সংশ্লিষ্ট দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও কয়লা সংকটে পড়ে ব্যয় বেড়েছে দা, বঁটি, চাপাতি ও ছুরিসহ নিত্য ব্যবহার্য লোহার সামগ্রীতে। এর ওপর আধুনিক মেশিনে তৈরি হচ্ছে চকচকে চাপাতি-ছুরি। এতে করে কামারদের হাতে বানানো চাপাতি ও ছুরির চাহিদা অনেকাংশে কমে গেছে।
একসময়ের জমজমাট ফেনীর কামারশিল্প এখন শহরে সংকুচিত হয়ে আছে মাত্র অর্ধশতাধিকের মতো দোকানে। শহরের মহিপাল, লালপোল, সহদেবপুর, মাস্টারপাড়া, পাঁছগাছিয়া, তারানিবাস, বারাহিপুর ও খাজুরিয়া সড়কে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে এসব কামারশালা। এ পেশার সঙ্গে শহরে এখনো জড়িত রয়েছেন ৬০ জনের মতো কামারশিল্পী। তবে এ পেশার জড়িত অনেকেই ঝুঁকছেন অন্য পেশায়।
শহরের ট্রাংক রোডের কামারশালার মালিক পলাশ কর্মকার বলেন, কোরবানির ঈদের সময় একটু ব্যস্ততা বাড়ে। কিন্তু এক মাসে ব্যস্ততা বাড়লেও বাকি ১১ মাস বসে কাটাতে হয়। তখন আর তেমন কাজ থাকে না। একসময় কামারশালায় ঢুকলেই চোখে পড়ত লাল হয়ে যাওয়া লোহার টুকরো পেটানোর দৃশ্য, হাতুড়ির শব্দে মুখর থাকত চারপাশ। কিন্তু কালের পরিক্রমায় সেই চিত্র এখন বিরল। হারাচ্ছে আমাদের শিল্প, আরেকদিন আমরাও হারিয়ে যাব।
খাজুরিয়ার কামারশিল্পী সুকেন কর্মকার বলেন, আধুনিক যন্ত্রপাতির মাধ্যমে তৈরি রেডিমেড ছুরি-চাপাতির কারণে আমাদের হাতে তৈরি লোহার জিনিসপত্রের চাহিদা আগের তুলনায় অনেকাংশে কমে গেছে। ফলে কামারশিল্পের সাথে জড়িতদের সংখ্যাও দিন দিন কমে যাচ্ছে। তবে অনেকেই কোনো উপায় না পেয়ে তাদের পৈতৃক এ পেশাকে ধরে রাখার চেষ্টা করছেন।
রঘুনাথ নামের আরেক কামারশিল্পী বলেন, আমার পূর্বপুরুষরা এই কাজটা করে আসছেন, তাই আমি এখনো এই পেশায় আছি। এখন বাজারে আধুনিক পণ্য বেশি আসায় আমাদের পণ্য বিক্রি কমে গেছে। ছোটবেলায় আমি দেখেছি, আমার বাবা-চাচারা ঈদের সময় খুব ব্যস্ত থাকতেন। তারা দিনরাত পরিশ্রম করেও গ্রাহকের চাহিদা পূরণে হিমশিম খেতেন। কিন্তু এখন আধুনিক মেশিনে তৈরি ছুরি-চাপাতি সহজিই পাওয়া যায়। তাই আমাদের ব্যবসায় অনেকটাই ক্ষতি হয়েছে। আমার অনেক সঙ্গী কামার এখন অন্য কাজ করছে, কেউ কেউ নতুন কিছু ব্যবসায় হাত দিয়েছে।
নারায়ণ কর্মকার নামের অপর কামারশিল্পী বলেন, আগে অনেক ক্রেতা ছিল, কিন্তু এখন ক্রেতারা মার্কেটের আধুনিক মেশিনের সাহায্যে তৈরি দা-ছুরি বেশি কিনছে। ফলে আগের মতো অর্ডার পাই না। আমরা কোনো রকম এই পেশাকে টিকিয়ে রেখেছি। আমাদের পরের প্রজন্ম এই পেশাকে টেকাতে পারবে না।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কামারশিল্পটি রক্ষায় সরকার উদ্যোগ না নিলে এই প্রাচীন পেশাটি অচিরেই বিলুপ্তির পথে চলে যাবে।
এই বিষয়ে ফেনী শহর সমাজসেবা অফিসার শাহ কায়সার মাহমুদ বলেন, কামারশিল্প একটি পেশা। এখানে সরাসরি ভাতা দেওয়ার সুযোগ নেই। কারণ, এই পেশার মাধ্যমে কামাররা আয়-রোজগার করতে সক্ষম। তবে প্রান্তিক পেশাজীবীদের জীবনমান উন্নয়নে নেওয়া প্রকল্পের আওতায় কামারদের প্রশিক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। কারণ, কামার পেশাটি সমাজের প্রান্তিক পর্যায়ে পড়ে। প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কামারশিল্পীরা আরও আধুনিক ও লাভজনকভাবে এই পেশাকে চালিয়ে যেতে পারবেন।
বিডি প্রতিদিন/কেএ