নওগাঁর ধামইরহাট থানায় রক্ষিত প্রশ্নপত্রের ট্রাংক খোলা অবস্থায় পাওয়ার ঘটনায় ওই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ (ওসি) আরও চার পুলিশ সদস্যকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। এ ঘটনায় মোট ছয় পুলিশ সদস্যকে প্রত্যাহারের ঘটনা ঘটলো।
রবিবার দুপুরে নওগাঁর পত্নীতলা সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এএসপি) শরিফুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। প্রত্যাহার হওয়া পুলিশ কর্মকর্তা ও পুলিশ সদস্যরা হলেন, ধামইরহাট থানার ওসি আব্দুল মালেক, পুলিশ সদস্য রেজুয়ানুর রহমান, আতিকুর রহমান ও মেহেদী হাসান। এ ঘটনায় এর আগে আরো দুই পুলিশ সদস্যকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। তারা হলেন, ধামইরহাট থানার উপপরিদর্শক (এসআই) জাকিরুল ইসলাম ও পুলিশ সদস্য ইকবাল হোসেন।
পত্নীতলা সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এএসপি) শরিফুল ইসলাম জানান, আসন্ন এইচএসসি প্রশ্নপত্রের বেশ কয়েকটি বাক্স ধামইরহাট থানা হেফাজতে রাখা হয়। প্রশ্নপত্রের বাক্সগুলো থানার মালখানা কক্ষে রাখার কথা। কিন্তু কয়েকটি বাক্স ধামইরহাট থানায় আসামি রাখার হাজতখানা ঘরে রাখা হয়েছিল। ওই হাজতখানায় গত মঙ্গলবার রাতে মাদক মামলার এক আসামিকে রাখা হয়। গভীর রাতে ওই আসামি ট্রাংকের সিলগালা উঠিয়ে তালা খুলে ফেলে। ট্রাংকের ভেতরে প্যাকেটবন্ধ অবস্থায় থাকা প্রশ্নপত্র বের করে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ফেলে হাজত ঘরের মধ্যে। কয়েকটি ছিড়েও ফেলে। পরদিন সকালে থানার কর্তব্যরত অফিসারের নজরে আসে এটি। ঘটনা জানার পর ওইদিন থানার লকআপ বা হাজত পাহারার দায়িত্বে নিয়োজিত একজন এসআই ও একজন কনস্টেবলকে প্রত্যাহার করে নওগাঁ পুলিশ লাইনে ক্লোজ করা হয়। পরবর্তীতে এ ঘটনায় দায়িত্ব অবহেলার অভিযোগে গত শনিবার ধামইরহাট থানার ওসিসহ আরও চার পুলিশ সদস্যকে প্রত্যাহার করে নওগাঁ পুলিশ লাইনে ক্লোজ করা হয়েছে। এ ঘটনায় পুলিশ বিভাগের পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। তদন্তে অভিযুক্ত পুলিশ সদস্য কিংবা অন্য কারও বিরুদ্ধে দায়িত্ব অবহেলার প্রমাণ মিললে তাদের বিরুদ্ধে আরো কঠোর বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তিনি আরো জানান, থানা হাজতে থাকা অবস্থায় যে ব্যক্তি প্রশ্নপত্রের ট্রাংক খোলেন সেই ব্যক্তিকে হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে থানা পুলিশ গ্রেফতার করে। সরকারি সম্পদ বিনষ্টের অভিযোগে ওই আসামির বিরুদ্ধে নতুন একটি মামলা করেছে পুলিশ। গত বুধবার আদালতের মাধ্যমে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এদিকে থানায় রক্ষিত প্রশ্নপত্রের ট্রাংক খোলা পাওয়ার ঘটনায় রাজশাহী শিক্ষাবোর্ডের আসন্ন এইচএসসি পরীক্ষার ইতিহাস দ্বিতীয় পত্রের প্রশ্নপত্র বাতিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজশাহী শিক্ষাবোর্ড কর্তৃপক্ষ।
রাজশাহী শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আ.ন.ম মোফাখখারুল ইসলাম জানান, ইতিহাস বিষয়ের যে সেটটি থানায় নষ্ট হয়েছে সেটিতে আর পরীক্ষা নেওয়া হবে না। রাজশাহী বিভাগের আট জেলায় আগামী ১৯ জুলাই বিকল্প সেটে পরীক্ষা নেওয়া হবে।
নওগাঁর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) সাদিয়া আফরিন জানান, গত মঙ্গলবার রাতে নওগাঁর ধামইরহাট থানায় রক্ষিত প্রশ্নপত্রের ট্রাংক খোলা অবস্থায় পাওয়ার পর জেলা পুলিশ ও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পৃথক দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ওই প্যাকেটে ৫০টি প্রশ্নপত্র ছিল। সবকটিই উদ্ধার করা হয়েছে। কয়েকটি ছেঁড়া থাকলেও কোনো প্রশ্নপত্র হারিয়ে যায়নি।
বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন