সোমবার, ২৬ নভেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

দুজন চিঠি পেয়েছেন যেসব আসনে

দুজন চিঠি পেয়েছেন যেসব আসনে
♦  কিশোরগঞ্জ-১: সৈয়দ আশরাফের সঙ্গে মশিউর রহমান হুমায়ূন ♦  লক্ষ্মীপুর-৩: এ কে এম শাহজাহান কামালের সঙ্গে গোলাম ফারুক ♦ জামালপুর-১: আবুল কালাম আজাদের সঙ্গে নূর মোহাম্মদ

 

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীদের চিঠি দেওয়া শুরু করেছে আওয়ামী লীগ। গতকাল বঙ্গবন্ধু এভিনিউ-এ আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে চিঠি বিতরণ শুরু হয় সকাল ১০টায়। এবার মনোনয়ন তালিকায় যারা মনোনয়ন পেয়েছেন তাদের মধ্যে অনেকেই আছেন যারা এবারই প্রথম দলীয় মনোনয়নে নির্বাচন করছেন। আবার কিছু আসনে দুজন সম্ভাব্য প্রার্থীকে মনোনয়নের চিঠি দেওয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এক ব্রিফিংয়ে জানিয়েছেন, যেসব আসনে দুজনকে চিঠি দেওয়া হয়েছে সেগুলোতে পরে একজনকে বাছাই করা হবে।

দুজনকে চিঠি দেওয়া হয়েছে এমন কয়েকটি আসন হলো লক্ষ্মীপুর-৩, কিশোরগঞ্জ-১ ও জামালপুর-১। ঢাকা-৭ আসনে হাজী মো. সেলিম ও আবুল হাসানাত, ঢাকা-৫ আসনে হাবিবুর রহমান মোল্লা ও মনিরুল  ইসলাম। লক্ষ্মীপুর-৩ আসনেও দেওয়া হয়েছে দুজনকে-  মো. গোলাম ফারুক ও এ কে এম শাহজাহান কামাল। জামালপুর-১ আসনে নূর মোহাম্মদ ও বর্তমান এমপি আবুল কালাম আজাদকে মনোনয়নের চিঠি দিয়েছে আওয়ামী লীগ।

এদিকে কিশোরগঞ্জ-১ এ আশরাফের সঙ্গে চিঠি পেয়েছেন মশিউর। অসুস্থ আওয়ামী লীগ নেতা সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের আসনে তাকেসহ অন্যজনকেও নৌকার মনোনয়নের প্রত্যয়নপত্র দিয়েছে আওয়ামী লীগ। দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ছাড়াও কিশোরগঞ্জ-১ আসনে নৌকার মনোনয়ন পেয়েছেন সাবেক ছাত্রনেতা মশিউর রহমান হুমায়ূন। তবে প্রতীক বরাদ্দের আগে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী মনোনয়নের চূড়ান্ত তালিকা নির্বাচন কমিশনে পাঠালে তাদের একজন বাদ পড়বেন। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে ৩০ ডিসেম্বর। এর আগে ২৮ নভেম্বর পর্যন্ত মনোনয়ন দাখিল করা যাবে। ২ ডিসেম্বর বাছাইয়ের পর প্রার্থিতা প্রত্যাহার করা যাবে ৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত। আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জনপ্রশাসনমন্ত্রী আশরাফ ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে বর্তমানে বিদেশে চিকিৎসাধীন। তার রাজনীতিতে ফেরার সম্ভাবনা খুব কম বলে সম্প্রতি তার ভাই শাফায়াতুল ইসলাম জানান। তিনি নিজেও এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছিলেন। তাই জল্পনা আগে থেকেই ছিল এই আসনটি ঘিরে। শেষ পর্যন্ত দুজনকে মনোনয়ন দেওয়ায় এখনো প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। সৈয়দ আশরাফের আসনে কেন দুজনকে রাখা হয়েছে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের সদস্য আবদুর রাজ্জাক বলেন, ‘আমরা সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকেই মনোনয়ন দিতে চাই। কিন্তু তার শারীরিক অবস্থার কথা বিবেচনায় নিয়ে দুজনকে রাখা হয়েছে। শেষ পর্যন্ত কাকে চূড়ান্ত মনোনয়ন দেওয়া হবে জানতে চাইলে কোনো মন্তব্য করতে চাননি সাবেক খাদ্যমন্ত্রী রাজ্জাক।  

জাতীয় চার নেতা ১৯৭৫ সালে কারাগারে নিহত হওয়ার পর সৈয়দ নজরুল ইসলামের ছেলে আশরাফ যুক্তরাজ্যে চলে যান। দীর্ঘদিন পর দেশে ফিরে ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে কিশোরগঞ্জ-১ (সদর ও হোসেনপুর) আসন থেকে নির্বাচন করে তিনি সংসদ সদস্য হন। এরপর ২০০১, ২০০৮ ও ২০১৪ সালে পুনর্নির্বাচিত হন তিনি। ২০০৭ সালে জরুরি অবস্থা জারির পর শেখ হাসিনা কারাবন্দী হলে আওয়ামী লীগের যে কয়জন নেতা দলের হাল ধরেছিলেন, তাদের অন্যতম আশরাফ। পরে দলের সাধারণ সম্পাদকও হয়েছিলেন তিনি। দুই মেয়াদে দায়িত্ব পালনের পর এখন তিনি সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য। ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্ত ৬৮ বছর বয়সী আশরাফ এখন থাইল্যান্ডের বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। অসুস্থতার কারণে গত ১৮ সেপ্টেম্বর সংসদ থেকে ছুটিও নিয়েছেন তিনি। মনোনয়নের চিঠি পাওয়া মশিউর রহমান হুমায়ূন ঢাকা মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক। বর্তমানে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সহ-সম্পাদক পদে আছেন তিনি। চূড়ান্ত মনোনয়ন পেলে এটাই হবে তার প্রথম নির্বাচন।

এদিকে হবিগঞ্জ-৪ অর্থাৎ সিলেট বিভাগের প্রবেশদ্বার মাধবপুর ও চুনারুঘাট উপজেলার সমন্বয়ে গঠিত এ আসনটি পরিচিত আওয়ামী লীগের দুর্গ হিসেবে। আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীদের নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা-সমালোচনা ও চুলচেরা বিশ্লেষণ চলছে আগে থেকেই। হবিগঞ্জ-৪ আসনে কে হবেন নৌকার মাঝি তা নিয়ে এখনো চলছে নানা গুঞ্জন। মানুষের মাঝে একটি গুঞ্জন ছিল হবিগঞ্জ মাধবপুরের কৃতী সন্তান ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সপ্তম গভর্নর বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. মোহাম্মদ ফরাস উদ্দিন হতে পারেন হবিগঞ্জ-৪ আসনের নৌকার মাঝি। তবে এ আসনে দল মনোনয়ন দেওয়ার সময় দুজনকে দিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ফরাস উদ্দিনের সঙ্গে চিঠি দেওয়া হয়েছে মো. মাহবুব আলীকে। হবিগঞ্জ-৪ আসনে মোট ভোটার প্রায় চার লাখ ২২ হাজার ৬২৩ জন। এর মধ্যে চুনারুঘাট উপজেলায় রয়েছে ২ লাখ ৩ হাজার ৩৩১ ভোটার ও মাধবপুর উপজেলায় রয়েছে প্রায় ২ লাখ ১৯ হাজার ২৯২ ভোটার।

অন্যদিকে লক্ষ্মীপুর-৩ আসনে গোলাম ফারুকের সঙ্গে এ কে এম শাহজাহান কামাল চিঠি পেয়েছেন। আসনটি বিএনপির হাতছাড়া হয় ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে। তখন জয়ী হয়ে এ আসনে নৌকার পতাকা ওড়ান এ কে এম শাহজাহান কামাল। গত জানুয়ারিতে তিনি পান বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রীর দায়িত্ব। কিন্তু  আসনটিতে প্রার্থী মনোনয়ন নিয়ে নতুন মেরুকরণ দেখা দিয়েছে। এ অবস্থায় আগামী নির্বাচনে আসনটি ধরে রাখা হবে আওয়ামী লীগের জন্য অনেকটা চ্যালেঞ্জের মতো। বর্তমান সংসদ সদস্য শাহজাহান কামাল বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী হওয়ার পর দলের কিছু নেতা-কর্মী তার দিকে ঝুঁকেছেন। এদের নিয়ে এলাকায় আধিপত্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টাও করে যাচ্ছেন মন্ত্রী। কিন্তু তাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে এলাকায় বেশ তৎপর রয়েছেন গোলাম ফারুকও। এলাকাবাসীর প্রতি সাহায্য-সহযোগিতায় হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন সবসময়। তাই এলাকায় গোলাম ফারুকও শক্ত অবস্থানে রয়েছেন।

দুজনের নমিনেশনে আরও একটি আসন জামালপুর-১। দেওয়ানগঞ্জ-বকশীগঞ্জ নিয়ে গঠিত এ আসনে নূর মোহাম্মদ ও বর্তমান এমপি আবুল কালাম আজাদকে মনোনয়নের চিঠি দিয়েছে আওয়ামী লীগ। দুজনই দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা স্বাক্ষরিত দলীয় মনোনয়নের চিঠি পেয়েছেন। দুজনকে মনোনয়নের চিঠি দেওয়া হলেও দেওয়ানগঞ্জ-বকশীগঞ্জ আসনের আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী ছাড়াও সাধারণ মানুষ একাট্টা নূর মোহাম্মদের পক্ষে। নূর মোহাম্মদকে দলীয় প্রতীক নৌকা দেওয়ার দাবিতে গতকাল এই দুটি উপজেলায় বিভিন্ন স্তরে মিছিল করেছে দলীয় নেতা-কর্মী ও সাধারণ ভোটাররা। নূর মোহাম্মদ মনোনয়ন পাওয়ায় বিভিন্ন স্থানে মিষ্টি বিতরণও করেছেন তারা। দেওয়ানগঞ্জ ও বকশীগঞ্জ এই দুই উপজেলার আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ তৃণমূলের বিভিন্ন নেতা-কর্মী ও সাধারণ ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ আসনে আবুল কালাম আজাদের গ্রহণযোগ্যতা এখন শূন্যের কোঠায়। নানা কারণে আবুল কালাম আজাদ দল ও কর্মী বিচ্ছিন্ন।

সর্বশেষ খবর