সোমবার, ৮ আগস্ট, ২০২২ ০০:০০ টা

যেখানে নিষিদ্ধ পর্যটক

যেখানে নিষিদ্ধ পর্যটক

রহস্য আর রোমাঞ্চঘেরা অসংখ্য স্থান রয়েছে পৃথিবীতে। যার কোনো কোনোটি আবার বিস্মিত করে চলেছে যুগের পর যুগ। বিশ্বে এমন কিছু স্থান রয়েছে, যেখানে ভ্রমণ নিষিদ্ধ। জানাচ্ছেন - আবদুল কাদের

 

লাস্কু গুহা, ফ্রান্স

দক্ষিণ-পশ্চিম ফ্রান্সের ভিজেয়ার উপত্যকায় অবস্থিত লাস্কু গুহা। যেখানে রয়েছে প্রাগৈতিহাসিক প্রত্নতত্ত্বের অসংখ্য নিদর্শন। ধারণা করা হয়, প্রায় ২০ হাজার বছর আগের গুহামানবদের দেয়ালচিত্র রাখা আছে। অতীতে ১৯৬৩ সাল পর্যন্ত ফ্রান্সের লাস্কু গুহায় থাকা প্রাচীন চিত্রকর্ম দেখতে ভিড় জমাত পর্যটকেরা। কিন্তু মানুষের নিঃশ্বাস থেকে আগত আর্দ্রতা ও কার্বন ডাইঅক্সাইডের ফলে চিত্রকর্মগুলোর ক্ষতি হতে শুরু করে। বর্তমানে এখানে মানুষের প্রবেশ নিষিদ্ধ। ছবিগুলো নষ্ট হওয়ার ভয়েই গুহাটি গত ৬০ বছর ধরে বন্ধ। লাস্কুর ছবিগুলো আনুমানিক ১৯ হাজার বছর আগের। শত শত আঁকা ও খোদাই করা জীবজন্তুর ছবি মিলেছে এখানে। যার মধ্যে ৬০০ জীবজন্তুকে শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে।

 

স্নেক আইল্যান্ড, ব্রাজিল

নাম শুনেই বোঝা যায়, এটি সাপের স্বর্গরাজ্য। কারণ সেখানে রয়েছে অগণিত বিষাক্ত সাপ! একে সাপের বাড়িও বলা হয়ে থাকে। দ্বীপটির আসল নাম ইলহা দ্য কুইমাডা গ্রান্ডে। তবে বিশ্ববাসীর কাছে এটি স্নেক আইল্যান্ড নামে পরিচিত। এটি ব্রাজিলের রাজধানী সাও পাওলোর দক্ষিণ-পূর্ব ভূখন্ড থেকে প্রায় ২০ মাইল দূরে অবস্থিত। এত দূরে থাকায়, সাপগুলো সমুদ্রের প্রবল ঢেউ উপেক্ষা করে সাঁতরে লোকালয়ে পৌঁছাতে পারে না। দ্বীপের লাইট হাউসের মেরামতের জন্য মাঝে মাঝে নৌ সেনারা এখানে আসেন। আর গবেষকদেরও এখানে প্রবেশের অনুমতি আছে। মানুষ ও সাপ উভয়কেই সুরক্ষার জন্য এটি করা হয়েছে।

 

সার্টসি দ্বীপ, আইসল্যান্ড

এটি আইসল্যান্ডের ভেস্তমানেয়ার আরকিপেলেগো শহরের দক্ষিণ উপকূলে অবস্থিত আগ্নেয় দ্বীপ। ১৯৬৩ সালের আগে এর অস্তিত্ব ছিল না। সে সময় সমুদ্রপৃষ্ঠের অনেক নিচে সংঘটিত ওয়েস্টম্যান আইল্যান্ডের জলস্থ আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের ফলে দ্বীপের উৎপত্তি। অগ্ন্যুৎপাত চলতে থাকে ১৯৬৭ সালের জুন পর্যন্ত এবং বন্ধ হওয়ার স্থানে এক দ্বীপ সৃষ্টি হয় যা আগে সেখানে ছিল না। এই নতুন দ্বীপ নামকরণ করা হয় আগুনের ইয়োটুন দৈত্য সাটসের নামানুসারে। বিজ্ঞানীরা দ্বীপটিকে পর্যটকদের পরিদর্শন থেকে বিরত রাখেন, যাতে তারা সেখানে জীবন কীভাবে বিবর্তিত হয় তা অধ্যয়ন করতে পারেন।

 

রুম থার্টি নাইন, উত্তর কোরিয়া

উত্তর কোরিয়া নিয়ে মানুষের কৌতূহলের কমতি নেই। দেশটির তেমনি একটি গোপন সরকারি ভবন- রুম থার্টি নাইন। ধারণা করা হয়, ১৯৭০ সালে রুম ৩৯ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। কথিত আছে, এটি উত্তর কোরিয়ার গোপন সংস্থার আস্তানা। বলা হয়, এটি উত্তর কোরিয়ার ন্যাশনাল ডিফেন্স কমিশনের চেয়ারম্যান কিম জং উনের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের সহজ পথ। এটি তার প্রধান কার্যালয়ের পাশেই অবস্থিত। গুজব রয়েছে, সুইস ব্যাংকসহ বিশ্বের বেশ কয়েকটি নামিদামি ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট এখান থেকে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। ধারণা করা হয়, এই স্থান থেকে বিশ্বের প্রায় ১২০টি বড় বড় বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণ করার কথাও শোনা যায়। জনশ্রুতি আছে, ভবনটিতে প্রায় ১০০ বিলিয়ন ডলারের বেশি অর্থ মজুদ রয়েছে।

 

 

নর্থ সেন্টিনেল দ্বীপ, আন্দামান

রহস্যঘেরা নিষিদ্ধ দ্বীপ নর্থ সেন্টিনেল। এটি বঙ্গোপসাগরে অবস্থিত আন্দামান-নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের অন্তর্গত প্রবাল প্রাচীরে ঘেরা নিষিদ্ধ ও ভয়ংকর দ্বীপ। দ্বীপটিতে বসবাসকারী অধিবাসীদের বলা হয়, সেন্টিনেলিজ। যাদের সঙ্গে সমগ্র বিশ্বের কোনো যোগাযোগ নেই। এরা হলো- আধুনিক সভ্যতার শেষ যোগাযোগবিহীন উপজাতি। এদের জনসংখ্যা ৩৯ থেকে ২৫০-এর মধ্যে, সর্বোচ্চ ৫০০ জন। দ্বীপটির আয়তন ৭২ বর্গকিলোমিটার এবং কাগজে কলমে এটির মালিকানা ভারতের। কথিত রয়েছে, সেন্টিনেল দ্বীপের উপজাতির মানুষজন নরমাংসভোজী। কোনো বহিরাগত সেখানে গেলেই তাদের এরা তীর ছুড়ে মেরে ফেলে। ধারণা করা হয়, দ্বীপের দুর্গম প্রাকৃতিক পরিবেশের কারণে উপজাতিদের এমন হিংস্র আচরণ।

 

নর্থ ব্রাদার দ্বীপ, নিউইয়র্ক

দ্বীপটি আলো ঝলমলে নিউইয়র্ক শহরের অদূরে অবস্থিত। কয়েক বছর আগেও এই দ্বীপে মানুষ বসবাস করত। কিন্তু বর্তমানে এই দ্বীপে একটি মানুষের খোঁজও মেলে না। জনশ্রুতি আছে, এখানেও এক সময় ছিল একটি হাসপাতাল। অনেকের মতে, ১৮৮৫ সালে নিউইয়র্কে সংক্রামক রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। সংক্রমিত লোকদের চিকিৎসার জন্য এখানে নিয়ে আসা হতো। চিকিৎসা চলাকালীন বহু রোগী এই দ্বীপে মারা যায়। আরও শোনা যায়, দ্বীপটিতে অদৃশ্য আত্মার প্রাদুর্ভাবের কথা। তাদের বিশ্বাস দ্বীপটি জনমানবশূন্য হওয়ার মূল কারণ এটিই। নানা ভৌতিক কর্মকাণ্ডে দ্বীপ ছেড়ে বাসিন্দারা পালিয়ে যান।

 

মেট্রো-২, মস্কো

পৃথিবীর সবচেয়ে বড় আন্ডারগ্রাউন্ড সিটি মস্কোর মেট্রো-২। এ যেন এক অজানা রাজ্য। শোনা যায়, স্ট্যালিন ক্ষমতায় থাকাকালীন শহরটি তৈরি করা হয়েছিল। এটি নাকি স্টালিনের গোপন স্কেপ রুট (যে গোপন পথ ধরে পালানো যায়)। যদিও ক্রেমলিনের তরফ থেকে কখনই এর অস্তিত্ব স্বীকার করা হয়নি। রাশিয়ার গোয়েন্দা সংস্থা কেজিবির প্রজেক্ট ছিল এটি। যার কোডনেম ডি-৬। শোনা গেছে, সাধারণ মেট্রো থেকে এটি অনেক প্রশস্ত। চার রেল লাইনের মেট্রো চলাচল করে মাটির ৫০ থেকে ২০০ মিটার নিচ দিয়ে। মেট্রোটি নাকি সরাসরি ক্রেমলিন ও এফএসবি হেড-কোয়ার্টারের সঙ্গে সংযুক্ত।

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর