ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে সম্মিলিত প্রয়াসের আহ্বান
নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
প্রতীকী ছবি

শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে আইন প্রয়োগের পাশাপাশি জনসচেতনতা জরুরি। দূষণ নিয়ন্ত্রণে যার যার অবস্থান থেকে দায়িত্ব পালন করলে এ থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব। এজন্য সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করতে হবে। সকলের সম্মিলিত প্রয়াসের মাধ্যমেই শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণে সফলতা আনা সম্ভব।

শনিবার দুপুরে পরিবেশ অধিদপ্তর কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন 'শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে সমন্বিত ও অংশীদারিত্বমূলক প্রকল্প'-এর আওতায় সাংবাদিক এবং পরিবহন চালক-শ্রমিকদের শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে সচেতনতামূলক প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে বক্তারা এসব কথা বলেন। 

রাজশাহীর টিচার্স ট্রেনিং কলেজের মিলনায়তনে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

অনুষ্ঠানের শুরুতে ডিজিটাল প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে শব্দদূষণের ক্ষতিকারক দিক, শব্দদূষণের কারণ, উচ্চ শব্দের হর্ন, শব্দ দূষণের আন্তর্জাতিক মানদণ্ড, এলাকাভিত্তিক নিরব এলাকা শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণের বিদ্যমান আইন ও বিধিমালা ও দূষণ নিয়ন্ত্রণের উপায় সম্পর্কে উপস্থিত সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়।

অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, নগরজীবনে স্বাস্থ্যঝুঁকির একটি অন্যতম কারণ শব্দদূষণ। মানুষ ও প্রাণির শ্রবণসীমা অতিক্রম করে এবং শ্রবণশক্তিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে, সেটাই শব্দদূষণ। ২০ ডেসিবেল শব্দের মাত্রা হলেই আমরা সেটি শুনতে পাই। এর কম হলে পারি না। ২০ থেকে ২০০০০ হার্জ পর্যন্ত শব্দ আমরা শুনতে পারব। এর চেয়ে বেশি হলে আমাদের শ্রবণশক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

নির্মাণকাজ, যানবাহনের সংখ্যা বৃদ্ধি ইত্যাদি কারণে এ সমস্যা আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। শব্দদূষণের ফলে অনেকেই শ্রবণ শক্তি হারিয়ে ফেলছেন। যারা চালক বা বাহিরে কাজ করেন তারা এ শব্দদূষণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হন। এছাড়া শব্দদূষণের প্রভাবে দুশ্চিন্তা, অবসাদ, উদ্বিগ্নতা, নিদ্রাহীনতা, উচ্চ রক্তচাপ, হার্ট অ্যাটাক হতে পারে।

বক্তারা আরও বলেন, দেশের গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলোর মধ্যে রাজশাহীতে শব্দ দূষণের মাত্রা সবচেয়ে বেশি।  রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন (রাসিক) নির্ধারিত নীরব এলাকায় শব্দের মাত্রা নির্ধারণ করে দেওয়া থাকলেও বাস্তবে সব স্থানেই শব্দের মাত্রা মাত্রাতিরিক্ত। নীরব এলাকার জন্য দিনের বেলা ৫০ এবং রাতে ৪০ ডেসিবেল মাত্রা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এই মাত্রা মেনে চলা হয় না।

শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে সম্মিলিত প্রয়াসের আহ্বান জানিয়ে বক্তারা বলেন, নিজস্ব কাজের পাশাপাশি সবাই যদি শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন, তাহলে সমাজে কার্যকর প্রভাব পড়বে। শব্দদূষণের জন্য মূলত গাড়ির হর্ন সবচেয়ে বেশি দায়ী। হাইড্রোলিক হর্ন বাজানো থেকে চালকদের বিরত থাকতে হবে। যতটুকু মাত্রায় হর্ন ব্যবহার করলে মানুষের ক্ষতি বা শব্দ দূষণ হবে না, ততটুকু মাত্রায় হর্ন বাজাতে হবে।

এ সময় বক্তারা শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে গণমাধ্যমে জনসচেতনতামূলক প্রচারণা তুলে ধরার জন্য সাংবাদিকদের প্রতি আহ্বান জানান

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার ড. মো. হুমায়ূন কবীর। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিবেশ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক হুমায়ুন কবীর, রাজশাহী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ নওশাদ আলী, রাজশাহী টিচার্স ট্রেনিং কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক শওকত আলী খান, রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ (আরএমপি) কমিশনার মো. আবু কালাম সিদ্দিক, রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. এবিএম শরীফ উদ্দিন। এতে সভাপতিত্ব করেন রাজশাহী জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিল।

উল্লেখ্য, 'শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে সমন্বিত ও অংশীদারিত্বমূলক প্রকল্প'-এর আওতায় দেশব্যাপী ১৯ হাজার ২০০ জন পরিবহন চালক-শ্রমিক ও ৪৮০ জন সাংবাদিককে শব্দ সচেতনতামূলক প্রশিক্ষণ প্রদান করা হবে।

এ প্রকল্পের উদ্দেশ্য হলো-জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ উন্নয়নে শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে শব্দদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা, ২০০৬ বাস্তবায়নে অংশীজনদের দক্ষতা ও জনসচেতনতা বৃদ্ধি, শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে কার্যক্রম গ্রহণের লক্ষ্যে দূষণের মাত্রা, উৎস এবং এর প্রভাব সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ ও সংরক্ষণ এবং শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে পরীক্ষামূলক কার্যক্রমের মাধ্যমে কার্যকরী ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা।

বিডি-প্রতিদিন/বাজিত হোসেন



এই পাতার আরো খবর