রবিবার, ৯ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

তারুণ্যের ভোট উৎসব

আগামী ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এবারের নির্বাচনে সর্বাধিকসংখ্যক তরুণ ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে যাচ্ছেন। বেছে নেবেন তাদের পছন্দের প্রার্থী। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে তরুণরা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। তাদের মতামত জানতে বাংলাদেশ প্রতিদিন আয়োজন করে ‘তারুণ্যের ভোট উৎসব’ শীর্ষক  গোলটেবিল বৈঠক। রাজধানীর একটি হোটেলে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে তরুণ প্রজন্মের ভাবনা কী, তারা কেমন সরকার দেখতে চায়, আগামীর বাংলাদেশ কেমন হওয়া উচিত- এসব বিষয়ে তরুণরা গুরুত্বপূর্ণ মতামত দিয়েছেন। গ্রন্থনা করেছেন-মাহবুব মমতাজী জয়শ্রী ভাদুড়ী এবং ছবি তুলেছেন- লুৎফর রহমান

 

 

অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে তারুণ্যের বিকল্প নেই

নঈম নিজাম, সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রতিদিন

তারুণ্য পরিবর্তনের ধারা তৈরি করে। যে কোনো সাহসী কার্যক্রমে তারা জেগে ওঠে। যেদিকে তারুণ্য এগিয়ে যায় সেদিকেই সাড়া জাগে। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে বড় শক্তি ছিল তারুণ্য। সেই চেতনাকে ধারণ করে বেড়ে উঠছে আমাদের নতুন প্রজন্ম। ১৯৯০-এর গণঅভ্যুত্থানে অগ্রগামী ভূমিকা ছিল তরুণদের। নিত্যনতুন প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে তারা বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিচ্ছে। প্রযুক্তির ছোঁয়া পৌঁছে গেছে বাংলাদেশের প্রত্যন্ত গ্রামগুলোতে। আমার গ্রামের বাড়িতে ওয়াইফাই সেবা পৌঁছে গেছে। দেশে বাস্তবায়ন হচ্ছে পদ্মা সেতু, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, মেট্রোরেলের মতো মেগা প্রকল্প। গ্রামে বসে পুরো বিশ্বকে জানছে। ক্রিকেট, ফুটবল থেকে শুরু করে এভারেস্টকে জয় করছে আমাদের ছেলেমেয়েরা। বিশ্বের এমন কোনো স্থান নেই যেখানে বাংলাদেশের তারুণ্য তাদের মেধার স্বাক্ষর রাখেনি। তবে সাফল্য অর্জনের চেয়ে ধরে রাখা কঠিন। তাই এই উন্নয়নকে ধরে রাখতে হবে। ১৫ বছর আগে বাংলাদেশে উন্নয়নের এই প্রাণচাঞ্চল্য ছিল না। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধরে রাখলে দেশের পিছিয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। নিউইয়র্কের আনাচে কানাচে যখন বাংলা সাইনবোর্ড দেখি তখন চোখ জুড়িয়ে যায়। বাংলাদেশকে উন্নয়নের অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে তারুণ্যের বিকল্প নেই।

 

 

তরুণরা কখনো ভুল সিদ্ধান্ত নেয় না

ইমদাদুল হক মিলন, সম্পাদক, কালের কণ্ঠ

১০ বছর পর্যন্ত শিশুটিকে দেখভাল কর, ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত শাসন কর। এরপরের বছরগুলোতে তার সঙ্গে বন্ধুর মতো আচরণ কর। কিন্তু আমরা তরুণদের সঙ্গে সেই বন্ধুত্বের সম্পর্কটি করি না। আমি তরুণদের মনোজগত নিয়ে কাজ করি, তরুণদের ভাবনাগুলো বুঝার চেষ্টা করি। তরুণদের কথা শুনে মনে হয়েছে আমি অনেক কিছু ভাবি না ওদের মতো করে। তারা কখনো ভুল সিদ্ধান্ত নেয় না। অতীতে যদি তাকাই তাহলে এই তরুণরাই আমাদের ’৫২-র ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে ভাষা দিয়েছে, একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমাদের এ দেশকে দিয়েছে। কিছুদিন আগে স্কুল শিক্ষার্থীরা নিরাপদ সড়কের দাবিতে যে আন্দোলন করেছে আমার ধারণা এখন পর্যন্ত এ ধরনের আন্দোলন পৃথিবীর কোথাও কখনো হয়নি। স্কুল ছাত্ররা ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করছে, লাইসেন্স চেক করছে, লাইসেন্স না থাকায় মন্ত্রীকে নামিয়ে হেঁটে যেতে বাধ্য করেছে এমন চিত্র বাংলাদেশে আমরা কখনো দেখিনি। বঙ্গবন্ধুর এই বাংলাদেশকে আমরা কোথায় নিয়ে যেতে চাই, সে অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

 

 

মিথ্যাবাদীদের প্রত্যাখ্যান করতে হবে

মোহাম্মদ আরাফাত, শিক্ষক ও গবেষক

আসন্ন নির্বাচনে লড়াই চলছে রাজনীতির মাঠে। এখন চলছে সত্য-মিথ্যার লড়াই। মানুষকে বোকা বানানোর খেলা চলছে। মনোনয়ন বাতিল নিয়ে অর্ধসত্য তথ্য বিএনপি উপস্থাপন করছে। ঋণখেলাপি, বিলখেলাপি, হলফনামায় স্বাক্ষর না দিয়ে মনোনয়ন জমা দিলে বাতিল তো হবেই। এমন কোনো আইন নেই যে তারা লঙ্ঘন করছেন না আবার বলছেন আইন মানা হচ্ছে না। প্রোপাগান্ডা ছড়িয়ে ভোটারদের বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। গত ১০ বছরে দেশের উন্নয়ন দৃশ্যমান। এই দৃশ্যমান উন্নয়নকে অদৃশ্য করতে না পেরে এই প্রোপাগান্ডার খেলায় নেমেছে তারা। বিভিন্ন খাতে দুর্নীতির অভিযোগ তুললেও নির্দিষ্ট করে কোনো তথ্য হাজির করতে পারছে না তারা। একটা দল মিথ্যা বলবে, অর্ধসত্য বলবে আর জনগণ তাদের ভোট  দেবে এটা ভাবার সুযোগ নেই। মিথ্যা বলে তরুণ প্রজন্মকে বিভ্রান্ত করা যায় না। তাই এই মিথ্যাবাদীদের প্রত্যাখ্যান করতে হবে। তাদের সত্য খুঁজে দেখতে হবে। রাজনীতিবিদদের দোষ দিলে চলবে না, নাগরিক হিসেবে সত্যের পক্ষে ভোট দিতে হবে। তরুণদেরই দেশকে এগিয়ে নিতে হবে।

 

 

রাজাকাররা লেবাস পাল্টে অন্য পার্টিতে

ব্যারিস্টার তানজীব-উল আলম, আইনজীবী

এবারের নির্বাচনে ৪৫ লাখ নতুন ভোটার যোগ হয়েছে। তরুণ এই ভোটারদের অভিনন্দন। এরা প্রথমবারের মতো ভোট দেওয়ার সুযোগ পাবে। ভোট মত প্রকাশ্যের একটা মাধ্যম। ভোট দেওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের মধ্যে অনেক বিষয় কাজ করে। যারা স্বাধীনতার বিরুদ্ধে ছিল, মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে ছিল, যারা এদেশের মানুষের সঙ্গে বেইমানি করেছে তাদের বিচার হয়েছে। যদিও এ বিচার এ প্রজন্মের তরুণদের কাছে স্বাভাবিক মনে হয়েছে। কিন্তু এই বিচার নিশ্চিত করা স্বাভাবিক ছিল না। অনেক সংগ্রামে বিচারটি হয়েছে। তার গুরুত্ব তরুণদের বুঝতে হবে। আমরা বাংলাদেশে ডিজিটাল সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছি। অথচ এই সুযোগ অনেক আগে ভোগ করতে পারতাম যদি সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারতাম। তরুণ প্রজন্ম চাইবে না একই ধরনের ভুল করতে। তাদের সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া দরকার। তরুণদের বিভিন্ন ধরণের রাজনৈতিক স্নোতে ভেসে যাওয়া বন্ধ করতে হবে। যুদ্ধাপরাধী রাজাকাররা লেবাস পাল্টে অন্য পার্টিতে। বিএনপিকে আগে মুক্তিযোদ্ধাদের দল বলা হতো, এখন সেই পার্টিতে যুদ্ধাপরাধীরা।

 

 

পাশের দেশের চেয়ে আমাদের উন্নয়নে বিশ্বের মানুষ বিস্মিত

আমজাদ হোসেন, পরিচালক, এফবিসিসিআই

২০০১ সালে আমি প্রথম ভোটার হই। উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে শুনি আমার ভোট অন্য কেউ দিয়ে দিয়েছে। শিক্ষিত তরুণরা বিদেশে পাড়ি জমাত সোনালি ভবিষ্যতের হাতছানিতে। এখন আমাদের দেশে বিদেশিরা এসে কাজ করছে। তরুণরা এখন পড়াশোনার জন্য দেশের বাইরে গেলেও আবার ফিরে আসছে দেশে। কারণ বাংলাদেশে রয়েছে অপার সম্ভাবনা। তরুণরা মেধা ও পরিশ্রমকে বিশ্বাস করে। দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি এগিয়ে যাচ্ছে। পাশের দেশের চেয়ে আমাদের উন্নয়নে বিশ্বের মানুষ বিস্মিত। এশিয়াতে আমরা ১২তম অবস্থানে আছি। এই ধারা অব্যাহত থাকলে আমরা সপ্তম অবস্থানে চলে আসব। ব্যবসা-বাণিজ্যে দেশ ভালো অবস্থানে রয়েছে। বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহ দেখাচ্ছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে শিল্প ও ব্যবসা বাণিজ্য সোনালি সময় পার করছে।

 

 

এখনো আমাদের তরুণরা অবহেলিত

মাহফুজ আহমেদ, অভিনেতা

যদিও আমি বয়সে তরুণ না, তবুও তরুণদের সঙ্গে থাকি। কিন্তু আমি মনেপ্রাণে তরুণ। আমি বুঝি ওরা কী চায়। অথচ আমাদের এখানে তরুণদের অবহেলা করা হয়। ইতিহাস পড়ে জেনেছি- যারা মুক্তিযোদ্ধা তারা আমাদের মতো সাধারণ নয়। তারা আমাদের থেকে বাড়তি মর্যাদা পাওয়ার যোগ্য। তবে তরুণদের বিভিন্ন চাওয়া-পাওয়ার কথা শুনে আমি মুগ্ধ। তারা যে ভঙ্গিতে কথা বলেছে- সেটি আমাদের দরকার। আমি সবসময় দেখেছি তরুণদের অবহেলা করা হয়েছে। এ থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে গিয়ে আমি জানতে পারলাম তিনি আমার নাটক দেখেন এবং আমার প্রশংসাও করেছেন। তার কাছ থেকে পাওয়া সেটিই আমার বড় পুরস্কার, বড় স্বপ্ন।

 

 

চাই দেশকে সম্মানের আসনে নেওয়ার রাজনীতি

রিয়াজ, অভিনেতা

তরুণ প্রজন্মের কথা শুনতে হবে। তারা আমাদের যে কারও চেয়ে এখন অনেক প্রজ্ঞার অধিকারী। তাদের দীপ্ততায় পরাজয় আজ আশায় বুক বাঁধে। আজকের তরুণ আগামীর বাংলাদেশ। বিজয়ের এই মাসে বঙ্গবন্ধুর কথা স্মরণ করে আমাদের স্লোগান হোক-তুমি, আমি, আমরা সবাই বাংলাদেশকে ভালোবাসি। তাদের প্রতি আহ্বান থাকবে-মানুষ হওয়ার লক্ষ্যে দেশের জন্য কাজ করতে হবে। তবে তরুণরা অনেকেই রাজনীতি পছন্দ করে না। তাদের সেই রাজনীতি করার কথা বলব যে রাজনীতি ১৮ কোটি মানুষের ভাগ্যবদলের কথা বলবে, এগিয়ে নেওয়ার কথা বলবে, বাংলাদেশকে সম্মানের আসনে নিয়ে যাবে। তোমাদের একটি ভোট বদলে দিতে পারে এই বাংলাদেশকে। আগামী ৩০ ডিসেম্বর যাকে খুশি ভোট দেওয়ার আহ্বান রইল।

 

 

 

 

তরুণদের সিদ্ধান্ত উন্নয়নের ধারাকে এগিয়ে নেবে

আজিজুল হাকিমঅভিনেতা

তরুণ প্রজন্ম সব সময় সামনের দিকে এগিয়ে যায়। ভোটের মধ্য দিয়ে সবাই উন্নয়নকে এগিয়ে নেবে এমন সরকার দেখতে চায়। তরুণরা  ১৯৭১ সালের  ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধে তাদের বুকের রক্তে আজ এই স্বাধীন বাংলাদেশ। এরপর বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার তারুণ্য দীপ্ত নেতৃত্বে উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় আজকের বাংলাদেশ। যারা প্রগতি ও প্রবৃদ্ধির কথা চিন্তা করছে তারা শেখ হাসিনার সঙ্গে থাকছে। দেশকে পুঁথিগত নয়, বাস্তব উন্নয়নের ধারায় তিনি নিয়ে এসেছেন। তাই নতুন ভোটারদের দেশকে এগিয়ে নিতে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে। একটি ভুল সিদ্ধান্তে থমকে যেতে পারে দেশের উন্নয়নের বিজয় নিশান। ভুল সিদ্ধান্ত নিলে সাফল্যের অগ্রযাত্রায় তৈরি হবে প্রতিবন্ধকতা।

 

 

 

রাজাকারদের ভোট দেওয়া যাবে না

শমী কায়সার, অভিনেত্রী

গত ১০ বছরে আমরা আমাদের আত্মসম্মানবোধ ফিরে পেয়েছি। এদেশের এখনকার তরুণরা আত্মসম্মানের চিত্র দেখেছে। আজকে একটি প্লাটফর্ম তৈরি হয়েছে। আর এই দেশকে নিয়ে স্বপ্ন দেখিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এদেশের তরুণরাই ডিজিটাল বাংলাদেশের আলোকবর্তিকা। পদ্মা সেতুসহ যত অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয়েছে বা হচ্ছে এগুলো আমাদের দেশের আত্মসম্মানবোধকে বাড়িয়ে দিয়েছে। একই সঙ্গে এক ধরনের অভাবনীয় পরিবর্তন ঘটেছে তরুণদের মধ্যে। আগে ইতিহাস বিকৃতি হয়েছে, আমাদের কাছে মিথ্যা প্রচার করা হয়েছে। মিথ্যা দিয়ে ছেলে ভুলানোর কথা বলা হতো। কিন্তু এই তরুণরা এই সময়ে এসে সত্য দেখেছে। তারা স্বপ্ন দেখে, এখন তারা স্বপ্নের দোরগড়ায়।

 

 

 

 

তরুণদের কাছে যেতে হবে

ডা. নুজহাত চৌধুরীশিক্ষক

আসন্ন নির্বাচনে বিপুল সংখ্যক তরুণ ভোটার রয়েছে। এই তারুণ্য ’৭১ দেখেনি ৭৫ও দেখেনি। তারা বইতে পড়েছে শুনেছে। এই শোকগাথা তাদের হৃদয়ে গেঁথে দিতে হবে। তারা দেখেনি পাকিস্তানিদের লুটপাট হত্যাকা-। আবার এই তরুণরা  দেখেছে এমন একজন নেত্রী যিনি আঙ্গুল উঁচিয়ে বিদেশিদের সামনে বলেন আমাদের সেতু আমরা করব। এই তরুণরা সেই স্বপ্ন দেখেছে। তারা আমার মতো বাবাকে রক্তের মধ্যে পড়ে থাকতে দেখেনি। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে তরুণদের বুকে জাগ্রত করতে হবে। অবাধ তথ্য প্রবাহের মানুষ এই তারুণ্য। জানালা খোলা থাকলে আলোর সঙ্গে ধুলাও থাকে। এই প্রজন্ম বঙ্গবন্ধুকে জানে। জয় বাংলা স্লোগান তারা কণ্ঠে ধারণ করে। এই প্রজন্ম যুক্তি বোঝে, কথা শোনে।

 

 

 

তারুণ্য জেগে উঠলে এগিয়ে যাবে দেশ

নুসরাত ইমরোজ তিশা, অভিনেত্রী

বিগত কয়েক বছরে আমরা অনেক উন্নয়ন দেখেছি। উন্নতির শেষ নেই। উন্নয়ন যা হচ্ছে সেটা শুধু আমাদের জন্য নয়, এটা থেকে যাবে নতুন প্রজন্মের জন্যও। তরুণরা দেশের ভবিষ্যৎ। আমাদের মতো তরুণরা যত সক্রিয় হবে দেশ ততটাই এগিয়ে যাবে। একটি ভোট পাল্টে দিতে পারে নির্বাচনী হিসাব-নিকাশ। তাই ভোট নষ্ট না করে বুঝে শুনে দিতে হবে। দেশকে নিজের ভাবতে হবে। দেশের উন্নতি হলে, দেশ এগিয়ে গেলে এগিয়ে যাব আমরাও। এখন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গেলে যখন দেখি আমার দেশের কেউ সাফল্যের সঙ্গে কাজ করছে তখন অন্যরকম ভালোলাগা কাজ করে। খেলা, সংস্কৃতি, সিনেমাসহ সব কিছুতে এগিয়ে যাচ্ছে দেশ। এ উন্নয়নের হাতিয়ার তারুণ্য। তারুণ্য জেগে উঠলেই এগিয়ে যাবে আমাদের বাংলাদেশ।

 

 

 

 

সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার এটাই সময়

সাথীরা জাকির জেসি, ক্রিকেটার

যখনই খেলাধুলায় আমরা ভালো কিছু করেছি তখনই প্রধানমন্ত্রী আমাদের ডেকেছেন। আমাদের কথা শুনেছেন বন্ধুর মতো। আমাদের খুশিতে হেসেছেন। এভাবে মমতা নিয়ে কোনো প্রধানমন্ত্রী কখনো তরুণদের সঙ্গে মেশেননি। তরুণরা চোখে দেখে তারপর বিশ্বাস করে। গত ১৫ নভেম্বর তিনি ১৫০ জন তরুণকে তার বাসভবনে ডেকে অনেক প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন। যুদ্ধ একবারের না সবসময়ই করতে হয়। দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নামতে হবে। আগে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গেলে ফ্লাইওভার, মেট্রোরেল দেখতাম। এখন সেগুলোর সুবিধা আমরা ভোগ করছি। আমরা নিজেরাই অনেক সময় উন্নয়নে সহযোগিতা করতে চাই না। উন্নয়নকে এগিয়ে নিতে আমাদের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার এটাই সময়।

 

 

উন্নয়নের দিকে তাকিয়ে ভোট দিতে হবে

সাবরিনা পড়শী, সংগীতশিল্পী

এটা সত্য যে- কোথাও কোনো ঝামেলা হলে কিংবা সেখানে যদি তরুণরা থাকে তাহলে সেই ঘটনার দায়ভার তরুণদের ওপর চাপানোর চেষ্টা করা হয়। বলা হয়- এই তরুণরাই ঝামেলা করছে সবখানে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে তরুণদের বোঝানোর চেষ্টা করা হয়, কিন্তু ওইভাবে বোঝানো হয় না। দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এই এগিয়ে যাওয়ার সর্বক্ষেত্রে সম্পৃক্ত আমরাই। যদিও আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কাজ করে চলেছেন তরুণদের জন্য। এজন্য আমরা ওনাকে অনেক ভালোবাসি। আর তরুণদের মাঝে কোনো বিষয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্ব থাকলে তা দূর করতে হবে নেতৃত্বস্থানীয়দেরই। তরুণদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়াতে হবে।  যারা আমাদের ভালো রাখতে পারবেন, আমরা তাদের বেছে নিতে চাই। উন্নয়নের দিকে তাকিয়ে ভোট দিতে চাই।

 

 

মার্কা নয় কাজ দেখে ভোট দিতে হবে

এম মুহিত, দুবার এভারেস্ট জয়ী

শৈশবে বাবা-মা আমাদের ভালো অনুশীলনগুলো গড়ে তোলার চেষ্টা করে। ভালো আচরণ অনুশীলনকারী ভদ্র ব্যক্তি দুর্নীতি-স্বজনপ্রীতিতে জড়াবে না। যার অনুশীলন খারাপ সে খারাপ কাজে জড়াবেই। তাকে যতই বোঝানো হোক লাভ হবে না। এরকম দুর্নীতিবাজ মানুষকে ভোট দিলে ভালো কিছু আশা করা যায় না। ভদ্রতা একদিনে শেখার বিষয় নয়। ‘নিজে বাঁচলে বাপের নাম’ এগুলো কোনো সভ্য সমাজের কথা হতে পারে না। অন্যের কথা চিন্তা করতে হবে। আমার কোনো কাজে যেন কারও ক্ষতি না হয় সেটা আগে দেখতে হবে। মাদকমুক্ত, নারীনির্যাতন বিরোধী সৎ নেতাকে ভোট দিতে হবে। একটা ভোট অনেক কিছু বদলে দিতে পারে। মার্কা নয়, পরিচ্ছন্ন মানসিকতা এবং কাজ দেখে ভোট দিতে হবে।

 

 

তরুণদের সঠিক নির্দেশনা প্রয়োজন

তনিমা আফরোজা, শিক্ষার্থী

বলা হয়ে থাকে আজকের তরুণ আগামীর বাংলাদেশ। এই তরুণদের সঠিক পথে নিয়ে যেতে হলে মটিভেট করতে হবে, উৎসাহ দিতে হবে। সঠিক দিক-নির্দেশনা পেতে আমাদের আইডল দরকার। তরুণদের যে কেউ তার বন্ধুর মাধ্যমেই জঙ্গিবাদে জড়াতে পারে, আবার বন্ধুই পারে তাকে জঙ্গিবাদ থেকে ফিরিয়ে আনতে। কারণ একজন তরুণ তার বন্ধুর কাছে যেসব কথা বলবে, সে তার বাবা-মার কাছে সেসব কথাবার্তা বলবে না। ১৯৫২ সালের মহান ভাষা আন্দোলন, গণঅভ্যুত্থান ও মুক্তিযুদ্ধসহ সবখানে তরুণদের অংশগ্রহণই ছিল বেশি। এ ছাড়া এবারের নির্বাচনে তরুণ ভোটারেরও সংখ্যা বেশি। তরুণদের যোগ্য ব্যক্তিকে বেছে নিতে হবে। যোগ্য নেতৃত্ব দেশকে এগিয়ে নিতে পারে। আমাদের একটু সাহায্য করলে আমরা নিজেরা অনেক দূর এগিয়ে যেতে পারব। আমরা বাংলাদেশকে নিয়ে যে স্বপ্ন দেখি সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য আমাদের সঠিক দিক-নির্দেশনা দরকার।

 

 

ভুল সিদ্ধান্তে দেশের উন্নয়ন থেমে যেতে পারে

মিশু চৌধুরী, ক্রিকেটার

তরুণ ভোটারদের দেশের উন্নয়ন নিয়ে ভাবতে হবে। শিল্প, সংস্কৃতি, খেলাধুলা, ব্যবসা-বাণিজ্য সব ক্ষেত্রেই উন্নয়নের ধারাবাহিকতা দেখতে হবে। ভুল সিদ্ধান্তে দেশের উন্নয়ন থেমে যেতে পারে। সরকার কী দিয়েছে এগুলো ভাবার এখনই সময়। একটি ভোট ফলাফলকে পাল্টে দিতে পারে। নারী ক্ষমতায়নে ঈর্ষণীয় সাফল্য অর্জন করেছে বাংলাদেশ। পৃথিবীর সবখানে উড়ছে লাল সবুজের পতাকা। তরুণা তাদের মননশীলতাকে কাজে লাগাবে নেতা বাছাই করতে। দেশের ভালো মন্দ নির্ভর করছে এই নির্বাচনের ওপর। রাজনৈতিক দলগুলোকে তরুণদের সমস্যাগুলো সমাধান করতে হবে। এর সঙ্গে তাদের সম্ভাবনার জায়গাকে কাজে লাগাতে হবে। প্রতিযোগিতাপূর্ণ বিশ্বে পিছিয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।

 

 

তরুণরা মুক্তিযুদ্ধ চেতনাবিরোধী কাউকে চায় না

অধ্যাপক . জিনাত হুদা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

তরুণরাই আমাদের শক্তি। আমরা একাত্তরের কথা বারবার বলেছি। অজস্র্র শহীদের রক্তে গড়া এ বাংলাদেশকে কারা কতদূর এগিয়ে নিয়ে যাবে তরুণরা এমন প্রশ্ন নিয়ে এসেছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে এই তরুণদের বিশাল আন্দোলন করতে দেখেছি। তরুণরা এমন কাউকে ক্ষমতায় আনবে না যারা যুদ্ধাপরাধীদের সঙ্গে হাত মেলায়। আজকের গ্লোবালাইজেশনের এই যুগে দেশ ডিজিটালাইজড হয়েছে। গ্রামের প্রতিটি আনাচে-কানাচে প্রযুক্তির ছোঁয়া। আমাদের প্রযুক্তিগত উন্নয়ন ছাড়াও পদ্মা সেতুসহ অনেক অবকাঠামোগত উন্নয়ন হচ্ছে। তবে এই তরুণরা বাংলাদেশে দুর্নীতিমুক্ত এবং স্বজনপ্রীতিমুক্ত রাজনীতি দেখতে চায়। বাংলাদেশকে বলা হচ্ছে এশিয়ার ইমাজিং টাইগার। এখন ক্রিকেটেও আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। এটাও তারুণ্যেরই জয়। এদেশে কারিগরি শিক্ষাকে যথাযথভাবে কাজে লাগালে আরও এগিয়ে যাবে। যে শক্তি মুক্তিযুদ্ধ, এসডিজি ও টেকসই উন্নয়নের কথা বলবে, তরুণরা সেই শক্তির পক্ষ নেবে। তরুণরা বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশের সম্মান ও মর্যাদা বাড়াবে।

 

 

তরুণরা জীবন ভবিষ্যতের  নিশ্চিয়তা চায়

অধ্যাপক . শফিউল আলম ভূইয়া, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

আমি সবসময় তরুণদের মাঝেই থাকি। আলাপ-আলোচনায় তাদের মনোভাব বুঝার চেষ্টা করেছি। তাদের সঙ্গে কথা বলে যা জেনেছি- তারা মূলত চান জীবনের নিশ্চয়তা, চাকরির নিশ্চিয়তা পেতে। তাদের এ চাওয়া কীভাবে বাস্তবায়ন করা যায় তা গত ১০ বছরে আইসিটি খাতে তাকালে বুঝা যাবে। এখন আমাদের দেশে চীন ও জাপানের বিশাল একটি বিনিয়োগ অপেক্ষা করছে। এই বিনিয়োগ হলে  অনেকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে। বিনিয়োগটির অপেক্ষায় থাকার মূল কারণ আসন্ন নির্বাচন। কেননা আমাদের দেশে ক্ষমতার পরিবর্তনের সঙ্গে নীতিগত পরিবর্তন হয়। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ হচ্ছে। এটি সম্পন্ন হলে দক্ষিণাঞ্চলে ব্যাপক শিল্পায়ন ঘটবে। আজকের পৃথিবী কোনদিকে যাচ্ছে সেদিকে লক্ষ্য রেখে আমাদের দেশে বিজ্ঞানভিত্তিক পড়াশোনার বিকাশ ঘটানো হচ্ছে। এখন আমাদের শিক্ষার হার প্রায় ৭৩ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। ফলে আমাদের উন্নয়নের বড় এক প্রণোদনা তৈরি হয়েছে। বেশির ভাগ তরুণ ইন্টারনেটের সঙ্গে সম্পৃক্ত। তারা জানে- সারা পৃথিবী কোন দিকে যাচ্ছে।

 

 

উন্নয়নের শত্রুকে চিহ্নিত করা জরুরি

এস এম শামীম রেজা, শিক্ষক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

এবারের নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলোতে মনোনয়ন বিতরণে তরুণদের সংখ্যা বেশি হওয়া দরকার ছিল। এই তরুণদের নিয়ে আমাদের অনেক বেশি উদ্যোক্তা তৈরি করা দরকার। তরুণদের মাঝ থেকেই আমাদের শিক্ষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী এবং বিজ্ঞানী বানাতে হবে। এসব ক্ষেত্রে তাদের উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। আমরা দেশের বাইরে শ্রমিক পাঠাই, সে জায়গাগুলোতে আমরা শিক্ষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী এবং বিজ্ঞানী পাঠাতে চাই। তবে প্রযুক্তিতে আমরা তরুণদের উদ্যোক্তা হতে দেখছি। এক্ষেত্রে বিনিয়োগও বেড়েছে। এবারের ভোট উৎসবে তরুণদের শত্রু-মিত্র চিহ্নিত করতে হবে। উন্নয়নে শত্রু থাকে, দেশ-বিদেশে শত্রু থাকে। বিশেষ করে উন্নয়নের শত্রুদের চিহ্নিত করতে হবে। এছাড়া কাকে ভোট দিলে তরুণদের জন্য উন্নয়ন হয় এমন খাতগুলোতে কত বরাদ্দ পাওয়া যাবে সেই ব্যক্তিকে চিহ্নিত করতে হবে। মৌলিক জায়গাগুলোতে যারা ঠিক থাকবে, যারা উন্নয়ন করবে তাদের সহযোগিতা করতে হবে।

 

 

তৃণমূলে তারুণ্যের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে

ব্যারিস্টার তৌফিকুর রহমান, আইনজীবী

তারুণ্যের অগ্রগামিতায় এগিয়ে যাচ্ছে আমাদের বাংলাদেশ। শুধু জাতীয় সংসদ নির্বাচন নয়, ইউনিয়ন, উপজেলা নির্বাচনেও তারুণ্যের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। নারী নেতৃত্ব তৈরি করতে হবে। তরুণদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে এগিয়ে নিতে হবে। বিএনপি-জামায়াত দেশকে নেতৃত্বশূন্য করতে চায়। তারা কখনোই চায় না দেশ আত্মমর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত হোক। আমাদের নেতা চিনতে হবে। আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব দেবেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা কিন্তু বিএনপির নেতৃত্ব স্পষ্ট নয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সবসময় প্রচলিত ধারায় বিচার চেয়েছেন কিন্তু বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া বিচার চেয়েছেন স্পেশাল কোর্টে। প্রচলিত আইন অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রীর মামলার রায়ও হয়েছে। তরুণদের সঠিক ইতিহাস জানতে হবে। সেই মোতাবেক মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষে নিজেদের সজাগ ও সুদৃঢ় অবস্থানের জানান দিয়ে নতুন বাংলাদেশ গড়তে হবে।

 

আলোচক

অধ্যাপক ড. জিনাত হুদা

সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

অধ্যাপক ড. শফিউল আলম ভূঁইয়া

টেলিভিশন, চলচ্চিত্র ও ফটোগ্রাফি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

এস এম শামীম রেজা

সহযোগী অধ্যাপক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, ঢাবি

মোহাম্মদ এ আরাফাত, শিক্ষক ও গবেষক

মাহফুজ আহমেদ, অভিনেতা

আজিজুল হাকিম, অভিনেতা

রিয়াজ, অভিনেতা                                           

শমী কায়সার, অভিনেত্রী

আমজাদ হোসেন, পরিচালক, এফবিসিসিআই

নুসরাত ইমরোজ তিশা, অভিনেত্রী

ব্যারিস্টার তানজীব-উল আলম

আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট

ব্যারিস্টার তৌফিকুর রহমান, আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট         

সাবরিনা পড়শী, সংগীতশিল্পী   

তনিমা আফরোজা, শিক্ষার্থী     

সাথীরা জাকির জেসি, ক্রিকেটার

মিশু চৌধুরী, ক্রিকেটার

ডা. নুজহাত চৌধুরী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় এম এ মুহিত, দুবার এভারেস্ট জয়ী বাংলাদেশি

ইমদাদুল হক মিলন, সম্পাদক, কালের কণ্ঠ

নঈম নিজাম, সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রতিদিন

 

সঞ্চালনা

সামিয়া রহমান, শিক্ষক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর