রবিবার, ১১ নভেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

প্রস্তুত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সর্বোচ্চ সজাগ রাখতে ইতিমধ্যে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর পক্ষ থেকে সরকারের কাছে গোপন রিপোর্ট দাখিল করা হয়েছে

সাখাওয়াত কাওসার

প্রস্তুত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী

জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করতে প্রস্তুত আইন প্রয়োগকারী সংস্থা। নির্বাচন কমিশনের চাহিদা অনুযায়ী বাহিনী ও সংস্থাগুলো নিয়েছে সার্বিক প্রস্তুতি। প্রস্তুতির অংশ হিসেবে বাহিনী ও প্রতিটি সংস্থার শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তারা নিজেদের মধ্যে দফায় দফায় বৈঠকে বসছেন। সূত্র বলছে, সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিতে সব ধরনের আশঙ্কা মাথায় রেখে এবং চুলচেরা বিশ্লেষণ করেই প্রস্তুতি নিয়ে রাখছেন তারা। মাঠপর্যায়ে অস্ত্র, গোলাবারুদসহ আনুষঙ্গিক নিরাপত্তাসামগ্রী মজুদ ইতিমধ্যে নিশ্চিত করা হয়েছে। তবে ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলোর জন্য থাকছে বিশেষ আয়োজন। অন্যদিকে প্রস্তুতির অংশ হিসেবে ঢাকা মহানগর পুলিশের সদস্যরা কীভাবে দায়িত্ব পালন করবেন সে-সংক্রান্ত নির্দেশনাও দিয়ে রেখেছেন ডিএমপি কমিশনার মো. আছাদুজ্জমান মিয়া। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. সাফিনুল ইসলাম বলেন, জাতীয় নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পাদনের জন্য নির্বাচন কমিশন এবং স্থানীয় প্রশাসন যেভাবে চাইবে সেভাবে সহায়তা করা হবে।

একাধিক সূত্র বলছে, ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলোর জন্য থাকবে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর বিশেষ প্রস্তুতি। ওই সব কেন্দ্রে কমপক্ষে ৭ থেকে ১০ জন পুলিশ এবং ১০ জন ব্যাটালিয়ন আনসার দায়িত্ব পালন করবেন। বিজিবি, র‌্যাবের বিশেষ টহলের নজরদারি থাকবে সেসব কেন্দ্রের দিকে। এ ছাড়া ২০১৪-১৫ সালের অভিজ্ঞতা আমলে নিয়ে নাশকতা ঠেকাতে সীমান্তবর্তী এবং জামায়াত-শিবির অধ্যুষিত ৩২ জেলায় চলছে বিশেষ নজরদারি। তৈরি হয়েছে বিশেষ ছক। এরই মধ্যে ওই সব জেলায় দায়িত্ব পালন করা এসপি থেকে ওসি, এমনকি উপপরিদর্শকদের (এসআই) বিষয়ে বিভিন্ন দিক যাচাই-বাছাই করা হয়েছে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন ঘিরে যেসব জেলায় বেশি সহিংসতার ঘটনা ঘটে, সেসব জেলার দিকে থাকবে বিশেষ দৃষ্টি। নির্বাচনের আগের দিন এবং নির্বাচনের দিন প্রতিটি কেন্দ্রের নিরাপত্তা কীভাবে নিশ্চিত হবে, সে ক্ষেত্রে মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের মতামত যাচাই-বাছাই করে দেখছেন সর্বোচ্চ মহল। এ ছাড়া পুলিশ সদর দফতর, ডিএমপি সদর দফতর, থানা এবং পুলিশের বিভিন্ন স্থাপনায় অতিরিক্ত নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। কেউ প্রবেশ করতে চাইলে কয়েকটি নিরাপত্তা-বেষ্টনী পার হয়েই সেখানে প্রবেশ করতে হচ্ছে। র‌্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) কর্নেল জাহাঙ্গীর আলম বলেন, জানমাল ও সরকারি সম্পদ রক্ষায় র‌্যাব সদস্যরা সব সময় নিজেদের সর্বোচ্চটা দিয়ে কাজ করার জন্য প্রস্তুত। সে যে-ই হোক, নাশকতার চেষ্টাকারী কাউকে বরদাশত করা হবে না। নির্বাচনকেন্দ্রিক নিরাপত্তায় অন্যান্য বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করেই কাজ করে যাচ্ছে র‌্যাব। জানা গেছে, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে চলতি নভেম্বর, ডিসেম্বর ও জানুয়ারি তিন মাস দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটতে পারে বলে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা মনে করছেন। এ ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সর্বোচ্চ সজাগ রাখতে ইতিমধ্যে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর পক্ষ থেকে সরকারের কাছে গোপন রিপোর্ট দাখিল করা হয়েছে। নির্বাচনসহ দেশের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে সম্প্রতি পুলিশের আইজি ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের নিয়ে বৈঠক করেন। বৈঠকে জননিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষা এবং নির্বাচন ঘিরে যে কোনো ধরনের উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলায় মাঠপুলিশকে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে নির্দেশনা দেন তিনি। বৈঠকে সব রেঞ্জ ডিআইজি, সব পুলিশ কমিশনার, হাইওয়ে, রেলওয়ে, নৌপুলিশের প্রধানরা উপস্থিত ছিলেন।

সম্প্রতি ডিএমপি কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়া বলেছেন, রায়ট গিয়ার (হেলমেট, বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট, লেগগার্ড) ছাড়া পুলিশের কোনো সদস্য কোনো অবস্থায় ডিউটিতে যাবেন না। একই সঙ্গে ডিউটির সময় মোবাইল ফোনও ব্যবহার করা যাবে না। গোয়েন্দাদের আশঙ্কা, চলতি মাসের শেষের দিকে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠতে পারে। সরকারের সঙ্গে বিরোধী পক্ষের সমঝোতা না হলে রাজনৈতিক সংকট রাজপথের সংঘাতের দিকে ধাবিত হতে পারে। তবে এ বিষয়টি মোকাবেলার জন্য র‌্যাব, পুলিশসহ অন্যান্য বাহিনী প্রস্তুত রয়েছে।

সর্বশেষ খবর