রবিবার, ১১ নভেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

ভিশন-৭১ স্লোগানে নির্বাচনে বাম জোট

ঝর্ণা মনি

স্বাধীনতা সংগ্রামের চেতনা বাস্তবায়নের দাবিতে ‘ভিশন-৭১’ স্লোগানে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেবে সিপিবি-বাসদ নেতৃত্বাধীন বাম গণতান্ত্রিক জোট। সরকারের একতরফা নির্বাচনের আয়োজন, নির্বাচনে গণতান্ত্রিক পরিবেশের অভাব, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড না থাকা, বিরোধী শক্তিগুলোর ওপর মামলা-হামলা অব্যাহত থাকা, তড়িঘড়ি করে তফসিল ঘোষণার বিরুদ্ধে আন্দোলনও অব্যাহত রাখবে। পাশাপাশি নির্বাচনেরও প্রস্তুতি নেবে। ইতিমধ্যে জোটের পক্ষ থেকে সারা দেশে ২০০ আসনে প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত রাখা হয়েছে। জোট নেতারা জানান, বাম গণতান্ত্রিক জোটের লড়াই অব্যাহত থাকবে।  নির্বাচনে  সুষ্ঠু পরিবেশ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। চলমান সংকট থেকে উত্তরণের জন্য সরকারের সঙ্গে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর যে সংলাপ চলছিল, সেই সংলাপের সম্ভাবনাকে একতরফাভাবে তফসিল ঘোষণার মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন নাকচ করে দিয়েছে। সংলাপের প্রক্রিয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত তফসিল ঘোষণা না করতে আমরা নির্বাচন কমিশনকে বলেছিলাম। কিন্তু নির্বাচন কমিশন আমাদের মতামতকে গ্রাহ্য না করে সরকারের ছক মেনেই তফসিল ঘোষণা করেছে। সংলাপের তাৎপর্যকে ধূলিসাৎ করা হয়েছে। একতরফা তফসিল ঘোষণা আসলে একতরফা নির্বাচনের একটা ফাঁদ ছাড়া কিছুই নয়। এছাড়া গায়ের জোরের সংস্কৃতি এবং টাকার জোরে ভোটের খেলা তৈরি হয়েছে তার বিপরীতে গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি গড়ে তোলাটাও দায়িত্ব। আমরা নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষ ভূমিকা চাই, প্রশাসনকে দলীয়করণমুক্ত হিসেবে দেখতে চাই এবং সবার অংশগ্রহণে নির্বাচনের পরিবেশ চাই।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমরা নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত আছি, পাশাপাশি পরিস্থিতি অনুকূল না হলে বয়কটের জন্যও প্রস্তুত আছি। তবে আমরা মনে করি, এবার আর ভোট বর্জনের দিকে যেতে হবে না। আমরা যেমন অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চাই, সরকারও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চায়। ফলে সরকার আমাদের ন্যায্য দাবি পূরণ করে সমঝোতার পথ উন্মুক্ত করবে। সেলিম বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাজনৈতিক সংলাপের মাধ্যমে যে দৃষ্টান্ত তুলে ধরেছেন, তার পরিসমাপ্তি হয়নি। এর মধ্যে তড়িঘড়ি করে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে যেভাবে সময়সূচি নির্ধারণ করা হয়েছে, এতদ্রুত সব কাজ শেষ করা অসম্ভব। এজন্য ঘোষিত তফসিল বাতিল করে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে নতুন তফসিল চাই। সিপিবি সভাপতি বলেন, বল এখন প্রধানমন্ত্রীর কোর্টে। আশা করি, তিনি রাজনৈতিক দলগুলোর দাবি মেনে নিয়ে নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করবেন। বাম নেতাদের অভিযোগ, অপ্রয়োজনীয় দ্রুততার সঙ্গে তড়িঘড়ি করে তফসিল ঘোষণার বিষয়টি খুবই উসকানিমূলক। অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচনের ন্যূনতম অনুকূল পরিবেশ নিশ্চিত না করে এবং বিরোধী দলকে অপ্রস্তুত ও দমন-পীড়নের মধ্যে রেখে তফসিল ঘোষণা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার জন্য মাত্র ১০ দিন সময় বেঁধে দেওয়াও অগ্রহণযোগ্য। মনোনয়নের জন্য প্রয়োজনীয় সময় না দিয়ে, নির্বাচন কমিশন তৃণমূল থেকে দলীয় মনোনয়নের গণতান্ত্রিক চর্চার বিষয়টিও উপেক্ষা করেছে। বড়দিনের মাত্র ২ দিন আগে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণাও উপযুক্ত নয়।

এ ব্যাপারে বাসদ সাধারণ সম্পাদক কমরেড খালেকুজ্জামান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ইসির এই সিদ্ধান্ত খুবই অবিবেচনাপ্রসূত এবং হটকারী। এই অবস্থায় ভোটে যাওয়া না যাওয়ার বিষয়ে সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে দল এবং জোটে আলোচনা চলছে। আমরা পর্যবেক্ষণ করছি। দুয়েকদিনের মধ্যেই সিদ্ধান্ত জানাব।

অন্যদিকে নেতারা জানিয়েছেন, আন্দোলন এবং নির্বাচনে যাওয়া- দুই প্রস্তুতি নিয়েই এগোচ্ছে বাম জোট। নির্বাচনের জন্য সারা দেশে ২০০ আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করেছেন তারা। জানতে চাইলে জোট সমন্বয়ক ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমরা নির্বাচনে যেতে চাই বলেই লড়াই করছি। সংলাপে গিয়েছি। নির্বাচন ব্যবস্থার সংস্কার চেয়ে রাষ্ট্রপতি বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছি। তিনি বলেন, নতুন তফসিল ঘোষণা করা হলেই আমরা নির্বাচনে যাব। আমাদের সেই প্রস্তুতি রয়েছে। প্রার্থীও চূড়ান্ত।  গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আন্দোলন এবং নির্বাচনে অংশগ্রহণ- দুই প্রস্তুতিই আমাদের রয়েছে। পরিস্থিতির উন্নতি হলে নিশ্চয়ই আমরা নির্বাচনে যাব। আন্দোলনের পাশাপাশি সারা দেশে আমাদের প্রার্থীরা নির্বাচনী মাঠেও রয়েছেন।

সর্বশেষ খবর