খাদ্য বাণিজ্যে ভারতীয়  কৃষিপণ্যের অবদান প্রতি বছর বাড়ছে।

 

যুক্তরাষ্ট্রে দুগ্ধজাত খাদ্যপণ্য

বিশ্বের শীর্ষ চার খাদ্য উৎপাদনকারী দেশের মধ্যে একটি যুক্তরাষ্ট্র। ১৮৬৫ সাল থেকে ১৯০০ সাল পর্যন্ত সময়টা ছিল আমেরিকার ইতিহাসে কৃষিবিপ্লবের যুগ। আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতি ও কৃষি উৎপাদন কৌশলে দেশটি উন্নত। যদিও জমির পরিমাণ সেখানেও আশঙ্কাজনকভাবে কমছে। আবহাওয়ার বৈচিত্র্যের কারণে নানা ধরনের খাদ্যশস্য উৎপাদন করে থাকে। যে কারণে রাসায়নিক সারের প্রয়োগ কম এ দেশে। গমজাতীয় শস্য, মাংস, সয়াবিন বীজ, দুধ ও দুগ্ধজাত খাদ্যপণ্য উৎপাদনে দেশটি সেরাদের কাতারে রয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন ধরনের বাদাম ও আঙুর জাতীয় ফল বিপুল পরিমাণে উৎপাদন করে যুক্তরাষ্ট্র। আপেল, পিঁয়াজ, টমেটো, মটরদানা, তরমুজ, গাজরসহ বহু ফল ও সবজি কৃষি জমিতে অগ্রাধিকার পায় দেশটিতে।

 

সবজি ও মাছ উৎপাদনে চীন

চীনের অর্থনীতির প্রাণ কৃষি। তাই তো কৃষিপণ্যের উৎপাদনকে চীনে দেওয়া হয় বিশেষ গুরুত্ব। কৃষিপণ্যের চাহিদা ও সরবরাহের মধ্যে সমন্বয় করতে বিশেষ গাইডলাইন প্রণয়ন করে কেন্দ্রীয় সরকার। বিশ্বে সর্বাধিক গম উৎপাদনে চীন দ্বিতীয় এবং সবজি ও মৎস্য উৎপাদনে রয়েছে শীর্ষস্থানে। এমনকি ধান উৎপাদনেও দেশটি বিশ্বসেরা। যদিও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে দেশটির রপ্তানি কিছুটা খারাপ অবস্থানে। তথাপি দেশটির ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড রিফর্ম কমিশনের প্রতিবেদন বলছে, চলতি বছর ১১ কোটি ৭৩ লাখ ৩০ হাজার হেক্টর জমিতে খাদ্যশস্য আবাদ নিশ্চিত করবে।  সয়াবিন ও অন্যান্য তেলবীজ আবাদও বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে। দেশটি মূলত চাল, গম, আলু, টমেটো, জোরা, চিনাবাদাম, চা, বাজরা, বার্লি, তুলা, তৈলবীজ, ভুট্টা এবং সয়াবিন উৎপাদন করে থাকে।

 

মসলায় সেরা ইন্দোনেশিয়া

ইন্দোনেশিয়া বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ কৃষি উৎপাদক ও রপ্তানিকারক দেশ। এখানে উৎপাদিত কৃষিজ পণ্যের মধ্যে রয়েছে পাম তেল, প্রাকৃতিক রাবার, কফি, চাল, আলু, মসলা এবং নানাবিধ ফলমূল। দেশটি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সর্বাধিক পাম তেল রপ্তানি করে থাকে। গত কয়েক দশকে কৃষিশিল্প ইন্দোনেশিয়ার কর্মসংস্থানের বৃহত্তম খাতে পরিণত হয়েছে। যদিও দেশটি বর্তমানে কৃষি ক্ষেত্রে অন্যান্য দেশ থেকে পিছিয়ে। এর কারণ, শিল্পায়নের দিকে ঝুঁকছে এক সময়ের সেরা কৃষি নির্ভরশীল রাষ্ট্র ইন্দোনেশিয়া। দেশটির মোট জনশক্তির মাত্র ৩৭ শতাংশ কৃষিকাজে জড়িত। এর মধ্যে ৭০ শতাংশের বয়স ৫৫-এর বেশি। ইন্দোনেশিয়ার সরকার ইতোমধ্যে দেশটির কৃষিশিল্পের মর্যাদা ফেরাতে তরুণ উদ্যোক্তাদের নিয়ে কাজ করছে। আশা দ্রুত ফিরবে কৃষি ক্ষেত্রে সফলতা।

সর্বশেষ খবর