বন্যার পানির সাথে ঘর ভেসে গেছে লক্ষ্মীপুরের রহমতখালী নদী পাড়ের হাজারো বাসিন্দাদের। শেষ সম্বল খুইয়ে দিশেহারা খেটে খাওয়া এসব মানুষ। কোথায় মাথা গোঁজার আশ্রয় পাবেন, সংসারই বা কীভাবে চালাবেন-জানেন না কিছুই। স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে বাঁধ নির্মাণ আর পুনর্বাসনে সহায়তা চান তারা।
সরেজমিন লক্ষ্মীপুর সদরের টুমচর ইউনিয়নের মধ্য কালিরচর রহমতখালি নদীর পাড় ঘুরে দেখা যায়, পানির তীব্র স্রোতে ভাঙছে ভিটেমাটি, কাঁদছে নদী পাড়ের বাসিন্দারা। চোখের সামনে তিন পুরুষের ভিটে নিমিষেই শেষ।
নদীপাড়ে নির্বাক বসে আছে তাহেরা বেগম। জীবনের শেষ পর্যায়ে এসে নতুন এক যুদ্ধ তার। চোখের পানিতে বর্ণনা দিলেন ঘর ভেসে যাওয়ার দুর্বিষহ সময়ের। তাহেরা বলেন, স্বামীর রেখে যাওয়া শেষ সম্বল কেড়ে নিয়েছে বন্যার পানি। ভিটেমাটি কিছুই রাখল না। এখন কোথায় যাব কোথায় থাকব রাস্তার উপরে থাকি। নিমিষেই সব শেষ।
তার পাশেই দিশেহারা তাহেরা বেগমের ছেলে হারুনুর রশীদ। নদী ভাঙনে ঘরের আসবাবপত্র হারিয়েছেন তিনিও। চার মেয়ে আর বৃদ্ধ মাকে নিয়ে কোথায় ঘর বাঁধবেন, জানেন না কিছুই। অবলোক চোখে নদীর দিকে তাকিয়ে তার অসহায়ত্বের বর্ণনা দিয়ে সরকারি সহযোগিতার আকুতি জানান তিনি। মধ্য কালিরচরের তাহেরা বেগমর মতো এমন শতাধিক পরিবার গত কয়েকদিনে সর্বস্ব খুইয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সদর উপজেলার পশ্চিম এলাকা থেকে পূর্ব এলাকার চন্দ্রগঞ্জ পর্যন্ত অনেকে এখনো পানিবন্দি হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। খাদ্য ও সুপেয় পানি সংকটে ভুগছেন বলে জানান অনেকে।
এমনই একজন মিজানুর রহমান। উঠানে থাকা শেষ সম্বল গাছ কেটে কিছু সঞ্চয়ের চেষ্টা তার। মাথা গোঁজার আশ্রয় পেতে সরকারি সহায়তা প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন মিজানুর। লক্ষ্মীপুর জেলার এমন ছোট বড় প্রায় ২০০টি নদী-খাল দখল-দূষণে এখন বিপর্যস্ত। ফলে বন্যার পানি নামার পরিবর্তে উল্টো নদীকে ঘিরেই নানামুখী সংকট স্থানীয় এলাকাবাসীর।
তারা বলছেন, সব নদী-খাল দখল দূষণ করায় এমন ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে লক্ষ্মীপুরে। জেলার ১৮ লাখ বাসিন্দার মধ্যে ৮ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে মৎস্য, কৃষি ও প্রাণিসম্পদেরও।
সচেতনরা বলছেন, বন্যার পানি আগ্রাসী রূপ নেওয়া রহমতখালি নদী যেভাবে ভিটেমাটি কেড়ে নিচ্ছে, অচিরেই বিলীন হতে পারে এই জনপদ। নদী পাশে শক্তিশালী বাঁধ নির্মাণ, সব খাল-নদী অবৈধ দখলদারদের থেকে উদ্ধারসহ পুনরায় খনন আর ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা কিছুটা স্বস্তি দিতে পারে নদী পাড়ের বাসিন্দাদের।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী নাহিদুজ্জামান খান বলেন, খাল-নদী দখল উচ্ছেদে অভিযান চলছে। যেখানেই পানি প্রবাহে বাধা সেখানেই প্রশাসনসহ পাউবো যৌথভাবে অভিযান করছে। এছাড়া রহমতখালি ভাঙনে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণের কথা জানান তিনি।
বিডি প্রতিদিন/এমআই