করোনা সংকটের কারণে লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলায় অবস্থিত বুড়িমারী স্থলবন্দরের বিভিন্ন সেক্টরের প্রায় ৫৫ হাজার শ্রমিক কর্মহীন হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। করোনাভাইরাস প্রতিরোধে লালমনিরহাট জেলা প্রশাসন গত ২২ মার্চ থেকে বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি-রফতানি কার্যক্রম ৩১ মার্চ পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করে। এতে শ্রমিকরা কর্মহীন হয়ে পড়েন।
তবে সরকার ২৬ মার্চ থেকে আগামী ৪ এপ্রিল পর্যন্ত সাধারণ ছুটি ঘোষণা করায় আমদানি-রফতানি কার্যক্রম বন্ধ থাকবে আরও চারদিন। তবে আগামী ৪ এপ্রিলের পর আমদানি-রফতানি কার্যক্রম স্বাভাবিক হয়ে উঠবে সেই নিশ্চয়তাও নেই। এতে চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছে বন্দরে কর্ম করে খাওয়া ৫৫ হাজার শ্রমিক।
সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছে পাথর ভাঙা কারখানার শ্রমিকরা। এসব কারখানায় প্রায় ৩৩ থেকে ৩৬ হাজার শ্রমিক দৈনিকভিত্তিতে কাজ করতো বুড়িমারী স্থলবন্দরের বিভিন্ন কারখানায়। এসব এখন বন্ধ রয়েছে। একইসঙ্গে ট্রাক লোড-আনলোডের সাথে যুক্ত প্রায় ১০-১২ হাজার শ্রমিকও কর্মহীন হয়ে পড়েছে। এছাড়া সিএন্ডএফ এজেন্টের অফিসে কর্মরত শ্রমিকরাও কর্মহীন হয়ে পড়েছে।
বুড়িমারী স্থলবন্দর এলাকায় প্রায় আড়াই হাজারের বেশি পাথর ভাঙা কারখানা রয়েছে। এছাড়া প্রতিদিন গড়ে ৫-৬ শতাধিক আমদানি পণ্য বোঝাই ট্রাক আনলোড ও দেশীয় প্রায় এক হাজারের মতো ট্রাক প্রতিদিন লোডিং হয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হতো। ভারতে রফতানি মালামাল নিয়ে প্রতিদিন অর্ধশতাধিক পণ্যবাহী ট্রাক যাতায়াত করতো। কিন্তু করোনা ভাইরাসের প্রভাবের কারণে বর্তমানে এই স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি-রফতানি কার্যক্রম সম্পূর্ণ বন্ধ। ফলে কর্মমূখর বুড়িমারী স্থলবন্দর এখন সুনশান নীরবতায়।
শ্রমিক নেতা সফর উদ্দিন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘এসব শ্রমিকরা দিন আনে দিন খায়। এই শ্রমিকরা গত ৬ দিন যাবত কর্মহীন হয়ে বাড়িতে দিন কাটাচ্ছে। তাদের অনেকের ঘরেই খাবার নেই। আরও যে কতদিন পর কাজ শুরু হবে কেউ কিছুই বলতে পারছে না। এজন্য সরকারিভাবে এসব শ্রমিকদের তালিকা করে অন্তত চাল, আলু ও লবণ দেওয়া উচিত। বিষয়টি স্থানীয় সাংসদকে অবহিত করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।’
বুড়িমারী স্থলবন্দর সিএন্ডএফ এজেন্ট ও আমদানিকারক ব্যবসায়ী সায়েদুজ্জামান সাঈদ বলেন, আমদানি-রফতানি কার্যক্রম সম্পূর্ণভাবে বন্ধ রয়েছে। বুড়িমারীতে বিভিন্ন সেক্টরে নিয়োজিত প্রায় পঞ্চান্ন হাজার শ্রমিক কর্মহীন হয়ে পড়েছে। এসব শ্রমিক দিনে যা পেত, তা দিয়ে সংসার চালাত। এখন এসব পরিবারের খাবারের সংকট দেখা দিয়েছে। এজন্য সরকারিভাবে তাদের সাহায্য করা উচিত।
বুড়িমারী স্থলবন্দর কাস্টমস সহকারী কমিশনার(এসি) সোমেন কুমার চাকমা বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে সরকারিভাবে আমদানি রফতানি কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। এতে আমার কিছুই করার নেই। তবে শ্রমিকদের দিন খুব খারাপ যাচ্ছে। শ্রমিকদের উপজেলা প্রশাসন থেকে বিভিন্নভাবে আর্থিক সাহায্য দেওয়ার ব্যবস্থা করা যেতে পারে।
শ্রমিকদের সাহায্য করা প্রসঙ্গে পাটগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মশিউর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, দিন আনে দিন খায় এমন ১০ থেকে ১৫ হাজার শ্রমিক রয়েছে। এই বিষয়ে জেলা প্রশাসকের সাথে ইতোমধ্যে আলোচনা হয়েছে। যদি সরকারিভাবে কোনও সহযোগিতা আসে তাহলে সেটি এসব শ্রমিকদের হাতে পৌঁছে দেওয়া হবে।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল