ঢাকা, বুধবার, ১ মে, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

মোয়াজ্জেম পলাতক- এর দায় কার?
হাসিনা আকতার নিগার
হাসিনা আকতার নিগার

নুসরাত হত্যা মামলার বিচারিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে। পিবিআই অত্যন্ত দক্ষতার সাথে তাদের মেধা ও শ্রম দিয়ে মামলার তদন্ত করেছে। সেই সাথে অভিযুক্তদের গ্রেফতার করার ক্ষেত্রে যে চৌকস ভূমিকা পালন করেছে তা অনবদ্য। তবে তদন্তই শেষ কথা নয়। বিচারের আরো বেশ কিছু ধাপ এখনো বাকী। পিবিআইয়ের তদন্তে ওসি মোয়াজ্জেমের এ হত্যাকাণ্ডের সাথে সম্পৃক্ত থাকার বিষয়টি নিয়ে কোন কিছু উল্লেখ নেই বলে জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।  যাই হোক বিচারিক বিষয় নিয়ে আগাম বক্তব্য না করাই শ্রেয়। 

নুসরাত হত্যা মামলার পাশাপাশি আইসিটি আইনে ওসি মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের তদন্তের দায়ভার পড়ে পিবিআইয়ের উপর। সে তদন্তে উঠে আসে ওসি মোয়াজ্জেম দোষী। যার প্রেক্ষিতে আদালত ওসি মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি করে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি, এদেশের অসংখ্য নাটকীয় ঘটনার মত আরেক নাটক ঘটে এক্ষেত্রে। 

গ্রেফতারী পরোয়ানার আদেশ ফেনী আর রংপুর পৌঁছাতে অনেকটা সময় চলে যায়। আর এ সময়ের শতভাগ সদ্ব্যবহার করেছে ওসি মোয়াজ্জেম।

অদ্ভুত এক আইন- আইসিটি। এ আইনে কাউকে রাতের অন্ধকারে ঘর থেকে তুলে নিয়ে যায়। কে নিয়ে যাচ্ছে কোথায় নিচ্ছে জানা যায় না। পরিবার পরিজনের অনেক ছোটাছুটির পর জানা যায় আইসিটি আইনে গ্রেফতার। তখন কোন অভিযোগের তদন্ত হয় না কিংবা আদালত থেকে গ্রেফতারী পরোয়ানাও জারি হয় না। এসব না হয় ভিন্ন মাত্রার কথা এ আইনের বেলাতে। 

যদি স্বাভাবিক প্রক্রিয়াতে ওসি মোয়াজ্জেমের ঘটনাটি দেখা হয় তাহলে সে পলাতক, এর দায়ভার কে নিবে? আদালত, পুলিশ না রাষ্ট্র?    যেখানে ওসি মোয়াজ্জেম গ্রেফতার এড়াতে আগাম জামিনের আবেদন করেছে সেখানে তার আরো বিকল্প চিন্তা থাকাটাই স্বাভাবিক। সে ক্ষেত্রে বিষয়টি নজরদারিতে না রাখাটা দায়িত্বের প্রতি অবহেলার নামান্তর। 

একজন সরকারি চাকরিজীবী কি দীর্ঘ সময় লাপাত্তা থাকতে পারে।  নাকি তাকে আড়াল হয়ে যাবার সুযোগ করে দিল। এর জবাব না দিয়ে কি পার পেয়ে যাবে পুলিশ প্রশাসন।           

পুলিশ প্রশাসনের একজন কর্তাব্যক্তি এক নিমিষেই হাওয়া হয়ে যাবে এটা কি করে সম্ভব। বলা হচ্ছে তাকে সাজা পেতেই হবে। কিন্তু যতক্ষন না  ধরা পড়ছে ততক্ষণ এসব কথা কেবল পত্রিকার শিরোনাম। খোদ পুলিশ যখন বলে বিধি মোতাবেক গ্রেফতারী পরোয়ানা রংপুরে যায়নি, তখন আবারও প্রশ্ন ওঠে, একজন অপরাধীকে বাঁচানোর জন্য কেন এত পাঁয়তারা। 

ঈদের ছুটি আর নানা নাটকীয়তাতে ওসি মোয়াজ্জেম যদি দেশের সীমা পেরিয়ে যায়, তবে নুসরাত হত্যা মামলার জন্য বিষয়টি দুঃখজনক। তবে তার এ পলাতক হবার পেছনে যে একটা বড় শক্তি রয়েছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।  

যে নুসরাত হত্যার আসামিদেরকে পিবিআই সুনিপুণভাবে গ্রেফতার করেছে। সেই পিবিআই কি আর একবার চেষ্টা করে দেখতে পারে না ওসি মোয়াজ্জেমকে ধরতে। সর্ষের মধ্যে ভুত থাকে। কিন্তু এ ভুতকে তাড়াতে পারলে আগামীতে অন্যায় করতে সাহস পাবে না পুলিশ বাহিনী। তাই জনবান্ধব পুলিশ প্রশাসন হয়ে জনগণের আস্থাটুকু নষ্ট না করাই শ্রেয়।                                                                                                                                                     

লেখক: কলামিস্ট

বিডি প্রতিদিন/হিমেল



এই পাতার আরো খবর