ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

৪০ হাজার তালবীজ রোপণ, গৌতম পাচ্ছেন কৃষি পুরস্কার
নওগাঁ প্রতিনিধি
নিজের লাগানো তালগাছের সাথে গৌতম।

নওগাঁর পোরশার মশিদপুর ইউনিয়নের গ্রামীণ রাস্তায় গেলে চোখে পড়বে ছোট-বড় সারি সারি তাল গাছ। গাছগুলো লাগিয়েছেন গৌতম কুমার সাহা। গত প্রায় এক যুগ ধরে বিনা পয়সায় তাল বীজগুলো রোপণ করে চলেছেন তিনি।

এবার সেই অবদানের স্বীকৃতি মিলছে, প্রকৃতি সুরক্ষায় অনন্য অবদানের জন্য বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কার-১৪২৫ পাচ্ছেন গৌতম। আগামী ৩ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পুরস্কার গ্রহণ করবেন তিনি। গৌতমের বাড়ি পোরশা উপজেলার মশিদপুর ইউনিয়নের ভবানীপুর গ্রামে।

গৌতম কুমার সাহা জানান, স্ত্রী ও এক ছেলেকে নিয়ে তার ছোট সংসার। তিনি একজন ক্ষুদ্র কৃষক। তারা দুই ভাই ও চার বোন। ১৫ বছর বয়সে বাবা মারা যাওয়ার পর সংসারের হাল ধরেন। মাটি ও খড়ের চালার জরাজীর্ণ বাড়িতে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বসবাস করেন।

কীভাবে এই তালগাছ লাগানোর বুদ্ধি মাথায় এলো। গৌতম জানালেন, বাজারে চায়ের দোকানে চা খেতে খেতে টেলিভিশনে কোনো এক অনুষ্ঠানে দেখেন তাল গাছ মানুষকে বজ্রপাত থেকে রক্ষা করে ও মাটির ক্ষয়রোধ করে। এরপর থেকে প্রতি বছর ভাদ্র মাসে তাল পাকার সময় বাড়িতে তালের আঁটি (তালবীজ) জড়ো হলে কিংবা গ্রামের কারও বাড়ির আশেপাশে আঁটি পড়ে থাকতে দেখলে সেগুলো সংগ্রহ করেন। পরে সেগুলো ব্যাগে ভরে সড়কের পাশে রোপণ করেন। ২০১২ সালের দিকে নিজের বাড়ির পাশ দিয়ে যাওয়া রাস্তা শিশা-দেউলিয়া সড়কের কোলাপাড়া থেকে ভবানীপুর পর্যন্ত দেড় কিলোমিটার জুড়ে প্রায় এক হাজার তালবীজ রোপণ করেন। শুরুর দিকে পরিবারের লোকজনের কাছ থেকেও তেমন উৎসাহ পাননি। তবে কিছু দিন পরে তার লাগানো তাল বীজগুলো মাটি খুঁড়ে গাছ বড় হতে শুরু করলে তার মনে একটি ভালো লাগার অনুভূতি কাজ করে। সেগুলো গাছ হয়ে বড় হয়ে উঠতে থাকলে উৎসাহ আরও বেড়ে যায়। পরবর্তীতে ২০১৩ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত ৭ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের শিশা-দেউলিয়া সড়কের দুই ধারে বাকি অংশ জুড়ে তালবীজ রোপণ করেন। শিশা-দেউলিয়া সড়কের ৭ কিলোমিটার অংশ ছাড়াও এ পর্যন্ত আরও দুটি সড়কের দুই পাশে ১৫ কিলোমিটার জুড়ে তালবীজ রোপণ করেছেন। এর মধ্যে মহাদেবপুর-পোরশা সড়কের মাটিয়ান্দর সেতু থেকে করবোলা পর্যন্ত ১০ কিলোমিটার অংশ ও শিশা-মোল্লাপাড়া সড়কের ৫ কিলোমিটার অংশ জুড়ে তালবীজ রোপন করেছেন।

গৌতমের দাবি, এখন পর্যন্ত তিনি ৪০ হাজারেরও বেশি তালবীজ রোপণ করেছেন। অনেক গাছ উপড়ে পড়েছে, নয়তো মরে গেছে। তবে বেঁচে যাওয়া গাছের সংখ্যা ৩২ হাজারেরও বেশি। এক সময় চার আঁটিতে এক টাকা করে দেবেন ঘোষণা দেওয়ার পর গ্রামের শিশুরা তাল কুঁড়ে এনে তার কাছে বিক্রি করতেন।

নিজের লাগানো তালগাছ দেখিয়ে গৌতম কুমার বলেন, ‘এসব তাল গাছ লাগিয়ে ব্যক্তিগতভাবে লাভবান হওয়ার কোনো ইচ্ছে আমার নেই। গত বছর মশিদপুর ইউনিয়নের শরিয়ালা গ্রামে বজ্রপাতে তিন কৃষকের মৃত্যু হয়। বর্ষায় ফাঁকা মাঠে বজ্রপাত থেকে কৃষককে রক্ষা করতে পারবে এ গাছ। কৃষকেরা মাঠে কাজ করতে এসে যাতে বজ্রপাত থেকে রক্ষা পায়, প্রচণ্ড রোদে গাছের নিচে দাঁড়িয়ে আরাম করতে পারে এটাই আমার চাওয়া।’ 

পোরশা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাহ মঞ্জুর মোর্শেদ চৌধুরী বলেন, প্রকৃতি রক্ষায় নিঃস্বার্থভাবে তিনি যে কাজ করে যাচ্ছেন তা সত্যিই নজিরবিহীন দৃষ্টান্ত।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সঞ্জয় কুমার সরকার বলেন, খাস জমি জায়গায় তাল গাছ রোপণ করে প্রকৃতি সুরক্ষা ও বজ্রপাত নিরোধে ভূমিকা রাখায় কৃষি পদকের জন্য সাবেক উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা গৌতম কুমার সাহার তথ্য কৃষি মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছিলেন। ওই তথ্যের ভিত্তিতে তিনি ‘বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কার ১৪২৫’ এর জন্য মনোনীত হয়েছেন। 

 

বিডি প্রতিদিন/নাজমুল



এই পাতার আরো খবর