দিনাজপুরে মা-ছেলেকে অপহরণ করে মুক্তিপণ দাবির ঘটনায় মামলার বাদী জাহাঙ্গীর আলমের বাবা লুৎফর রহমানকে আদালতের মাধ্যমে পরিবারের জিম্মায় দেওয়া হয়েছে। তিনি আতঙ্কগ্রস্থ হয়ে আত্মগোপনে ছিলেন বলে জানা গেছে।
রবিবার দুপুরে তাকে পরিবারের সদস্যদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। দিনাজপুর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) ওসি মোস্তাফিজুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের ওসি মোস্তাফিজুর রহমান জানান, অপহরণের ঘটনার পর আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে লুৎফর রহমান আত্মগোপনে ছিলেন। পরে চিরিরবন্দর থানা পুলিশ তাকে উদ্ধার করে আমাদের কাছে দেয়। আমরা আদালতের মাধ্যমে তাকে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেছি। ইতোমধ্যেই তিনি বাড়িতে ফিরে গেছেন।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তিনি এমনিতেই অসুস্থ ছিলেন, পাশাপাশি তার হৃদরোগের সমস্যা আছে। এছাড়া তিনি ডায়াবেটিসের রোগী। তাই আমরা তাকে কোনোরকম জিজ্ঞাসাবাদ করিনি।
কোর্ট ইন্সপেক্টর মো. মুনিরুজ্জামান জানান, মা-ছেলেকে অপহরণ করে মুক্তিপণ দাবির ঘটনায় মামলার বাদী জাহাঙ্গীর আলমের বাবা লুৎফর রহমানকে রবিবার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে উপস্থাপন করা হয়। পরে আদালতের বিজ্ঞ বিচারক শিশির কুমার বসু লুৎফর রহমানকে তার পরিবারের জিম্মায় দেন।
এদিকে রংপুর সিআইডি পুলিশের এএসআই হাসিনুর রহমান ও কনস্টেবল আহসানুল হককে গত শনিবার বিকালে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তবে রংপুর সিআইডি পুলিশের এএসপি সারোয়ার কবীর সোহাগের বিষয়ে কি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে তা জানা যায়নি।
এই মামলায় মোট ছয়জনের জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়েছে। এছাড়া ১২ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে। মামলার ১০ জনের নাম ছাড়াও আরও অজ্ঞাত কয়েকজনকে আসামি করা হয়েছে। এর মধ্যে পাঁচজন গ্রেফতার হয়ে কারাগারে। অন্য আসামিদের গ্রেফতারের জন্য অভিযান চালাচ্ছে বলে জানায় পুলিশ।
২৬ আগস্ট বিকেলে মামলায় রংপুর সিআইডি অফিসের এএসপিসহ তিন পুলিশ সদস্যের জামিন আবেদন করলে শুনানী শেষে আদালতের বিজ্ঞ বিচারক শিশির কুমার বসু ৩ জনেরই জামিন আবেদন না মঞ্জুর করেন।
উল্লেখ্য, জানা যায়, চলতি মাসে রংপুর সিআইডির কাছে পলাশ নামের এক ব্যক্তি চিরিরবন্দর উপজেলার লুৎফর রহমানের বিরুদ্ধে ৫০ লাখ টাকার প্রতারণার অভিযোগ করেন। অভিযোগের ভিত্তিতে গত ২৩ আগস্ট রাত সাড়ে ৯টায় লুৎফরের বাড়িতে যান এএসপি সারোয়ার কবিরসহ তিনজন। লুৎফরকে না পেয়ে তার স্ত্রী ও ছেলেকে একটি মাইক্রোবাসে উঠিয়ে সৈয়দপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে মুক্তিপণ দাবি করেন। তারা পরিবারের লোকজনকে ফোন করে ১৫ লাখ টাকা দাবি করেন। পরে এ ঘটনায় থানা পুলিশের কাছে যান ভুক্তভোগীর স্বজনরা। এক পর্যায়ে মঙ্গলবার বিকালে ভুক্তভোগীর স্বজনরা সাড়ে ৮ লাখ টাকা নিয়ে তাদের সঙ্গে দেখা করতে চান। তারা প্রথমে রানীরবন্দর আসতে বলেন। সেখানে আসলে তাদেরকে টাকা নিয়ে দিনাজপুর সদরের দশমাইল আসতে বলা হয়। আবার দশমাইল আসলে সদরের বাশেরহাট আসতে বলে। পরে বিকেল ৫টায় দিনাজপুর সদরের দশমাইল এলাকায় জনতা সন্দেহ হলে মাইক্রোবাসটি আটক করে পুলিশকে খবর দেয়। পরে দিনাজপুর জেলা পুলিশ ও সিআইডি মিলে সদরের বাশেরহাট থেকে তাদেরকে আটক করে। পরে জানা যায় অপহরণকারীরা পুলিশের সিআইডির কর্মকর্তা।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল