৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ ১৯:০২

কর্ণফুলী নদীর অবৈধ স্থাপনা একদিকে উচ্ছেদ অন্যদিকে আতঙ্ক

রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম

কর্ণফুলী নদীর অবৈধ স্থাপনা একদিকে উচ্ছেদ অন্যদিকে আতঙ্ক

দেশের অন্যতম প্রধান কর্ণফুলী নদীর উত্তর পাড়ে চলছে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ কার্যক্রম। গত তিন দিন ধরে অভিযান চলে নদীর তীরের সদরঘাট থেকে লবণ ঘাট পর্যন্ত। তবে তৃতীয় কর্ণফুলী শাহ আমানত সেতুর পূর্ব পাশের বিশাল  এলাকা জুড়ে গড়ে ওঠা জনবসতিতে এখন দেখা দিয়েছে উচ্ছেদ আতঙ্ক।

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, কর্ণফুলীর নদীর মোহনা থেকে মোহরা পর্যন্ত প্রায় ১০ কিলোমিটার তীরে গড়ে ওঠা দুই হাজার ১৮১টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে অভিযান চলছে। গত সোমবার থেকে শুরু হওয়া অভিযানের প্রথম দিনে ছোট-বড় ৮০টি স্থাপনা উচ্ছেদ, দ্বিতীয় দিনে ৩০টি স্থাপনা এবং তৃতীয় দিনে (বুধবার) ৩০টি স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। অভিযানে মোট পাঁচ একর ভূমি উদ্ধার করা হয়।

ইতোমধ্যে সদর ঘাট, লাইটারেজ জেটি, মাঝির ঘাট, আনু মিয়া মাঝির ঘাট, লবন ঘাট, ডিবি মসজিদসহ আশপাশের এলাকায় অভিযান পরিচালিত হয়। অভিযানে নেতৃত্ব দেন পতেঙ্গা সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) তাহমিলুর রহমান।

অভিযানে দুই শতাধিক পুলিশ ও র‌্যাব সদস্য উপস্থিত ছিলেন। তবে বুধবারের অভিযানে লবণ ঘাট এলাকার থাকা ৫২টি লবণ মিল ছিল। এসব মিলের অধিকাংশই মালিকরা উচ্ছেদ করেন।            

সহকারী কমিশনার (ভূমি) তাহমিলুর রহমান বলেন, ‘অভিযানে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হচ্ছে। তবে উচ্ছেদের আগেও অনেকেই তাদের স্থাপনা নিজ নিজ উদ্যোগে সরিয়ে নিয়েছে। অভিযান অব্যাহত থাকবে।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘সদর ঘাট এলাকায় উচ্ছেদ অভিযান শেষ হলে শাহ আমানত সেতুর পূর্ব দিকে শুরু করা হবে। ওই এলাকায় জনবসতি বেশি বলে এ ব্যাপারে আমাদের প্রয়োজনীয় সব প্রস্তুতি নেওয়া আছে। আশা করি এবার কর্ণফুলী নদীর সবগুলো অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হবে।’

বুধবার দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কর্ণফুলী নদীর উত্তর পাড়ের সদর ঘাট এলাকায় স্থাপনা বেশি। কিন্তু এর বিপরীতে শাহ আমানত সেতুর পূর্ব পাড় এলাকায় নানা স্থাপনার সঙ্গে আছে জনবসতিপূর্ণ বস্তি, দোকান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। আছে শুটকি শুকানোর টং। ফলে এ অংশের মানুষদের মধ্যে এখন আতঙ্ক ভর করেছে। 

শুটকি ব্যবসায়ী জসিম উদ্দিন বলেন, ‘সরকার যখন এখানে উচ্ছেদ করবে তাহলে আমাদের তো ছেড়ে চলে যেতে হবে। তাই আমরা এখান থেকে চলে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি।’   

জানা যায়, ২০১৬ সালের ১৬ আগস্ট হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ কর্ণফুলী নদীর দুই তীরে গড়ে ওঠা স্থাপনা সরাতে ৯০ দিনের সময় বেঁধে দেয়। ২০১৭ সালের ২৫ নভেম্বর উচ্ছেদ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য এক কোটি ২০ লাখ টাকা অর্থ বরাদ্দ চেয়ে ভূমি মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয় চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। তবে সে সময় অর্থ না পাওয়ায় উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়নি। পরে ভূমি মন্ত্রীর হস্তক্ষেপে অর্থ সংস্থানের পর অভিযান শুরু হয়।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ২০১০ সালের ১৮ জুলাই পরিবেশবাদী সংগঠন হিউম্যান রাইটস পিস ফর বাংলাদেশ এর পক্ষে জনস্বার্থে করা এক রিট আবেদনে হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ কর্ণফুলী নদী দখল, মাটি ভরাট ও নদীতে সব ধরনের স্থাপনা নির্মাণ বন্ধের নির্দেশ দেয়। একই সঙ্গে স্থানীয় প্রশাসনকে পরবর্তী ছয় মাসের মধ্যে নদীর প্রকৃত সীমানা নির্ধারণ করে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়।

আদালতের নির্দেশের পর চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন ২০১৪ সালের ৯ নভেম্বর কর্ণফুলীর দুই তীরে সীমানা নির্ধারণের কাজ শুরু করে। নগরের নেভাল একাডেমি সংলগ্ন নদীর মোহনা থেকে মোহরা এলাকা পর্যন্ত অংশে ২০১৫ সালে জরিপের কাজ শেষ করা হয়। জরিপে নদীর দুই তীরে ২ হাজার ১৮১টি অবৈধ স্থাপনা চিহ্নিত করে জেলা প্রশাসন। প্রতিবেদনটি ২০১৫ সালের ৯ নভেম্বর উচ্চ আদালতে দাখিল করা হয়। এরপর ২০১৬ সালের ১৬ অগাস্ট হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ কর্ণফুলী নদীর দুই তীরে গড়ে ওঠা স্থাপনা সরাতে ৯০ দিনের সময় বেঁধে দেয়।


বিডি-প্রতিদিন/বাজিত হোসেন

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর