২০১৭ সালে ক্ষমতাগ্রহণের পর বিভিন্ন দেশের ওপর শুল্ক আরোপ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। শুল্ক আরোপের কারণে বর্তমানে অন্যতম অর্থনৈতিক পরাশক্তি চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যযুদ্ধ চলছে। প্রতিবেশী দেশ মেক্সিকোর ওপরও শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন ট্রাম্প। তার সমালোচনা করে নিউ ইয়র্ক টাইমসে কলাম লিখেছেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ পল ক্রুগম্যান।
এতে তিনি লিখেছেন, কোনো পদক্ষেপ না নেয়া পর্যন্ত মেক্সিকোর ওপর শুল্ক আরোপের পরিকল্পনা করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প- কিন্তু তিনি এটা নির্দিষ্ট করে বলেননি যে মেক্সিকোকে কী করতে হবে- আশ্রয় প্রার্থীদের স্রোত বন্ধ করা নিশ্চিতভাবেই অবৈধ: যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য আইন প্রেসিডেন্টকে বেশ কয়েকটি কারণে শুল্ক আরোপের অধিকার দিয়েছে কিন্তু অভিবাসীদের ঠেকানোর বিষয়টি তার মধ্যে নেই।
স্পষ্টতই এটা যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক চুক্তির লঙ্ঘন। এটা অধিকাংশ আমেরিকানদের জীবনযাত্রার মান কমিয়ে দেবে, উৎপাদন খাতে চাকরি নষ্ট করবে এবং এতে কৃষকরাও ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।
চলুন সবকিছুকে একপাশে সরিয়ে রেখে সত্যিকারের খারাপ জিনিস নিয়ে কথা বলি। ট্রাম্প বলেছেন যে 'শুল্ক বস্তুতই একটি সুন্দর শব্দ,' কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কের বাস্তব ইতিহাস ততটা সুন্দর নয়- শুধু শুল্কই একমাত্র কারণ নয়, টুইটারের প্রধান (অনেক বেশি টুইট করায় ব্যঙ্গ করে লেখক ট্রাম্পকেই বুঝিয়েছেন) যাই বলেন না কেন, আমেরিকানদের ওপরই করের বোঝা বাড়ে বিদেশির ওপর নয়।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো ১৯৩০ সাল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে শুল্কনীতি ছিল দুর্নীতির একটি আখড়া এবং রাজনীতিতে এটা বিশেষ স্বার্থে ব্যবহৃত হতো। ১৯৩৪ সালে করা পারস্পারিক বাণিজ্য চুক্তি আইনের উদ্দেশ্যই ছিল আগের শুল্ক নীতির এই খামখেয়ালিপনা বন্ধ করা।
বাণিজ্য সংক্রান্ত ট্রাম্পের এই অনিয়ন্ত্রিত ভুল পদক্ষেপ যেটাকে আমরা মনে করছি বৈধ নিয়মনীতি মেনেই হচ্ছে- এগুলো পুরনো দিনের সেই খামখেয়ালিপনাকে ফিরিয়ে আনছে, এবং পুরো আমলের সেই দুর্নীতি- যদি এটা এরইমধ্যে না হয়ে থাকে তো- শুরু হওয়ার দিনটাও বেশি দূরে নয়।
তাছাড়া, শুল্ক নীতি বিশ্বের পরাশক্তি হিসেবে আমেরিকার ভূমিকার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তাই যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি এটা প্রত্যাশা থাকে যে তারা একই সাথে বিশ্বাসযোগ্য ও দায়িত্বশীল হবে- যুক্তরাষ্ট্র যে চুক্তি করবে তার প্রতি সম্মান দেখাবে, এবং বৃহৎ পরিসরে বললে যুক্তরাষ্ট্র পুরো বিশ্বের ওপর প্রভাবের বিষয়টি মাথায় রেখেই তাদের নীতি প্রণয়ন করবে।
ট্রাম্প সেসবের তোয়াক্কাই করছেন না। মেক্সিকোর ওপর শুল্ক আরোপ নাফটার লঙ্ঘন, যেটি উত্তর আমেরিকায় পণ্যের অবাধ প্রবাহের নিশ্চয়তা দিয়েছে, এবং বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের বাধ্যবোধকতার বিষয়টিও মাথায় রাখছেন না ট্রাম্প, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা শুধু নির্দিষ্ট কিছু শর্তেই নতুন শুল্ক আরোপের বিষয়ে বৈধতা দিয়ে থাকে। তাই আমেরিকা এখন বিশ্ববাজারে একজন আইনবিহীন অভিনেতাতে পরিণত হয়েছে, যারা শুল্ক নীতির অপব্যবহার করছে।
বিডি প্রতিদিন/ফারজানা