শিরোনাম
বুধবার, ২১ নভেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

চন্দনাইশ অলিরই থাকছে

শফিউল আলম দোলন

চন্দনাইশ অলিরই থাকছে

অবশেষে চট্টগ্রামের ‘চন্দনাইশ’ ছাড়লেন অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী। সরে দাঁড়ালেন চট্টগ্রাম-১৪ আসনের মনোনয়ন দৌড় থেকে। চলমান মনোনয়নযুদ্ধে ২০-দলীয় জোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রতিযোগিতার মুখে জাতীয় সংসদের চট্টগ্রাম-১৪ আসনটি ছেড়ে দিলেন গণফোরামের এই নির্বাহী সভাপতি। তিনি এখন নির্বাচন করতে চান ঢাকা-৬ আসন থেকে। রাজধানীর সূত্রাপুর, গেন্ডারিয়া, ওয়ারী এ তিন থানা মিলে জাতীয় সংসদের ঢাকা-৬ আসনটি গঠিত। এর ফলে ২০-দলীয় জোটের শরিক লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) চেয়ারম্যান কর্নেল (অব.) অলি আহমদেরই থাকছে এ আসনটি। তিনি এ আসন থেকে ছয়বার এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। পাঁচবার বিএনপি আর একবার এলডিপি থেকে। ফলে এ আসনটি বলতে গেলে অলি আহমদের নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য এখন স্থায়ী আসনেই পরিণত হয়ে গেছে বলে মনে করেন ২০-দলীয় জোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের বেশির ভাগ শীর্ষস্থানীয় নেতা।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে সুব্রত চৌধুরী বলেন, ‘কর্নেল (অব.) অলি আহমদ ছাড়তে চাচ্ছেন না আসনটি। কারণ এটি তার পুরনো আসন এবং ছয়বার এমপি হয়েছেন সেখান থেকে। অন্যদিকে সেটা আমার নিজেরও জন্মস্থান। আমারও দাবি রয়েছে। কিন্তু সব দিক চিন্তা করে আমি সেখান থেকে সরে এসে ঢাকা-৬ আসন থেকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। দল থেকে মনোনয়নপত্রও সংগ্রহ করেছি।’

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের এই শীর্ষস্থানীয় নেতা বলেন, ‘আশা করি জাতীয় নির্বাচনের আসন বণ্টন নিয়ে আমাদের মধ্যে কোনো রকমের সমস্যার সৃষ্টি হবে না। কারণ আমরা সারা দেশের সব আসনেই জিততে চাই। আর সে কারণে যে আসনে যার জয়লাভের সম্ভাবনা বেশি সেখানেই তাকে মনোনয়ন দেওয়া হবে। কাজেই আসন বণ্টন নিয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ভিতরে তেমন একটা সমস্যা হবে না বলেই মনে করি।’ তিনি আরও বলেন, ‘মানুষ এবারের নির্বাচনে ভোট দেওয়ার সুযোগ পেলে, অর্থাৎ নির্বাচন সুষ্ঠু হলে সারা দেশে নীরব ভোটবিপ্লব ঘটে যাবে।’

দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক দল বিএনপি থেকে বেরিয়ে ২০০৬ সালের অক্টোবরে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি) গঠন করেছিলেন সাবেক এই যোগাযোগমন্ত্রী ড. কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বীরবিক্রম। নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের পর ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সভাপতি অলিসহ দলটির ৪১ জন নেতা দেশের বিভিন্ন আসন থেকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। তবে ওই নির্বাচনে কর্নেল (অব.) অলি ছাড়া এলডিপির আর কেউ বিজয়ী হতে পারেননি। তবে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট বর্জন করলে সেই জোটের শরিক হিসেবে এলডিপিও তা বর্জন করে।

চন্দনাইশ থেকে এবার ড. কামাল হোসেনের গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন। কিন্তু কর্নেল (অব.) অলি আহমদের কথা চিন্তা করে সরে দাঁড়ান তিনি। তার পরও আসনটিতে এখনো নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না জোট বা ফ্রন্টের প্রার্থিতা নির্ধারণের বিষয়ে। কারণ এ আসনে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হোসেন জিল্লুর রহমানের ভাই কেন্দ্রীয় বিএনপির পরিবার ও পরিকল্পনা বিষয়ক সম্পাদক মহসিন জিল্লুর রহমান এবং চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপি সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেনও মনোনয়নপ্রত্যাশী। তাদের দুজনের পক্ষ থেকেই দলের মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করা হয়েছে। ফলে আপাতদৃষ্টিতে ২০-দলীয় জোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মনোনয়ন পেতে কেউ কাউকে ছাড় দিতে রাজি নয়। কর্নেল (অব.) অলি আহমদ ও অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরীর প্রতিদ্বন্দ্বিতার বিষয়টির আপাত ফয়সালা হলেও বিএনপির দুই নেতা এবং জামায়াতে ইসলামীর দাবির বিষয়গুলোর এখনো কোনো সুরাহা হয়নি। তা ছাড়া জোট কিংবা ফ্রন্ট কোনো ক্ষেত্রেই এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ কিংবা ঘোষণা করা হয়নি।

‘আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে চট্টগ্রাম-১৪ তে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মনোনয়ন নিয়ে কর্নেল (অব.) অলি আহমদ কি অনিশ্চয়তায় রয়েছেন?’ এমন প্রশ্নের জবাবে এলডিপি মহাসচিব ড. রেদোয়ান আহমেদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, তিনি এ আসন থেকে ছয়বার এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। তার নির্বাচনী এলাকায় জোটগতভাবে অন্য কেউ মনোনয়ন দাবি করবে, এটা কল্পনাতীত। কাজেই অনিশ্চয়তার বিষয়টি ঠিক নয়। তা ছাড়া যিনি জিতে আসতে পারবেন তাকেই ২০-দলীয় জোট থেকে মনোনয়ন দেওয়ার সিদ্ধান্ত রয়েছে আমাদের। গত রবিবার আমাদের দল থেকে ৩০ জনকে মনোনয়ন দেওয়ার দাবিসংবলিত তালিকা বিএনপির কাছে দিলেও পরে চূড়ান্তভাবে ১২টি আসনের তালিকা দেওয়া হয়। যারা ইতিপূর্বে বিভিন্ন আসন থেকে নির্বাচন করে এমপিও হয়েছেন বিভিন্ন সময়। এ ছাড়া ২০০১ সালের সংসদ নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়নে কর্নেল (অব.) অলি আহমদ চন্দনাইশ এবং সাতকানিয়া-লোহাগাড়া এ দুটি আসনে নির্বাচন করে চন্দনাইশ থেকে বিজয়ী হলেও সাতকানিয়ায় জামায়াতের প্রার্থীর কাছে হেরে যান।

এবার ২০-দলীয় ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নেতৃবৃন্দ ছাড়াও চন্দনাইশ আসনটি থেকে আওয়ামী লীগের বর্তমান সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমানসহ ২৩ জন তাদের দল থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন।

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর