ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

উখিয়ায় পানিতে তলিয়ে গেছে ১০ হাজার রোহিঙ্গা বস্তি, দুর্ভোগ চরমে
শফিক আজাদ, উখিয়ার বালুখালী থেকে ফিরে
মিয়ানমার থেকে নানান নির্যাতনের শিকার হয়ে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা আশ্রয় নেয় উখিয়ার বিভিন্ন বন, জঙ্গল, পাহাড় ও খালের কিনারে। কিন্তু সেখানেও শেষ রক্ষা হলো না তাদের। একমাত্র মাথা গোঁজার জায়গাটি এবার কেড়ে নিল পাহাড়ী ঢলে। ২ দিনের প্রর্বল বর্ষণ ও পাহাড়ে ঢলে তলিয়ে গেছে বালুখালী তেলিপাড়া, থাইংখালী তাজনিয়ারখোলা, হাকিমপাড়া ও পালংখালীর বাঘঘোনা এলাকার সমতল ভূমি ও ছরা, বা খালের কিনারে অবস্থান নেওয়া ১০ হাজারের অধিক রোহিঙ্গা বস্তি। এতে চরমে দুর্ভোগে পড়েছেন অন্তত ৫০ হাজারের অধিক রোহিঙ্গা। পানিবন্ধী হয়ে পড়ে বর্তমানে অসংখ্য লোকজন অনাহারে অনাধারে থাকায় মানবিক বিপর্যয়ের আশঙ্ক্ষা করছেন স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীরা।    সরজমিন উখিয়ার রোহিঙ্গা অধ্যুষিত বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, আকস্মিক বৃষ্টির পানি ও পাহাড়ী ঢলে উখিয়ার বালুখালী, হাকিমপাড়া, থাইংখালী তাজনিমারখোলা ও পালংখালী বাঘঘোনা এলাকায় বসবাসরত অন্তত ১০ হাজার রোহিঙ্গা বস্তিঘর তলিয়ে গেছে। এসময় তাদের ঘরে থাকা একমাত্র সহায় সম্বলটুকুও বৃষ্টির পানি কেড়ে নিয়েছে। খোলা আকাশের নিচে বৃষ্টিতে ভিজতে দেখা গেছে হাজার হাজার রোহিঙ্গা নারী, পুরুষ ও শিশুকে।   বালুখালী কাস্টমস এলাকায় পানিবন্ধী অবস্থায় আটকে পড়া রোহিঙ্গা মিয়ানমারের মংডু থানার সিকদারপাড়া এলাকার বাসিন্দা আব্দু ছত্তারের ছেলে নুর মোহাম্মদ (৪০) বলেন, মিয়ানমার থেকে সর্বস্ব হারিয়ে ১৩ দিন আগে মিয়ানমার থেকে এসে আশ্রয় নিয়েছিলাম এখানে। স্ত্রীসহ ১১ জন ছেলে/মেয়ে রয়েছে আমার। কোন রকম পরিবার পরিজন নিয়ে দুঃখ কষ্টে অবস্থান করছিলাম একটি ঝুঁপড়িতে। কিন্তু এখানে এসেও শেষ রক্ষা হলো না আমাদের। এবার মিয়ানমারের কোন সেনাবাহিনী নয়, প্রাকৃতিক বৃষ্টির পানি ভেসে নিয়েছে সবটুকু। এখন এতগুলো ছেলে/মেয়ে নিয়ে কোথায় যাব ভেবে কূল কিনারা পাচ্ছি না।   একই কথা মিয়ানমার বিধবা রশিদা বেগমের(৪০)। স্বামী নুরুল ইসলামকে মিয়ানমার সেনাবাহিনী গুলি করে হত্যা করেছে। তার বাড়ি মিয়ানমারের মংডু থানার হাইচ্চুরাতা গ্রামে। গত ১৫ দিন পূর্বে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে। সে কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, আমার স্বামীও নেই, কোনো বড় ছেলেও নেই, ৬টি মেয়ে। কাস্টমস এলাকায় মোটামুটি ভাল ছিলাম। বিভিন্ন লোকজন এসে ত্রাণ দিত আমাদের। না খেয়ে থাকতে হয়নি একদিনও। এখান থেকে যদি অন্যত্রে চলে যায়, সেখানে এতগুলো মেয়ে নিয়ে কি খেয়ে বেঁচে থাকব জানি না।   তার মতো আরও বিভিন্ন দুঃখ-দুর্দশার কথা জানালেন মিয়ানমারের মংডু থাকার হাইচ্চুরাতা গ্রামের আব্দু শুক্কুরের স্ত্রী মোবিনা (৩৮) ও একই থানার মগনিপাড়া গ্রামের মোস্তাক আহমদের স্ত্রী রাজিয়া বেগম (২২)। তারা জানান, এই অবস্থায় থাকলে আগামী কয়েকদিনের মধ্যে অসংখ্য রোহিঙ্গা নারী, পুরুষ ও শিশুরা পানিবন্ধী অবস্থায় না খেয়ে মরা যাবে। বর্তমানে তাদের ঘরে কিছুই নেই। মঙ্গলবার সকালে অপরিচিত লোক এসে ১ প্যাকেট শুকনো খাবার দিয়েছিল, তা খেয়ে কোন রকম বেঁচে আছে।    উখিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সরওয়ার জাহান চৌধুরী বলেন, বৃষ্টির কারণে অনেক রোহিঙ্গা পরিবার খোলা আকাশের নিচে চরম মানবেতর দিন যাপন করছে। তবে বিভিন্ন লোকজন এসে তাদেরকে ঔষুধ, খাবার ও কাপড় দিয়ে সহযোগিতা করছে। বৃষ্টির পানি ও পাহাড়ী ঢলে সব কিছু নিঃশেষ হওয়ায় মানবিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে রোহিঙ্গাদের মাঝে।     প্রসঙ্গত, ২৪ আগস্ট মিয়ানমারের নতুন করে সংগঠিত সহিংস ঘটনার পর থেকে ৪ লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসে উখিয়ার ৭টি ও টেকনাফের ৫টি স্থানে আশ্রয় নিয়েছে। এরমধ্যে বালুখালীতে প্রায় দেড় লক্ষাধিক রোহিঙ্গা রয়েছে বলে জানিয়েছেন ক্যাম্প মাঝি মো. লালু।   বিডি-প্রতিদিন/১৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৭/মাহবুব


এই পাতার আরো খবর