ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

যাদের সাথে সীমান্ত আছে তারাই কেবল প্রতিবেশী নয় : মোদি
দীপক দেবনাথ, কলকাতা
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন ‘যেসব রাষ্ট্রের সাথে আমাদের ভৌগোলিক সীমান্ত রয়েছে তারাই কেবল প্রতিবেশী নয়, বরং যাদের সাথে আমাদের হৃদয়ের মিল আছে তারাও প্রতিবেশী। যেখানে আমাদের সম্পর্কের মধ্যে সামঞ্জস্যতা আছে, সখ্যতা আছে, তারাও প্রতিবেশী হয়।’ 

১৫ আগস্ট (শনিবার) ভারতের ৭৪তম স্বাধীনতা দিবসে দিল্লির লালকেল্লা থেকে এই প্রতিবেশী রাষ্ট্র সম্পর্কে এমন অভিমত পোষণ করেন তিনি। 

মোদি বলেন ‘গত কয়েক বছরে পশ্চিম এশিয়ার অনেক দেশের সাথে ভারতের রাজনৈতিক, আর্থিক, মানবিক ক্ষেত্রে সম্পর্ক কয়েকগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে, কয়েকগুণ বিশ্বাস বেড়েছে। এসব দেশে আমাদের অনেক ভারতীয় ভাই-বোন কাজ করেন। করোনা সংকটকালে এসব দেশ ভারতীয় নাগরিকদের অনেক সহায়তা করেছিল। এ জন্য ভারতের পক্ষ থেকে তাদের অনেক ধন্যবাদ। ঠিক সেভাবেই পূর্বপাড়ের আসিয়ানভুক্ত রাষ্ট্রগুলো-যাদের সাথে আমাদের সমুদ্রসীমা রয়েছে- তারাও অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এই দেশগুলোর সাথে ভারতের হাজার বছর পুরোনো ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক রয়েছে। বৌদ্ধ ধর্মের পরম্পরার মধ্য দিয়েই ওসব দেশের সাথে ভারতকে একসূত্রে বেঁধেছে।’   সাদা কুর্তা ও গেরুয়া পাগড়ি পরিহিত মোদি প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর উদ্দেশ্যে এক বার্তায় বলেন, ‘যে প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সাথে আমাদের স্থল বা সমুদ্র সীমা আছে- আমরা তাদের সাথে নিরাপত্তা, উন্নয়ন ও বিশ্বাসের অংশীদারত্বের ওপর ভিত্তি করে যোগাযোগ স্থাপন করে চলেছি। ভারতের লক্ষ্যই হলো প্রতিবেশীদের সাথে বর্ষ প্রাচীন সাংস্কৃতিক, আর্থিক ও সামাজিক সম্পর্ক আরও মজবুত করা।’ 

দক্ষিণ এশিয়ায় উন্নয়ন ও শান্তি বজায় রাখতে এই অঞ্চলের নেতাদের এগিয়ে আসারও আহ্বান জানান মোদি। তিনি বলেন, ‘দক্ষিণ এশিয় অঞ্চলে গোটা বিশ্বের এক-চতুর্থাংশ মানুষ বসবাস করে। আমরা পারস্পরিক সহায়তা ও অংশগ্রহণের মাধ্যমে এত বড় জনগোষ্ঠীর উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির জন্য ব্যাপক সম্ভাবনা তৈরি করতে পারি। এ অঞ্চলের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির জন্য এই অঞ্চলের সব নেতার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলের সব রাজনৈতিক নেতা, শাসকদের কাছে আমার আহ্বান এই অঞ্চলে যত শান্তি ও সমৃদ্ধি আসবে ততই মানবজাতির কল্যাণের কাজে লাগবে।’   লালকেল্লায় স্বাধীনতার দিবসের মঞ্চ থেকে করোনাভাইরাসের টিকা (ভ্যাকসিন) নিয়েও বড় ঘোষণা দেন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘সকলের মনেই একটাই প্রশ্ন, করোনার ভ্যাকসিন কবে তৈরি হবে? শুধু ভারতেই নয়, গোটা বিশ্ববাসীর মনেই এই একটাই প্রশ্ন। কিন্তু আজ আমি বলব যে, আমাদের দেশের বিজ্ঞানীরা, তাদের প্রতীভা দিয়ে গবেষণাগারে সাধ্যমতো প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। গোটা দেশ তপস্যা করছে, কঠোর পরিশ্রম করছে। ভারতে একটা বা দুইটি নয়, তিনটি টিকা প্রস্তুতের কাজ চলছে বিভিন্ন পর্যায়ে। বিজ্ঞানীদের কাছ থেকে যখন সবুজ সংকেত আসবে তখনই বিশাল পরিমাণে উৎপদান শুরু হয়ে যাবে এবং এর প্রস্তুতিও তৈরি আছে। পাশাপাশি এই ভ্যাকসিন সব ভারতীয় নাগরিকের কাছে কত সময়ে পৌঁছে দেওয়া যায় তারও রূপরেখা তৈরি আছে।’ 

তবে অনেকের আশা ছিল লালকেল্লা থেকে মোদি হয়তো করোনা টিকা সামনে আসার দিনক্ষণ ঘোষণা করবেন। কিন্তু সেই পথে হাঁটেননি প্রধানমন্ত্রী।   শনিবার পর্যন্ত গোটা ভারতে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ২৪ লাখেরও বেশি। মৃত্যু হয়েছে ৪৮ হাজার মানুষের। যদিও সুস্থ হয়েও প্রায় ১৭ লাখ মানুষ বাড়ি ফিরেছেন। এমন এক পরিস্থিতিতে করোনা ভ্যাকসিন নিয়ে মোদির এই ঘোষণা। করোনা আবহের মধ্যেই এন৯৫ মাস্ক উৎপাদন, পিপিই, কিট এবং ভেন্টিলেটর তৈরিতে ভারত যে সাফল্য অর্জন করেছে তাও গর্বের সাথে উল্লেখ করেন মোদি। লাল কেল্লার মঞ্চ থেকে এদিন কার্যত আত্মনির্ভর ভারতের ডাক দেন প্রধানমন্ত্রী।   নাম না করে চীন, পাকিস্তানকেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী। মোদি বলেন, ‘লাইন অব কন্ট্রোল (এলওসি) থেকে শুরু করে ‘লাইন অব অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোল’ (এলএসি) পর্যন্ত দেশের সার্বভৌমত্বের দিকে যারা আঙুল তুলেছে- দেশের সেনাবাহিনী ও আমাদের বীর জওয়ান তাদেরকে সেই ভাষাতেই জবাব দিয়েছে। ভারতের সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য গোটা দেশ একজোট হয়ে লড়বে। দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষাই আমাদের কাছে প্রধান অগ্রাধিকার। আমাদের বীর জওয়ান, দেশ কী করতে পারে- তা লাদাখেই গোটা বিশ্ব দেখেছে।’ 

প্রায় দেড় ঘণ্টার ভাষণে জম্মু-কাশ্মীর থেকে ৩৭০ ধারা প্রত্যাহার, তিন তালাক প্রথা বিলোপ, রামমন্দির নির্মাণ, শরণার্থী, পররাষ্ট্র নীতি ইস্যুসহ একাধিক বিষয় নিয়েও সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেন মোদি।    বিডি প্রতিদিন/জুনাইদ আহমেদ



এই পাতার আরো খবর