৪ এপ্রিল, ২০২৪ ২১:১৩

পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচনী প্রচারণায় এসে উন্নয়ন ইস্যুতে বিরোধীদের মোদির খোঁচা

দীপক দেবনাথ, কলকাতা

 পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচনী প্রচারণায় এসে উন্নয়ন ইস্যুতে বিরোধীদের মোদির খোঁচা

বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি

সামনে ভারতের লোকসভা নির্বাচন। ইতোমধ্যেই নিজেদের মতো প্রচারণা করছে কংগ্রেস, বিজেপি, তৃণমূলসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলি। কিন্তু সেই নির্বাচনী প্রচারণাতেও উঠে আসছে বাংলাদেশ প্রসঙ্গ।

বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহার জেলায় একটি নির্বাচনী প্রচারণা থেকে বিরোধীদের নিশানা করে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, তার দল বাংলাদেশের সাথে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক গড়ার লক্ষ্যে কাজ করলেও বিরোধীরা উলটো পথে হাঁটছে। 

মোদি বলেন, বাংলাদেশের সাথে ব্যবসা-বাণিজ্য সহজতর করা বা আইনিভাবে দুই দেশের মধ্যে যাতায়াত ব্যবস্থা কীভাবে আরও সহজ করা যায় তার লক্ষ্যে কেন্দ্রের ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকার নিরন্তর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু বিরোধীদল তৃণমূল, বামফ্রন্ট এবং কংগ্রেসের ‘ইন্ডিয়া’ জোট কেবল মিথ্যা ও অপপ্রচারের রাজনীতিতেই যুক্ত রয়েছে।’

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, আমাদের লক্ষ্য ভারতের উন্নয়নের গতি বৃদ্ধি করা। কোচবিহার হোক বা আলিপুরদুয়ার এই পুরো এলাকায় অনন্ত সম্ভাবনার ক্ষেত্র। এই কারণে বিজেপি সরকার গোটা এলাকায় উন্নয়নের লক্ষ্যে নিরন্তর কাজ করে চলেছে। 

আগামী ১৯ এপ্রিল প্রথম দফায় গোটা দেশের ১০২টি আসনে ভোট নেওয়া হবে। এর মধ্যে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার ও জলপাইগুড়ি লোকসভা কেন্দ্র। এদিন সেই কেন্দ্রের বিজেপির প্রার্থীদের সমর্থনেই মোদির এই সভা।

 সভা থেকেই বিরোধীদের নিশানা করে মোদির মন্তব্য, ‘এরা (কংগ্রেস, তৃণমূল বাম) রাজবংশী, নমশূদ্র কিংবা মতুয়া সম্প্রদায়ের উন্নয়নের চিন্তাই করেনি। কিন্তু আজ যখন বিজেপি সরকার সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) নিয়ে এসেছে, তখন এরা মিথ্যা ও ভয় ছড়াচ্ছে।’ 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই নির্বাচন যেমন তেমন নির্বাচন নয়। ভারতকে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ হিসেবে গড়ে তোলার নির্বাচন। এজন্য দিল্লিতে স্থিতিশীল সরকার ও মজবুত সরকার প্রয়োজন। এজন্য দেশের সরকার বানাতে হবে, কাজ করার সরকার বানাতে হবে। আর সেই লক্ষ্যেই পদ্মফুলে ভোট দেওয়ার আবেদন জানান প্রধানমন্ত্রী। 

মোদির দাবি, গোটা বিশ্ব বলছে মোদি কঠোর ও বড় সিদ্ধান্ত নেওয়ার নেতা। ঠিকই কারণ, ১৪০ কোটি ভারতের স্বপ্ন পূরণ করতে হবে। মোদি কঠোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল যাতে দেশ থেকে দুর্নীতি দূর হয়, সন্ত্রাসবাদ মুক্ত হয়, যাতে ১৪০ কোটির মানুষের কষ্ট লাঘব হয়। 

তিনি আরও বলেন, গত দশ বছরে যে উন্নয়ন হয়েছে, তার তালিকা যথেষ্ট বড়। দেশের গোটা পরিবারের কাছে তা পৌঁছে গেছে। কিন্তু গত ১০ বছরে যে উন্নয়ন সেটা কেবল ট্রেলার, এখনও তো অনেক কিছু করতে হবে। দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। 

প্রধানমন্ত্রী স্পষ্ট বক্তব্য, বাংলার উন্নয়নের জন্য বিজেপির শক্তিশালী হওয়া খুব প্রয়োজন। বিজেপিই পারে মা-বোনেদের ওপর হওয়া অত্যাচার বন্ধ করতে। গোটা দেশ দেখেছে, তৃণমূল সরকার কীভাবে সন্দেশখালির অভিযুক্তদের বাঁচাতে সর্বশক্তি প্রয়োগ করছে। কিন্তু বিজেপি সংকল্প নিয়েছে, সন্দেশখালির দোষীদের সাজা দিয়েই ছাড়বে। ওদের গোটা জীবন জেলের মধ্যেই কাটাতে হবে এই কারণেই পদ্মফুলে ভোট পড়া খুবই জরুরি। 

এ দিনের মঞ্চ থেকে রেশন দুর্নীতি, শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতিসহ একাধিক ইস্যুতে তৃণমূলকে নিশানা করেন প্রধানমন্ত্রী। ইন্ডিয়া জোট নিয়ে তার কটাক্ষ ‘ইন্ডিয়া জোটের শরিক দল কংগ্রেস, তৃণমূল এবং বামেরা বাংলায় মারামারি করছে অথচ দিল্লিতে এক থালায় খাচ্ছে।’ 

এদিকে এদিনই কোচবিহারের তৃণমূলের একটি নির্বাচনী প্রচারণা থেকে বিজেপিকে নিশানা করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। তার অভিযোগ ‘এনআইএ, আয়কর দপ্তর, বিএসএফ এবং সিআইএসএফ’এর মতো কেন্দ্রীয় এজেন্সিগুলি বিজেপির হয়ে তাদের দলীয় কার্যালয় থেকে কাজ করছে।

তিনি বলেন, এ ব্যাপারে আমি নির্বাচন কমিশনের কাছে আর্জি জানাব। কমিশনের উচিত বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ করা এবং সব রাজনৈতিক দলগুলি যাতে অংশগ্রহণ করতে পারে এমন একটি নির্বাচনী পরিবেশ তৈরি করা।

 মমতার বক্তব্য, বিষধর সাপকে বিশ্বাস করা যায়, কিন্তু বিজেপিকে নয়। পশ্চিমবঙ্গে যে কোনোভাবেই সিএএ এবং এনআরসি চালু করতে দেওয়া হবে না, সে কোথাও এদিন স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছেন তৃণমূল প্রধান।

বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর