প্রতিপক্ষের রাজনীতির খেলা বন্ধ করতে গিয়ে নতুন রাজনৈতিক খেলার মধ্যে অবতীর্ণ হয়েছেন থেরেসা মে। গত ১৮ মে তিনি যখন আগাম নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছিলেন তখন কমবেশি সবাই অবাক হয়েছিলেন। মাত্র বছর দুয়েক আগেই তার পূর্বসুরী ডেভিড ক্যামেরন ব্রিটেনের সাধারণ নির্বাচনে জয়লাভ করেছিলেন। সংসদের নির্ধারিত নিয়ম অনুযায়ী ২০২০ সালেই নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল।
সবচেয়ে বড় কথা হলো তাকে যখন আগাম নির্বাচনের কথা জিজ্ঞেস করা হয়েছিল তখন জোর দিয়েই তিনি সে প্রস্তাব নাকচ করে দিয়েছিলেন। ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে থেরেসা মে এও বলেছিলেন, আমি মনে করি আগামী নির্বাচনটা ২০২০ সালেই হচ্ছে। আমি আগাম নির্বাচন দিচ্ছি না।
কিন্তু ইস্টার মানডের পর সবকিছুতেই ব্যাপক পরিবর্তন চলে আসে। ডাউনিং স্ট্রিটের সামনে দাঁড়িয়ে থেরেসা মে আগাম নির্বাচনের ডাকই দিলেন। কারণ হিসেবে বললেন, জুনের মাঝামাঝি সময়ে শুরু হতে যাওয়া ব্রেক্সিট (ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে ব্রিটেনের বেরিয়ে যাওয়া) প্রক্রিয়ায় দলের অবস্থান শক্তিশালী করতে তিনি নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কারণ বিরোধী লেবার পার্টি, স্কটিশ ন্যাশনাল পার্টি, লিবারেল ডেমোক্রেটরা এ প্রক্রিয়ায় বাধা তৈরি করতে পারে।
জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষণে থেরেসা মে আরও বলেন, যদি আমরা এখন নির্বাচন না দেই তাহলে তাদের (বিরোধী দলগুলোর) রাজনৈতিক খেলা চলতে থাকবে। ফলে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে ব্রেক্সিট আলোচনা কঠিন হয়ে পড়বে এবং পরবর্তী নির্বাচনেও তার প্রভাব পড়বে।
অর্থাৎ সময়টাই থেরেসা মের কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিল। সবাই ব্রেক্সিট আলোচনায় রাজি হলেও ২০১৯ সালের ২৯ মার্চে আগে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ছাড়তে পারবে না ব্রিটেন। ফলে ব্রেক্সিটের ফলে কী অর্জন হয়েছে, কী হয়নি তা দেখানোর জন্য সরকারের হাতে সময় থাকতো এক বছরের সামান্য কিছু বেশি সময়। কিন্তু ২০১৭ সালে নির্বাচনে নতুন করে পাঁচ বছর সময় পেলে তা থেরেসা মের সময় শুভ পরিণতি বয়ে আনবে। কারণ ব্রেক্সিটের পর মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে যে জটিলতা দেখা দেবে সেটা নিয়েও কাজ করার জন্য যথেষ্ট সময় পাওয়া যাবে।
কিন্তু ব্রেক্সিটকে থেরেসা মে কারণ হিসেবে দেখালেও নানা রাজনৈতিক বিশ্লেষক বিষয়টিকে ভিন্ন আঙ্গিকে ব্যাখ্যা করেছেন। জনমত জরিপে অনেক এগিয়ে ছিলেন থেরেসা মে। আর এ বিষয়টিকেই কাজে লাগাতে চেয়েছিলেন তিনি। ভেবেছিলেন সংসদে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা সময়ের ব্যাপার মাত্র। কিন্তু জনমত জরিপে ২০ পয়েন্ট এগিয়ে থাকার বিষয়টিই এখন বুমেরাং হয়েছে তার জন্য। নির্বাচনে ভোট গণনার পর দেখা গেছে প্রতিদ্বন্দ্বী লেবার পার্টির অবস্থান সংসদে আরও শক্ত হয়েছে। তাদের আসন বেড়ে গেছে। কমেছে থেরেসা মের কনসারভেটির পার্টির আসন। আরও তার দলও একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে পারেনি। ফলে এখন সংখ্যালঘিষ্ঠ দলগুলোর দিকেই ঝুঁকতে হবে তাকে। ঝুলন্ত সংসদ নিয়ে থেরেসা মে ব্রেক্সিট প্রক্রিয়া কীভাবে এগিয়ে নেবেন সেটাই এখন দেখার অপেক্ষায় থাকবে সবাই।(বিবিসি অবলম্বনে ফারজানা)
বিডি প্রতিদিন/৯ জুন, ২০১৭