ঈদ এলেই প্রাণ ফিরে পায় কুমিল্লার ঐতিহ্যবাহী শালবন বৌদ্ধ বিহার ও ময়নামতি জাদুঘর। প্রতিবছরের মতো আসন্ন ঈদ-উল-আজহার ছুটিতেও দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড় হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। শালবনের পাশাপাশি রূপবানমুড়া, কোটিলা মুড়া এবং আশপাশের পার্কগুলোতেও জমে উঠবে ঈদের আনন্দ।
তবে অনেকের মতে, শালবনের সম্ভাবনাকে পূর্ণভাবে কাজে লাগাতে হলে উন্নত করতে হবে যোগাযোগ ব্যবস্থা, আবাসন ও নিরাপত্তা অবকাঠামো। স্থানীয়রা চান, এই প্রাচীন ঐতিহ্যকে নতুন প্রজন্মের কাছে আরও আকর্ষণীয়ভাবে তুলে ধরতে নেওয়া হোক প্রয়োজনীয় উদ্যোগ।
সূত্র মতে, কুমিল্লা শহর থেকে মাত্র ৮ কিলোমিটার দূরের এই বিহার নির্মাণ করেন সপ্তম শতকে দেব রাজবংশের রাজা ভবদেব। এক সময় এটি ছিল একটি গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় শিক্ষাকেন্দ্র, যেখানে বিশ্বের নানা দেশ থেকে মানুষ জ্ঞান আহরণে আসতেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ঈদের ছুটি শুরুর পরও এখনো তেমন ভিড় জমেনি। তবে প্রকৃতি যেন অপেক্ষায় সাজিয়ে রেখেছে রঙের মেলা। বিহারের চারপাশে রঙ্গন, জারবেরা, নয়নতারা, গোলাপ, হেজপাতা, কফিআনসহ নানা ফুলে ভরে গেছে পরিবেশ। তালগাছে বাবুই পাখির বাসা, খেজুরগাছে ঝুলছে হলুদ ফলের থোকা—আর সেই সঙ্গে রঙিন পাখির কণ্ঠে মধুর গান।
সিসিএন শিক্ষা পরিবারের প্রতিষ্ঠাতা ড. তারিকুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘শালবন বিহারে যাওয়ার রাস্তাটি এখনো খুব সরু। বিশেষ করে বার্ড ও পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের মাঝের অংশে দুই বাস একসঙ্গে চলতে পারে না। রাস্তাটি প্রশস্ত করলে দর্শনার্থীদের যাতায়াত অনেক সহজ হবে।’
শিক্ষক ও পরিবেশ সংগঠক মতিন সৈকত মনে করেন, ‘ঢাকা ও চট্টগ্রামের মাঝামাঝি এবং মহাসড়ক ও রেলপথের সংযোগ থাকায় একদিনের ভ্রমণের জন্য শালবন আদর্শ। প্রকৃতির সঙ্গে মিশে থাকা এই ঐতিহাসিক স্থাপনা আমাদের অতীত জানারও একটি বড় সুযোগ।’
ইতিহাস গবেষক আহসানুল কবীর বলেন, ‘শালবন শুধু একটি বিনোদনকেন্দ্র নয়, এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক নিদর্শন। এর গুরুত্ব তুলে ধরতে বিভিন্ন স্থানে তথ্যচিত্র, ফেস্টুন ও পুস্তিকা সহজলভ্য করা উচিত।’
ময়নামতি জাদুঘরের কাস্টোডিয়ান মো. শাহীন আলম বলেন, ‘ঈদের ছুটিতে এখানে সাধারণত ভিড় লেগেই থাকে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবারও ভালো দর্শনার্থী আসবেন বলে আশা করছি। শালবনের সৌন্দর্য আরও বাড়াতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।’
বিডি প্রতিদিন/জামশেদ