ভারতীয় উপমহাদেশের শিখ সাম্রাজের সম্রাট রঞ্জিত সিং। তিনি অনেকগুলো বিয়ে করেছিলেন; তবে এ সংখ্যা কত তা নিশ্চিতভাবে জানা যায় না। কোনও কোনও সূত্রের দাবি, তার ২০ জন রানি ছিলেন। খুশবন্ত সিংয়ের মতে, ১৮৮৯ সালে ফরাসি পত্রিকা ‘লা ভলতেয়র’-এ রঞ্জিত পুত্র মহারাজা দিলীপ সিং বলেছিলেন, তার বাবার ৪৬ জন রানির মধ্যে এক জন তার মা।
রঞ্জিত সিং'র প্রথম বিয়ে ১৫ বছর বয়সে। তবে এই বিবাহের পিছনে ছিল কূটনীতি। ফলে এই বিয়ে দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। তার প্রথম স্ত্রী মেহতাব কউর বিয়ের পরেও মূলত থাকতেন নিজের মায়ের সঙ্গেই। এর পর রঞ্জিত সিং দ্বিতীয় বিয়ে করেন রাজ কউর-কে। রঞ্জিত সিংহের আরও যে রানিদের কথা ইতিহাসে কমবেশি উল্লেখ রয়েছে, তারা হলেন মোরান সরকার, চাঁদ কউর, লক্ষ্মী, মেহতাব কউর, সমন কউর, গুড্ডান, বনসো, গুলবাহার, গুলাব, রাম দেবী, রানি, বন্নত, হর এবং ধন্নো।
অন্য দিক দিয়ে রঞ্জিত সিংহের রানি মোরান সরকার প্রথম জীবনে তিনি ছিলেন রাজনর্তকী। সেখান থেকে শুধু রঞ্জিত সিং'র রানিই নন, হয়ে উঠেছিলেন দক্ষ প্রশাসকও।
ইতিহাস-বিস্মৃত মোরানের পূর্ব পরিচয় স্পষ্ট জানা যায় না। অনুমান, তিনি ছিলেন কাশ্মীরের মেয়ে। সেখান থেকে এসেছিলেন অমৃতসরের কাছে একটি গ্রামে। তার আসল নাম ছিল অন্য। মোরান শব্দের অর্থ ময়ূরী। এই নাম তাকে দিয়েছিলেন রঞ্জিত সিং।
মোরান সুন্দরীকে প্রথম দেখেই মুগ্ধ রঞ্জিত সিং স্থির করলেন এই অসামান্য সুন্দরী নর্তকীকে তিনি বিয়ে করবেন। সব বাধার বিরুদ্ধে গিয়ে মোরানকে বিয়ে করেছিলেন ২২ বছর বয়সী রঞ্জিত সিং।
শিখ সম্রাটের দায়িত্ব গ্রহণের এক বছর পরে, ১৮০২ খ্রিস্টাব্দে বিয়ে হয়েছিল দু’জনের। সদ্য পরিণীতা মোরানকে নিয়ে রঞ্জিত সিং চলে গিয়েছিলেন লাহোর। সেখানে পাপর মণ্ডিতে স্ত্রীর জন্য তৈরি করিয়েছিলেন নতুন মহল। সেখানে দরবার বসিয়ে প্রজাদের সঙ্গে কথা বলতেন মোরান। প্রশাসক হিসেবে তার নামের পাশে বসেছিল ‘সরকার’ উপাধি। তার অনুরোধে হাভেলির পাশেই রঞ্জিত সিং তৈরি করিয়েছিলেন মসজিদ। নাম দিয়েছিলেন, জামিয়া মসজিদ তারো মোরান। প্রজাপালক মোরান সরকারের প্রতীক ছিল ময়ূরের পালক। তার জমানায় শিখ সাম্রাজ্যের টাকশালে তৈরি হয়েছিল কিছু মুদ্রা। তার শাসনকালের প্রতীক হিসেবে মুদ্রায় থাকত ময়ূরের পালকের ছবি।
মুসলিম ধর্মাবলম্বী মোরানকে বিয়ে করার জন্য রঞ্জিত সিংকে যথেষ্ট বিরোধিতার মুখে পড়তে হয়েছিল। কিন্তু তিনি নিজের প্রেমের প্রতি স্থির ছিলেন। তবে স্বামীর খ্যাতি বিশেষ কিছু দেখে যেতে পারেননি মোরান। জানা গিয়েছে, এই মহিষী ছিলেন স্বল্পায়ু।
রঞ্জিত সিংহের জীবনে একাধিক নারী এসেছেন। কিন্তু মোরানের প্রয়াণ তার কাছে ছিল অপূরণীয় ক্ষতি। রঞ্জিত সিংহের জীবনীকার তথা ঐতিহাসিক ফকির সৈয়দ ওয়াহিউদ্দিন তার বই ‘দ্য রিয়েল রঞ্জিত সিং’-এ লিখেছেন, মোরানের মৃত্যুতে কীভাবে মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েছিলেন শিখ সাম্রাজ্যের অধীশ্বর।
প্রতিকূলতাকে জয় করে শিখ সাম্রাজ্যকে একত্রিত করেছিলেন রঞ্জিত সিং। শেষ দিকে ভেঙে পড়েছিল তার শরীর। ১৮৩৯ খ্রিস্টাব্দের ২৭ জুন ঘুমের মধ্যেই মারা হন তিনি। তার সঙ্গে সহমরণে গিয়েছিলেন চার জন রানি ও সাত জন রক্ষিতা।
সহমরণে যেতে হয়নি জিন্দ কউরকে। ১৮৩৫ খ্রিস্টাব্দে শেষ বার মহিষী হিসেবে তাকে বিবাহ করেছিলেন রঞ্জিত সিং। জিন্দ-ই ১৮৩৮ খ্রিস্টাব্দে জন্ম দেন দিলীপ সিংয়ের। নাবালক উত্তরাধিকারের মা হওয়ায় জিন্দ রক্ষা পেয়েছিলেন সহমরণ প্রথা থেকে। মহারাজা দিলীপ সিং ছিলেন শিখ সাম্রাজ্যের শেষ সম্রাট। এর পর সবই চলে গিয়েছিল ব্রিটিশদের দখলে।
সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা
বিডি প্রতিদিন/ফারজানা