আবুল বাশার স্যার, মতিঝিল সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ে আমাদের বাংলা, অংক, ভূগোল- সবই পড়াতেন। মেদহীন, পেটানো শরীর। বরিশাল বাড়ি। একটু লম্বা চুল। স্যারকে দেখলেই ভয়ে বুক ধুকপুক করতো সবার। রাশভারী হলেও তিনি দারুণ ক্রীড়াপ্রেমী ছিলেন। খেলাধুলার খোঁজ-খবর রাখতেন। আমি আবার একটু বেশিই খেলাধুলা করতাম। তাই আমি মারও খেতাম একটু বেশি। তবে তাঁর শাসনের পরেরদিন আবার ডেকে আদরও করতেন। স্যারকে আমরা ভয় পেতাম। কিন্তু ভীত ছিলাম না। দারুণ পড়াতেন বলে আমি ভীষণ ভক্ত ছিলাম।
মনে পড়ে এসএসসির আগে টেস্ট পরীক্ষায় বাংলা দ্বিতীয় পত্রে খুব সম্ভবত ৪৪/৪৫ পেয়েছিলাম। রেজাল্ট দেওয়ার আগেরদিন আমি দুপুরে স্কুলে যাই। দেখা হয়ে যায় বাশার স্যারের সাথে। পাশ কাটাতে চেয়েছিলাম। কিন্তু স্যার দেখে ফেলেন। আমাকে ডাক দিয়ে কোনো কথা না বলে জুলফি ধরে টান দেন। ব্যথায় চিৎকার করে উঠি। কিন্তু জুলফি টানার কোনো কারণ খুঁজে পাইনি। ভ্যাবলার মতো চেয়ে থাকি। ব্যথায় চোখে জল চলে আসে। স্যার বুঝতে পেরে খুব আদর করে বলেন, ‘সারাদিন খেলাধুলা করলে হবে? পড়াশোনা করতে হবে না? সামনে মেট্রিক পরীক্ষা। আপাতত খেলাধুলা বন্ধ রেখে পড়াশোনা কর।’ যখন মাথা ঝাঁকিয়ে চলে আসবো। তখনই আবার বলে উঠেন, ‘আসিফ শোন, তুই পরীক্ষায় থার্ড ডিভিশন পেয়ে পাশ কর, আমি কিছু মনে করবো না। যদি তুই ব্যাসিকটা ঠিক করে নিতে পারিস। ব্যাসিক ভালো থাকলে জীবনে কখনও কোথাও ঠেঁকবি না।’
আমি চুপ করে শুনছিলাম। তবে স্যারের শেষ কথাটা আমার কানে এখনও বাজে। বন্ধুর মতো বারান্দায় পাশাপাশি হাঁটতে হাঁটতে বলতে থাকেন- ‘জীবনে অ্যাম্বিশন থাকা ভালো। মনে রাখিস সবাই যেমন ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার হতে পারে না। তেমনি সবাই ভালো মানুষ হতে পারে না। ভালো মানুষ হওয়ার চেষ্টা করবি।’
সেই থেকে কথাটি কানে লেগে আছে। আমি ডাক্তারও নই, ইঞ্জিনিয়ারও নই। স্যারের কথা মতো ভালো মানুষ হলাম কি না, জানি না। আমি এখন আমার ছেলে রুসলান, মেয়ে মাইশুকে বলি, ‘ডাক্তার হও বা ইঞ্জিনিয়ার হও, খুশি হবো। কিন্তু তারচেয়ে বেশি খুশি হবো, যদি ভালো মানুষ হও।’ লোভ-লালসার ঊর্ধ্বে থেকে এখন সমাজে ভালো মানুষের বড্ড অভাব।
(ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)
বিডি-প্রতিদিন/শআ