হরি নারায়ন ঘোষ একজন মুক্তিযোদ্ধা। বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করলেও স্বাধীনতার ৪৮বছরে স্বীকৃতি পাননি। সরকারি কোন সুযোগ সুবিধা না পাওয়ায় ফেরি করে পান-সিগারেট বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করেন। তার আকুতি, মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি দেখে মরতে পারলে আত্মা শান্তি পাবে।
মুক্তিযোদ্ধা হরি নারায়ন ঘোষকে ঘাড়ে করে পান-সিগারেট বাক্স নিয়ে কুমিল্লার লাকসামসহ বিভিন্ন স্থানে দেখা যায়। ফেরি করে পান-সিগারেট বিক্রিই এখন তার পেশা। তিনি চাঁদপুর জেলা সদরের বালিয়া গ্রামের মৃত মনমোহন ঘোষের ছেলে। অভাব-অনটনের সংসারে পৈত্রিক সূত্রে শেষ ভিটেবাড়ি যা ছিল ২০০৯ সালে তা বিক্রি করে পরিবার নিয়ে লাকসাম চলে আসেন। বর্তমানে লাকসাম পৌরশহরের পূর্ব লাকসাম (কালিবাড়ি) এলাকায় পরিবার নিয়ে ভাড়া বাসায় বসবাস করেন।
জানা যায়, দেশ স্বাধীনের পূর্বে হরি নারায়ন ঘোষ সরকারি চাকরি করতেন। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়লে তৎকালীন পাকিস্তান সরকার তাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করেন। যুদ্ধকালীন সময়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর ছোড়া গুলির আঘাতে আহত হয়ে ভারতের আগরতলা ক্যাম্পে গিয়ে চিকিৎসা নেন। সুস্থ হয়ে উঠলে ভারতের ক্যাম্প কমান্ডার এস.বি থাপা শরণার্থীদের সেবাদান করার জন্য তাকে বহালপুর সেন্ট্রাল ট্রানজিট ক্যাম্পে বদলি করেন। বহালপুর ক্যাম্প কমান্ডারের নির্দেশে তিনি শরণার্থীদেরকে খাদ্য, বস্ত্র, ঔষধ সুষ্ঠুভাবে সরবরাহের মাধ্যমে সেবাদান করেন। ওইসময় ভারতের কামন্ডার এস.বি থাপা তার কর্মদক্ষতা দেখে সনদপত্র প্রদান করে বাংলাদেশের মাটিতে ফেরত পাঠান। ভারতীয় সনদপত্রের সূত্র ধরে ১৯৯৬ সালে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত হন তিনি। যার মুক্তি নং ০২০৫০১০৫৮৭।
পরবর্তীতে ভারতীয় সনদ ও চাঁদপুর সদর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার সনদপত্রসহ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে আবেদন করেন। মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের সনদ পাওয়ার জন্য তিনি ২০১০ সালের ৫ জানুয়ারি আবেদন করেন। যার নং ৬৭৪১। সর্বশেষ মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে ২০১৪ সালের ৯ আগস্ট অনলাইনে আবেদন করেন। যার ডি.জি নং ১১৮৯৪৯৬। মুক্তিযোদ্ধা হরি নারায়ন ঘোষ স্বীকৃতির জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করেও এখন পর্যন্ত গেজেটভুক্ত হতে পারেননি। মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি না পাওয়ায় তিনি সরকারি সকল সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত। বর্তমানে পরিবার নিয়ে তিনি লাকসামের ভাড়া বাসায় মানবেতর জীবন যাপন করছেন।
হরি নারায়ন ঘোষ বলেন, মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন স্থানে কয়েকবার যোগাযোগ করেও মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পাইনি। জীবনের শেষ বয়সে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি নিয়ে মরতে পারলে আমার আত্মা শান্তি পাবে। এজন্য আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীসহ মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের সুদৃষ্টি কামনা করছি।
বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন