২৫ নভেম্বর, ২০১৯ ১৪:২১

পর্ন তারকাদের অ্যাকাউন্ট কেন ডিলিট করে দিচ্ছে ইন্সটাগ্রাম?

অনলাইন ডেস্ক

পর্ন তারকাদের অ্যাকাউন্ট কেন ডিলিট করে দিচ্ছে ইন্সটাগ্রাম?

জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ইন্সটাগ্রাম থেকে এ বছর শত শত পর্ন স্টার ও যৌন কর্মীর অ্যাকাউন্ট ডিলিট করে দেওয়া হয়েছে।

এছাড়াও, তারা অভিযোগ করেছেন যে মূলধারার জনপ্রিয় মডেল বা সেলিব্রিটিরা যেভাবে এই মাধ্যমটি ব্যবহার করতে পারেন, তাদেরকে সেভাবে ব্যবহার করতে দেওয়া হচ্ছে না, যার ফলে তারা বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন।

পর্ন তারকাদের সমিতি অ্যাডাল্ট পারফরমার্স অ্যাক্টর্স গিল্ডের প্রেসিডেন্ট এলানা ইভান্স বলছেন, “শ্যারন স্টোন এবং অন্যান্য তারকারা যেভাবে তাদের ভেরিফায়েড পেজ চালাতে পারেন, আমাদেরও সেভাবে ইন্সটাগ্রাম চালাতে পারার কথা। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে আমাদের অ্যাকাউন্ট ডিলিট করে দেওয়া হচ্ছে।”

ইভান্সের গ্রুপটি এরকম ১,৩০০ জনেরও বেশি পর্ন তারকার একটি তালিকা তৈরি করেছে, যাদের অ্যাকাউন্ট ইন্সটাগ্রামের মডারেটর ডিলিট করে দিয়েছে।

বলা হচ্ছে, নগ্ন চিত্র কিম্বা যৌনতার কোন ছবি না দেওয়া সত্ত্বেও এই সোশাল মিডিয়ার কমিউনিটি স্ট্যান্ডার্ড বা রীতিনীতি ভঙ্গ করায় এসব অ্যাকাউন্ট মুছে দেxয়া হয়েছে।

আমাদের প্রতি এই বৈষম্যের কারণ হচ্ছে জীবিকার জন্যে আমরা যা করছি সেটা তাদের পছন্দ নয়,” বলেন ইভান্স।

এ বিষয়ে ইন্সটাগ্রাম কর্তৃপক্ষের সঙ্গে গত জুন মাসে তাদের বৈঠকও হয়েছে। সেই আলোচনা ফলপ্রসূ হয়নি এবং পর্ন তারকাদের অ্যাকাউন্ট ডিলিট অব্যাহত রয়েছে। 

গত সেপ্টেম্বর মাসে পর্ন তারকা জেসিকা জেমিসের মৃত্যুর পর তার অ্যাকাউন্ট ডিলিট করে দেওয়ার পর ইভান্স খুব হতাশ হয়েছিলেন।

তিনি বলেন, “যখন দেখলাম যে জেসিকার অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে তখন আমার হৃদয় ভেঙে পড়েছিল। ওটাই ছিল শেষ খড়কুটো।”

ওই অ্যাকাউন্টের অনুসারী ছিল নয় লাখেরও বেশি। কিন্তু পরে সেটি আবার ফিরিয়ে দেওয়া হয়।

গত বছরের শেষের দিকে অ্যাডাল্ট পারফর্মাররা অভিযোগ করেছিলেন, কোন একজন ব্যক্তি বা এক দল ব্যক্তি মিলে তাদের অ্যাকাউন্টের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালাচ্ছে। তাদের পরিষ্কার উদ্দেশ্য ছিল এসব অ্যাকাউন্ট ডিলিট করানো।

তারা দাবি করেন যে এর পর থেকে তাদেরকে বিভিন্ন রকমের বার্তা দিয়ে হয়রানি করা হতো, ভয়-ভীতি দেখানো হতো।

ওই ব্যক্তিটি ছিল অজ্ঞাত, নাম পরিচয় জানা যায়নি। পর্ন তারকারা বলছেন, ‘ওমিড’ নামের একটি অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে তাদেরকে বার্তা পাঠিয়ে হয়রানি করা হতো।

পর্ন তারকা ও যৌন কর্মীদের অধিকার নিয়ে কাজ করেন এরকম একজন অ্যাকটিভিস্ট জিঞ্জার ব্যাঙ্কস ছিলেন এই প্রচারণার প্রথম টার্গেট।

“যখন আপনি তিল তিল করে একটি অ্যাকাউন্ট গড়ে তোলেন এবং সেখানে তিন লাখের বেশি মানুষ আপনাকে অনুসরণ করে, এবং তারপর ওই অ্যাকাউন্ট ডিলিট করে দেওয়া হয় তখন মনে হবে যে আপনি হেরে গেছেন,” বলেন তিনি।

“আরো বেশি হতাশার যখন সব নিয়ম কানুন মেনে চলার পরেও অ্যাকাউন্ট ডিলিট করে দেওয়া হয়,”যোগ করেন তিনি।

ব্যাঙ্কস বলেন, সোশাল মিডিয়া থেকে অ্যাডাল্ট পারফর্মারদের অ্যাকাউন্ট ডিলিট করে দিয়ে তাদেরকে আসলে বাজার থেকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চালানো হচ্ছে।

“লোকজন যে এসব অ্যাকাউন্টের নামে রিপোর্ট করছে তারা কি বুঝতে পারছে না এর ফলে আমাদের রোজগারে ক্ষতি হচ্ছে! নাকি তারা আমাদের জীবনের কথা চিন্তাই করে না? তারা মনে করে আমাদের এই পেশাটাই থাকা উচিত না।”

প্রযুক্তির উন্নতির কারণে পর্নোগ্রাফি ইন্ডাস্ট্রিরও আমূল পরিবর্তন ঘটেছে। এর ফলে নতুন নতুন মাধ্যম চালু হয়েছে এবং পর্ন তারকা ও যৌন কর্মীরা এখন নিজেই স্বাধীনভাবে এই কাজটা করতে পারেন।

ওয়েবক্যাম সাইট, সাবস্ক্রিপশন সার্ভিস ও বিভিন্ন ভিডিও প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে তারা অর্থ রোজগার করতে পারেন।

বেশিরভাগ পর্ন তারকাই তাদের এসব ভিডিওর প্রচারণা ও বিজ্ঞাপনের জন্য ইন্সটাগ্রামের মতো সোশাল মিডিয়া ব্যবহার করে থাকেন। তাই সেখানে অ্যাকাউন্ট বন্ধ হয়ে গেলে তারা বড় একটা বাজার হারিয়ে ফেলেন।

তাদের অভিযোগ মূলধারার সেলিব্রিটিরা তাদের চাইতেও অনেক বেশি খোলামেলা ছবি পোস্ট করে থাকেন। কিন্তু তাদের ওপর কোন ধরনের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয় না।

ইন্সটাগ্রামের মালিক ফেসবুকের একজন মুখপাত্র বলেছেন, “এখানে নানা ধরনের লোকেরা আছেন। সে কারণে আমাদেরকে নগ্নতা ও যৌনতার বিষয়ে কিছু নিয়ম কানুন মেনে চলতে হয়, যাতে করে সবাই এটা দেখতে পারে, বিশেষ করে তরুণ ছেলেমেয়েদের কাছে।”

সূত্র: বিবিসি বাংলা

বিডি প্রতিদিন/কালাম

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর