সেন্ট মার্টিনবাসীর ভাগ্যে যেন কিছুতেই আশার আলোর দেখা মিলছে না। গেল পর্যটন মৌসুমে পর্যটক সীমিত করার মধ্য দিয়ে সেখানকার মানুষের জীবনযাত্রায় প্রভাব পড়েছে। পর্যটন মৌসুমে সীমিত সংখ্যক পর্যটক যাওয়ার কারণে সেখানকার মানুষের আয় কমে গেছে। অন্যদিকে এখন আরাকান আর্মির ভয়ে সাগরে নামতেও ভয় পাচ্ছেন জেলেরা। মধ্যখানে ৫৮ দিনের মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞা শেষেও সুফল মিলছে না। প্রাকৃতিক দুর্যোগে জেলেরা সাগরে যেতেও ভয়ে আছেন। ফলে মানুষের আয়ের পথ একপ্রকার সীমিত হয়ে পড়েছে। বর্ষা মৌসুমে ভারী বর্ষণে দেড় শ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে যা অতীতে কখনো দেখা যায়নি। এসব পরিবারেও মাত্রাতিরিক্ত দুর্ভোগ বেড়েছে। বলা যায় ‘চরম দুর্দিন’ যাচ্ছে দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিনের বাসিন্দাদের। এ ছাড়া মিয়ানমারের অভ্যন্তরে সংঘাত ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে সেন্ট মার্টিনের যোগাযোগব্যবস্থা মাঝেমধ্যে বিঘ্নিত হয়, যা খাদ্য এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী সরবরাহ ও দ্বীপবাসীর জীবনযাত্রায় প্রভাব ফেলে। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, অতিরিক্ত পর্যটকের কারণে দ্বীপের পরিবেশের ওপর চাপ সৃষ্টি হচ্ছে। অপরিকল্পিত পর্যটন এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অভাবে দ্বীপের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছে। পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান গত ২৩ জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, সেন্টমার্টিনের প্রাকৃতিক পরিবেশ ফিরে আসতে শুরু করেছে। দ্বীপটি নিয়ে একটি মাস্টারপ্ল্যান করা যায় কি না চিন্তাভাবনা চলছে। জলবায়ু ট্রাস্ট থেকে এজন্য একটি প্রকল্প নেওয়ার উদ্যোগ চলছে।
দ্বীপের ১০ হাজার বাসিন্দার মধ্যে ৭০ শতাংশই গত প্রায় আড়াই দশকে পর্যটন শিল্পের ওপর নির্ভর হয়ে পড়েছেন। আর বাকি প্রায় ১ হাজার ৬০০ জেলে পরিবারের সদস্যদের অবলম্বন ‘সাগরনির্ভরতা’।
আড়াই দশকে সেন্ট মার্টিনের পর্যটন খাত বিস্তৃত হয়েছে। স্থানীয় অনেক মানুষ কৃষিকাজ ও অন্য পেশা ছেড়ে পর্যটন ব্যবসায় যুক্ত হয়েছেন। সাধারণত সরকারিভাবেই ১ অক্টোবর শুরু থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত এই পর্যটন ব্যবসা চলে। গত বছরের নভেম্বরে মন্ত্রণালয়ের এক ঘোষণায় হঠাৎ করেই দ্বীপে পর্যটকদের রাত্রিযাপন নিষিদ্ধ করা হয়। এরপর ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে দিনে দুই হাজার পর্যটক যাওয়া এবং সেখানে রাতযাপনের সুযোগ দেওয়া হয়। ফলে স্থানীয় মানুষের আয় সীমিত হয়ে পড়ে। সেখানে থেকেই সেন্ট মার্টিনবাসীর দুর্ভোগের শুরু।
সেন্ট মার্টিন ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি নুরুল আলমের মতে, ‘এই দ্বীপে এখন শুধুই আতঙ্ক, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা, চায়ের দোকান, পাড়া-মহল্লা সর্বত্র সবার প্রশ্ন, কী হতে যাচ্ছে সেন্ট মার্টিনে? সেন্ট মার্টিনের ভবিষ্যৎ কী? টেকনাফের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ এহসান উদ্দীন সেন্ট মার্টিনে পর্যটক গমনে নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে বলেন, ‘স্থানীয় লোকজনের যাতায়াতে কোনো সমস্যা নেই। তবে বিভিন্ন প্রকল্পের লোকজনকে অনুমতি নিয়ে যাতায়াত করতে হয়। মূলত দ্বীপের জীব-বৈচিত্র্য সংরক্ষণের জন্য, বাঁচানোর জন্য পরিবেশ মন্ত্রণালয় সেখানে পর্যটকদের যাতায়াতের নিষেধাজ্ঞার এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’ আর কক্সবাজার পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক জমির উদ্দিন জানিয়েছেন, সরকার সেন্ট মার্টিনকে একটি পরিবেশবান্ধব দ্বীপ হিসেবে সুরক্ষা দিতে চায়। পরিবেশের ক্ষতি না হওয়ার জন্য পর্যটক যাতায়াত সীমিত করেছে। সেন্ট মার্টিন হোটেল মালিক সমিতির সভাপতি এ রহিম জিহাদি জানান, ‘দ্বীপবাসী অভাব-অনটনে দিন পার করছেন। জীববৈচিত্র্য রক্ষা হোক, কিন্তু মানুষের জীবন চলার পথ বন্ধ করে নয়। ১০ হাজার মানুষের জন্য বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা না করে পর্যটন বন্ধ রাখা যুক্তিসঙ্গত নয়।’