রবিবার, ১১ নভেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

ভোট উৎসবে বাংলাদেশ

দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এখন পুরোটাই ভোটকেন্দ্রিক। টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়ার অলি-গলিতে এখন একটিই আলোচনা। অলি-গলি, পাড়া-মহল্লার চা দোকানে, মফস্বলের হাটবাজারে এখন শুধু নির্বাচনী আলোচনা।

বিশেষ প্রতিবেদক

ভোট উৎসবে বাংলাদেশ

উৎসবমুখর পরিবেশে চলছে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ। গতকাল ছবিটি তুলেছেন জয়ীতা রায়

ভোট উৎসবে মেতে উঠেছে বাংলাদেশ। বৃহস্পতিবার একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার মধ্য দিয়ে সারা দেশে উৎসবের আবহ শুরু হয়েছে। সরকারি দল আওয়ামী লীগ ও জাতীয় সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি নির্বাচনের মাঠে পুরোপুরি নেমে পড়েছে। থেমে নেই বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোট এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টও। সব দ্বিধাদ্বন্দ্ব কাটিয়ে আজ-কালের মধ্যেই তারা নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় যুক্ত হবে বলে জানা গেছে। এ ছাড়া তাদের সামনে আর কোনো বিকল্পও নেই। ভোটের উৎসবে থেমে নেই বিভিন্ন দলের পেশাজীবীরাও। নায়ক-নায়িকা, শিল্পী, খেলোয়াড়, সাংবাদিক, সাংস্কৃতিক কর্মীসহ বিভিন্ন পেশার পরিচিত মুখগুলো নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার জন্য পছন্দের দলগুলো থেকে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করছেন। 

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদের একাংশও মনোনয়নপত্র বিতরণ ও জমা নেওয়ার তৎপরতা শুরু করেছে। অন্যদিকে বিকল্পধারার প্রেসিডেন্ট এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন যুক্তফ্রন্টও দুই-তিন দিনের মধ্যে আগ্রহীদের কাছে মনোনয়ন ফরম বিতরণ শুরু করবে। ইসলামী দলগুলোও ভোটের মাঠে তৎপর রয়েছে। তাদের অধিকাংশই জোটগতভাবে নির্বাচনে অংশ নেবে। বাম গণতান্ত্রিক জোট গতকাল পর্যন্ত নির্বাচনের কোনো ঘোষণা না দিলেও তাদের মধ্যে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার পক্ষে জোরালো মত রয়েছে। শেষ সময়ে তারাও নির্বাচনী ট্রেনে চেপে বসতে পারে।   সরকারি দল আওয়ামী লীগ শুক্রবার থেকে মনোনয়ন ফরম বিতরণ শুরু করেছে। আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয় থেকে প্রথম দিনে ১ হাজার ৩২৮ জন মনোনয়নপ্রত্যাশী ফরম তুলেছেন। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম বিক্রি হচ্ছে ৩০ হাজার টাকায়।

জাতীয় পার্টি আজ থেকে দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে মনোনয়ন ফরম বিতরণ করবে। চলবে আরও তিন দিন। মনোনয়ন ফরমের মূল্য ধরা হয়েছে ৩০ হাজার টাকা। জাতীয় পার্টি জানিয়েছে, বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচনে অংশ নিলে এরশাদের নেতৃত্বাধীন জোট আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪-দলীয় জোটের অংশীদার হয়ে নির্বাচনে যাবে। আর ২০-দল ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট অংশ না নিলে এরশাদের জোট আলাদাভাবে নির্বাচন করবে বলে সিদ্ধান্ত রয়েছে। সব মিলিয়ে ভোট উৎসবে যুক্ত হয়েছে সারা দেশ। অধিকাংশ রাজনৈতিক দল ভোটের উৎসবে নিজেদের সম্পৃক্ত করার জোর প্রস্তুতি শুরু করেছে।

নির্বাচন বিশ্লেষকদের মতে, নির্বাচন কমিশনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর হাতে এখনো সময় আছে আট দিন। এর মধ্যে বিভিন্ন রাজনৈতিক মেরুকরণ সম্পন্ন হবে। কোন দল কোন জোটের হয়ে নির্বাচন করবে সে বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে উঠবে কয়েক দিনের মধ্যেই। এ সময়ের মধ্যে নেতৃস্থানীয় দলগুলো শরিকদের সঙ্গে আসন ভাগাভাগির বিষয়টি চূড়ান্ত করবে। মত-পথের পার্থক্য সত্ত্বেও এবার একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন যথেষ্ট অংশগ্রহণমূলক হবে বলে মনে করা হচ্ছে।     

আগামী ২৩ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে জেগে উঠেছে টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া। রাজনৈতিক দল ও জোটগুলো আগ্রহী প্রার্থীদের কাছ থেকে মনোনয়নপত্র জমা নিয়ে আগামী ১৯ নভেম্বরের আগেই নিজেদের প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করবে। নির্বাচনী তফসিল অনুযায়ী মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ তারিখ ১৯ নভেম্বর। বাছাই ২২ নভেম্বর এবং প্রত্যাহার ২৯ নভেম্বর।

দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এখন পুরোটাই ভোটকেন্দ্রিক। টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়ার অলিগলিতে এখন একটিই আলোচনা। অলি-গলি, পাড়া-মহল্লার চা দোকানে, মফস্বলের হাটবাজারে এখন শুধুই নির্বাচনী আলোচনা। কয়েক দিনের মধ্যেই স্পষ্ট হয়ে যাবে দলভিত্তিক কোথায় কে পেতে যাচ্ছেন কোন দলের মনোনয়ন। দলীয় মনোনয়নপত্র সংগ্রহের পাশাপাশি মনোনয়নপ্রত্যাশীরা শুরু করে দিচ্ছেন রাজনৈতিক তদবির। বিশেষ করে মনোনয়ন দেওয়ার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে পারেন এমন নেতাদের বাসায়-অফিসে ধরনা দিচ্ছেন তৃণমূলের অনেক মনোনয়নপ্রত্যাশী। এবারের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মোট ভোটার ১০ কোটি ৪১  লাখ ৯০ হাজার ৪৮০ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৫ কোটি ২৫ লাখ ৪৭ হাজার ৩২৯ জন এবং নারী ভোটারের সংখ্যা ৫ কোটি ১৬ লাখ ৪৩ হাজার ১৫১ জন। ভোটকেন্দ্র ৪১ হাজার ১৯৯টি। ভোটকক্ষের সংখ্যা ২ লাখ ৬ হাজার ৫৪০টি আর এই মহাকর্মযজ্ঞ সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য নিয়োজিত থাকবেন ৭ লাখেরও বেশি ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা। অন্য বছরের মতো এবারও সুষ্ঠুভাবে ভোট সম্পন্ন করতে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে স্থানীয় প্রশাসনকে প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহায়তা দিতে সশস্ত্র বাহিনী (সেনা, নৌ ও বিমান) মোতায়েন থাকবে। স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে কাজ করবে সেনাবাহিনী। গত বৃহস্পতিবার প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা নির্বাচনী তফসিল ঘোষণাকালে বলেন, নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড যেভাবে হলে নির্বাচন সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হবে— সে ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর