সময়ের সঙ্গে দেশে প্রতিদিনই করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। ‘হোম কোয়ারেন্টাইনের’ পর এবার মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়ছে ‘লকডাউন’ প্রসঙ্গ। এ নিয়ে ইতোমধ্যে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। লকডাউনের আতঙ্কে আগে থেকে একসঙ্গে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে বাজারের তালিকা নিয়ে দোকানে ছুটছেন সাধারণ মানুষ। বিগত কয়েক দিন ধরেই চলছে এমনটি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বিভিন্ন উদ্যোগ নিলেও আতঙ্ক কাটছে না। এখনো চাহিদার চেয়ে বেশি পণ্য কিনছেন অনেকেই।
রবিবার লালমনিরহাটের বেশ কয়েকটি এলাকার বাজার ও নিত্যপণ্যের দোকান ঘুরে এবং ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অন্যদিনের তুলনায় বিগত কয়েক দিন ধরে বাজারে ক্রেতার চাপ বেড়েছে। মুদি দোকান গুলোতে বিক্রি বেড়েছে বেশি। সবাই মূলত একসঙ্গে চাল, ডাল, তেল, লবণ, চিনি, পেঁয়াজ, রসুন, আদা, মসলাজাতীয় পণ্য কিনছেন বেশি।
এদিকে বাজারে ক্রেতার চাপ বেশি হওয়ায় দরকষাকষি ছাড়াই পণ্য কিনতে হচ্ছে বলে অভিযোগ সাধারণ ক্রেতাদের। সেনা মৈত্রি হকার্স মার্কেটে কথা হয় আসাদুজ্জামান নামে এক ক্রেতার সঙ্গে। তিনি বলেন, হঠাৎ ক্রেতা বেড়ে যাওয়ায় বিক্রেতারা এক রকম এক দামেই পণ্য বিক্রি করছেন। দাম মলামলির সুযোগ মিলছে না। এ যেন ‘নিলে নেন, না নিলে রাস্তা মাপেন’ অবস্থা।
বাজার সংশ্লিষ্টরা জানান, গত মঙ্গলবার থেকে ক্রেতার চাপ বেড়েছে। ওই দিন লকডাউনের বিষয়টি বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে অনেকেই প্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রী আগাম কিনে রাখতে শুরু করেছেন। যার বাসায় মাসে ২০ কেজি চাল লাগে, দেখা যাচ্ছে তিনি এক বস্তা (৫০ কেজি) কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। ২ কেজি পেঁয়াজের বদলে কিনছেন ৫ কেজি করে। ২ কেজি ডালের বদলে ৪ কেজি কিংবা তার বেশি ডাল কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। সেনা মৈত্রি হকার্স মার্কেটের এক চাল ব্যবসায়ী জানান, মানুষ চালের দোকানেই ভিড় করছেন বেশি। সাধারণ দিনের তুলনায় বিগত কয়েক দিন ধরে চালের বিক্রি কয়েক গুণ বেড়ে গেছে। করোনায় গৃহবন্দি হয়ে পড়ার ভয়ে বেশি করে আগাম চাল কিনছেন সবাই। এ সুযোগে চালের দামও বেড়েছে সপ্তাহের ব্যবধানে। মিনিকেট, আটাশসহ অন্য চালের কেজিতে ৫ থেকে ৮ টাকা করে বেড়ে গেছে বলে জানান আমিনুল। বস্তায় বেড়েছে প্রায় ৭০ টাকা। মিল থেকেই বাড়তি দামে চাল বিক্রি হওয়ায় বাজারেও দাম বেশি বলে জানান তিনি।
যদিও খাদ্যমন্ত্রী সাধনচন্দ্র মজুমদার বলেছেন, দেশে চাল ও গমের মজুদ প্রয়োজনের চেয়ে বেশি রয়েছে। সরকারি গুদামে বর্তমানে সোয়া ১৪ লাখ টন চাল মজুদ আছে। সুতরাং চাল-গম নিয়ে ভোক্তাদের আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। এ অবস্থার সুযোগ নিয়ে কেউ দাম বাড়াতে চাইলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অথচ বাজারে এখনো বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে চাল।
বাজারে দাম বাড়ার তালিকায় আরও রয়েছে মসুর ডাল, চিনি, ডিম ও আলু। মসুর ডাল কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১০০-১১০ টাকায়। পাঁচ দিন আগেও যা ছিল ৯০-১০০ টাকা। চিনি কেজিতে ৫ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৬৮-৭০ টাকায়। ফার্মের ডিম ডজনে (১২ পিস) ১০ টাকা দাম বেড়ে এখন বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকায়। গত সপ্তাহে যা ছিল ৯০ টাকা। খুচরাবাজারে আলুর দাম কেজিতে ৫ টাকা বেড়েছে। গত সপ্তাহে ১৮-২০ টাকা দরে বিক্রি হওয়া আলু বর্তমানে ২২-২৫ টাকা কেজি। অন্যদিকে পেঁয়াজের দাম অপরিবর্তিত থাকলেও চায়না রসুনের দাম কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১৬০-১৮০ টাকায়।
বাজারে গুঁড়াদুধসহ বিদেশি শিশুখাদ্য ও ডায়াপারের দামও বাড়তি। সেই সঙ্গে হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও বিভিন্ন জীবাণুনাশকের দাম এখনো বাড়তি। সরবরাহ ঘাটতি দেখিয়ে বিদেশি ব্র্যান্ডের ডায়াপারের দাম প্যাকেটপ্রতি বেড়েছে সর্বোচ্চ ১০০ টাকা পর্যন্ত।
এদিকে বেশি দামে মাস্ক বিক্রি করায় লালমনিরহাট শহরের দুটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান থেকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. ওমর ফারুক।
এদিকে জেলা প্রশাসক আবু জাফরও মাঠে নেমেছেন, তিনি নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য অযৌক্তিকভাবে বৃদ্ধির জন্য ভোক্তা সংরক্ষণ আইন ২০০৯ এর আওতায় জেলায় ১৩ জনকে ২৪,০০০/- টাকা অর্থদণ্ড প্রদান করেছেন। এ ধারা অব্যাহত থাকবে বলেও তিনি জানান।
বিডি প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন