ঢাকা, বুধবার, ১ মে, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

পশ্চিমবঙ্গে নির্বিঘ্নে দ্বিতীয় দফার ভোটগ্রহণ
দীপক দেবনাথ, কলকাতা
সংগৃহীত ছবি

নির্বিঘ্নেই শেষ হলো ভারতের সপ্তদশ লোকসভা নির্বাচনের দ্বিতীয় পর্বের ভোট। বৃহস্পতিবার দেশজুড়ে ১২টি রাজ্যের ৯৫টি লোকসভা কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর মধ্যে ছিল তামিলনাড়ু (৩৮), কর্নাটক (১৪), মহারাষ্ট্র (১০), উত্তর প্রদেশ (০৮), ওড়িষ্যা (৫), বিহার (৫), অসম (৫), পশ্চিমবঙ্গ (৩), ছত্তিশগড় (৩), জম্মু-কাশ্মীর (২), মনিপুর (১), পডুচেরি (১)টি আসন। সেই সঙ্গে অন্ধ্রপ্রদেশ, অরুণাচল প্রদেশ, ওড়িষ্যা ও সিকিমে বিধানসভার ভোট গ্রহণ করা হয়েছে। 

সকাল ৭টায় শুরু হয় ভোটগ্রহণ পর্ব, চলে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত। যদিও নিরাপত্তার কারণে কয়েকটি কেন্দ্রে তার আগেই ভোটগ্রহণ শেষ করা হয়। এ দফায় দেশজুড়ে মোট ভোটার রয়েছে প্রায় ১৫ কোটি ৮০ লাখ। মোট প্রার্থীর সংখ্যা ১৬০০। 

গণতন্ত্রের সবচেয়ে বড় উৎসবকে ঘিরে ভোটারদের মধ্যে উৎসাহ ছিল চোখে পড়ার মতো। তামিল সুপারস্টার থালাইভা রজনীকান্ত থেকে রাজ বব্বর-প্রত্যেকেই নিজের নিজের কেন্দ্রে লাইনে দাঁড়িয়ে ভোট দিয়ে যান। 

চেন্নাইয়ের স্টেলা ম্যারিস কলেজে ভোট দেন রজনীকান্ত। অভিনেতা ও মক্কাল নিধি মইয়ম (এমএনএম) দলের প্রধান কমল হাসান ও তার মেয়ে শ্রুতি হাসানকে এদিন ভোটের লাইনে দাঁড়াতে দেখা যায় চেন্নাইয়ের অলওয়ারপেট কর্পোরেশন স্কুলে। দক্ষিণের আরেক অভিনেতা প্রকাশ রাজ ভোট দেন বেঙ্গালুরুর সেন্ট্রাল কেন্দ্রে। ভোট দিয়েছেন বিশিষ্ট সঙ্গীত শিল্পী এ.আর.রহমান। আগ্রায় ভোট দেন রাজ ব্ববর। 

কর্ণাটকে ভোট দেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী এইচ.ডি.দেবগৌড়া। জম্মু-কাশ্মীরের মুন্সিবাগ এলাকার একটি কেন্দ্রে ভোট দেন রাজ্যটির দুই সাবেক মুখ্যমন্ত্রী পিতা-পুত্র ফারুক আবদুল্লা ও ওমর আবদুল্লা। বেঙ্গালুরু দক্ষিণের জয়ানগরে ভোট দেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী নির্মলা সীতারামণ। তামিলনাড়ুর শিবগঙ্গা লোকসভা কেন্দ্রের অধীন একটি বুথে গোটা পরিবারকে নিয়ে ভোট দেন সাবেক অর্থমন্ত্রী পি. চিদাম্বরম। 

সকালে ভোট শুরুর আগেই আরও বেশি সংখ্যায় ভোট দেয়ার আহ্বান জানিয়ে টুইট করেন নরেন্দ্র মোদি। তিনি জানান, ‘প্রিয় ভারতের নাগরিক, আজ দ্বিতীয় দফার ভোট শুরু হচ্ছে। আমি নিশ্চিত যে এই দফায় যে কেন্দ্রগুলোতে ভোট হচ্ছে-সেখানকার নাগরিকরা ভোট দেয়ার মধ্যে দিয়ে দেশের গণতন্ত্র আরও শক্তিশালী হবে। আমি আশা করবো আরও বেশি অল্পবয়সী ভোটাররা বুথের দিকে যাবেন এবং ভোট দেবেন।'

দ্বিতীয় দফায় একাধিক হেভিওয়েট প্রার্থীদের ভাগ্য বাক্সবন্দী হয়েছে। এদের মধ্যে রয়েছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জিতেন্দ্র সিং ও সদানন্দ গৌড়া, সাবেক প্রধানমন্ত্রী জনতা দল (সেকুলার) নেতা এইচ.ডি.দেবগৌড়া, ন্যাশনাল কনফারেন্স নেতা ফারুক আবদুল্লা, সাবেক কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী কংগ্রেস প্রার্থী সুশীল কুমার সিন্ডে, সাবেক টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী ডিএমকে প্রার্থী এ.রাজা, সাবেক মন্ত্রী কংগ্রেস প্রার্থী দীপা দাসমুন্সি, সাবেক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও পিএমকে প্রার্থী আম্বুমানি রামাদোস, বিজেপির হেমা মালিনী, কংগ্রেস প্রার্থী রাজ বব্বর ও সুস্মিতা দেব, ডিএমকে নেত্রী কানিমোঝি।  

তবে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা, কেন্দ্রীয় ও রাজ্য পুলিশ দিয়েও অশান্তি ঠেকানো গেল না পশ্চিমবঙ্গে। দ্বিতীয় দফায় রাজ্যটির জলপাইগুড়ি, দার্জিলিং ও রায়গঞ্জ-এই তিনটি লোকসভা কেন্দ্রে ভোট নেয়া হয়। তিনটি কেন্দ্রেই এবার চতুমুর্খী (তৃণমূল, বিজেপি, কংগ্রেস, বামফ্রন্ট) লড়াই হয়েছে। মোট ভোটার ছিল প্রায় ৫০ লাখের কাছাকাছি। কিন্তু ভোট শুরুর পরই দার্জিলিং লোকসভার অন্তর্গত চোপড়া এলাকায় সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। 

চোপড়ার ১৮০ নম্বর বুথে ভোটারদের ভোট প্রদানে বাধা দেয়ার অভিযোগ তৃণমূলের বিরুদ্ধে, ভোটারদের কাছ থেকে ভোটার স্লিপ কেড়ে নিয়ে তাদের মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। প্রতিবাদে ৩১ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করেন গ্রামবাসীরা। আটক করা হয় এক তৃণমূল কর্মীকে। পরে পুলিশ এসে অবরোধীকারীদের লাঠিপেটা করেন। এরপরই পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট ছোড়া হয় বলে অভিযোগ। এসময় পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ছুঁড়ে। 

অন্যদিকে, রায়গঞ্জের গোয়ালপোখরে খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে হামলার শিকার হয় গণমাধ্যমের কর্মীরা। রায়গঞ্জের ইসলামপুরে হামলার শিকার হলেন বামফ্রন্টের প্রার্থী মহম্মদ সেলিম। ইসলামপুরের নয়াপাড়া টেরিংবাড়ি বুথে সকাল থেকে বুথ দখল করার খবর পেয়েই সেখানে যাচ্ছিলেন সেলিম। এসময় ক্ষমতাসীন দল তৃণমূলের এক দুর্বৃত্তকে ধরে ফেলেন। পরে তার গাড়িবহরকে লক্ষ্য করে হামলা চালায় কয়েকজন দুর্বৃত্ত। তাতে সেলিমের গাড়িটি ক্ষতিগ্রস্থ হয়। ইসলামপুরের একাধিক ভোটারদের রূপি দিয়ে প্রভাবিত করার অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। ভোটাররা নিজের মুখে সে কথা স্বীকারও করেছেন। 

চোপড়ায় যখন নির্বাচনী সহিংসতা চলছে তখন অন্যদিকে হাওড়ার আমতায় একটি জনসভা থেকে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং তৃণমূলকে তোপ দেগে বলেন, ‘মমতা রাজ্যের মানুষকে ধোকা দিয়ে যাচ্ছে। ‘মা-মাটি-মানুষ’এর কথা বলে তিনি ক্ষমতায় এসেছিলেন। কিন্তু বর্তমানে এ রাজ্যে মা-মাটি-মানুষ কেউই সুরক্ষিত নয়।' 

তিনি আরও বলেন, তৃণমূলের শাসনকালে বাংলায় গণতন্ত্র সঙ্কটের মুখে পড়েছে। যে কায়দায় বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের ওপর সন্ত্রাস নামিয়ে আনা হচ্ছে সেটা গণতন্ত্রেও লক্ষণ নয়।   

উল্লেখ্য, ভারতে এবার মোট ৭ দফায় (১১, ১৮, ২৩, ২৯ এপ্রিল এবং ৬, ১২, ১৯ মে) ৫৪৩টি আসনের জন্য ভোট নেয়া হবে। এবারের লোকসভা নির্বাচনে গোটা দেশে মোট ভোটারের সংখ্যা প্রায় ৯০ কোটির মতো। নতুন ভোটারের সংখ্যা প্রায় ১.৬০ কোটি। গণনা আগামী ২৩ মে। 

বিডি প্রতিদিন/১৮ এপ্রিল ২০১৯/আরাফাত



এই পাতার আরো খবর