‘জয় শ্রী রাম’ ধ্বনি বিতর্কে এবার মুখ খুললেন অভিনেত্রী ও চলচ্চিত্র পরিচালক অপর্ণা সেন। তিনি বলেছেন, ‘এই ধ্বনি শুনে মমতা ব্যানার্জি যেভাবে তার মেজাজ হারাচ্ছেন এবং অকথ্য কথা বলছেন; তাতে তিনি নিজের কবর নিজেই খুঁড়ছেন।’ অপর্ণা চাঞ্চল্যকর এই মন্তব্যটি করেছেন ভারতের একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলে (এনডিটিভি) একান্ত সাক্ষাতকার দিতে গিয়ে। একইসাথে ধর্মের সাথে রাজনীতি এবং হিন্দুত্বের সাথে জাতীয়তাবাদকে মিশিয়ে ফেলা নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তিনি।
অপর্ণা সেন বলেন, ‘রাজনীতিতে ধর্মীয় স্লোগানের ব্যবহার আমার ভাল লাগে না। আমার মতে ধর্ম ও রাজনীতি দুইটি বিষয়কে পৃথক করে রাখা উচিত। এই দুইটি বিষয় এক হয়ে গেলেই সব ধরণের সমস্যা দেখা দেয়। আমার মতে এটা ঠিক নয়।’
তিনি মনে করেন, ‘ভারতের মতো গণতান্ত্রিক দেশে সকলেরই মত প্রকাশের স্বাধীনতা আছে। কেউ ‘জয় শ্রী রাম’ কেউ ‘আল্লাহু আকবর’ বা ‘জয় মা কালী’ ধ্বনি দিতে পারে। আপনি তা আটকাতে পারেন না। কিন্তু আমাদের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি যেভাবে গাড়ি থেকে নেমে এসে ‘জয় শ্রী রাম’ ধ্বনি আটকানোর চেষ্টা করছেন এবং অশ্রাব্য কথা বলছেন; সেটা তার পক্ষে মানানসই নয়।’
এই চিত্র পরিচালক জানান, ‘মমতা ব্যানার্জি বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে এরাজ্যে ক্ষমতায় এসেছেন এবং রাজ্যের জন্য উনি অনেক কাজ করেছেন। আমার মনে পড়ে আমি যখন স্কাউটিং-এর জন্য যাই তখন দেখি রাস্তাঘাট অনেক সুন্দর; যা আগে ছিল না। তিনি মাওবাদী সমস্যার সমাধান করেছেন। দার্জিলিংসহ পাহাড়ি এলাকাতেও এখন আমরা ছুটি কাটাতে যেতে পারি; যেটা হয়তো আগে অতটা ছিল না। কিন্তু তারপরও বলবো তিনি অত্যাধিক আবেগপ্রবণ। তিনি কোন কিছু করার আগে একবারও ভাবেন না। তাকে যদি অনেক দিন ক্ষমতায় থাকতে হয়, তবে তার কথা বলায় লাগাম দেওয়াটা রপ্ত করতে হবে। তার আবেগকে নিয়ন্ত্রিত করতে হবে। কোন কিছু বলার আগে তাকে প্রথমে ভাবতে হবে। এক্ষেত্রে তার সাথে থাকা অমিত মিত্র বা সৌগত রায়ের মতো মানুষদের পরামর্শ নিতে হবে। মাথায় যা আসলো আর বলে দিলাম; এই অভ্যাস পরিত্যাগ করতে হবে।’
এসময় অপর্ণা সেন বলেন ‘বাংলার মানুষ খুবই হতাশ এবং মুখ্যমন্ত্রী এই ধরণের আচরণ করুক তারা তা চায় না। উনি তার ভোটারদের তার বিপক্ষে নিয়ে যাচ্ছেন। আমার মনে এতে মুখ্যমন্ত্রী নিজের কবর নিজেই খুঁড়ছেন।’
মমতার এই ধরনের আচরণের প্রভাব আগামী বিধানসভার নির্বাচনে পড়বে কি না? সেই প্রশ্নের উত্তরে অপর্ণার জবাব ‘আগামী নির্বাচনে মমতার লড়াই কঠিন হতে চলেছে। সমাজের মধ্যবিত্ত, উচ্চবিত্ত ও শহুরের একটা বড় অংশ বিজেপির দিকে চলে গিয়েছে। এই ব্যাপারটা আমাকে চিন্তায় রেখেছে। আমার বিশ্বাস প্রধানমন্ত্রী মোদি দেশের মঙ্গলে কাজ করবেন। কিন্তু ওদের মৌলিক চিন্তাভাবনা নিয়ে আমার আপত্তি আছে। ওরা হিন্দুত্ব এবং জাতীয়তাবাদকে এক করে দেখে; যেটা আমাকে চিন্তিত করে। বরং আমি গান্ধীজির বহুত্ববাদী নীতিকেই সমর্থন করবো।’
বিডি-প্রতিদিন/শফিক