বৃহস্পতিবার, ২৪ জানুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

মিনি স্ট্রোক

মিনি স্ট্রোক

মস্তিস্কে রক্ত সরবরাহের স্বল্পতা বা ঘাটতি হলে মস্তিষ্কের কোনো বিশেষ অংশের কার্যকলাপ দারুণভাবে ব্যাহত হয়, এই অবস্থাকে স্ট্রোক বলা হয়। স্ট্রোককে দুই ভাগে বিবেচনা করা হয়। যেমন : যদি দীর্ঘমেয়াদি অকার্যকরিতা থাকে তাকে পরিপূর্ণ স্ট্রোক বা স্ট্রোক বলা হয় এবং স্বল্পমেয়াদি অকার্যকরিতাকে মিনি স্ট্রোক বলা হয়। মিনি স্ট্রোকের রোগীরা কয়েক মিনিট থেকে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে। সাধারণভাবে হঠাৎ মস্তিষ্কের কোনো রক্তনালি বন্ধ হয়ে গেলে ওই রক্তনালির মাধ্যমে মস্তিষ্কের যে অংশ রক্ত সরবরাহের মাধ্যমে অক্সিজেন ও পুষ্টি পেয়ে থাকত সে অংশে অক্সিজেন ও পুষ্টি না পাওয়ার জন্য বহুবিদ সমস্যায় পতিত হয়। রক্ত সরবরাহ কমে গেলে মস্তিষ্কের নির্দিষ্ট অংশের কার্যক্রম কমে যায় বা ব্যাহত হয় এবং যদি রক্ত সরবরাহ সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়ে যায়, তবে ওই নির্দিষ্ট অংশ সম্পূর্ণভাবে মরে যায়। যার পরিণতি খুবই ভয়াবহ হয়ে থাকে। শরীরের প্রতিটি অঙ্গের কার্যকলাপ মস্তিষ্কের নির্দিষ্ট অংশের মাধ্যমে পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত হয়ে থাকে। তাই মস্তিষ্কের কোনো অংশের কার্যক্রম ব্যাহত হলে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে দুর্বলতা, অবসাদ, অনুভূতির ব্যাঘাত দেখা দিয়ে থাকে। যেমন : হঠাৎ শরীরের কোনো অংশ দুর্বল হয়ে যাওয়া, অবস হয়ে যাওয়া যেমন : হাত, পা বা শরীরের ডান পাশ অথবা বামপাশ প্যারালাইসিস হয়ে যাওয়া, কানে কম শোনা, কথা বলতে না পারা বা কথা অস্পষ্ট হয়ে যাওয়া, মুখের কোনো একপাশে দুর্বলতা দেখা দেওয়া, কথা শুনতে বা বুঝতে সমস্যা হওয়া, শরীরের যে কোনো অংশের অনুভূতি কমে যাওয়া অথবা অনুভূতিহীন হয়ে পড়া। উপরোল্লেখিত লক্ষণগুলোকে ব্রেন স্ট্রোকের লক্ষণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কখনো কখনো মস্তিষ্কের বিভিন্ন অংশে সাময়িকভাবে রক্ত সরবরাহ ব্যাহত হয়ে থাকে। এ ধরনের অবস্থায় উল্লেখিত লক্ষণগুলো রোগীর শরীরে পরিলক্ষিত হতে দেখা যায়। তবে স্বল্প সময়ের মধ্যেই (কয়েক মিনিট থেকে কয়েক ঘণ্টা) রক্ত সরবরাহ স¦াভাবিক হয়ে যাওয়ায় রোগীর শরীরে লক্ষণগুলো দূরীভূত হয়ে যায়, এবং রোগী সুস্থ স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে। এ ধরনের অবস্থাকেও স্ট্রোক বলা হয়। যেহেতু রোগী ২৪ ঘণ্টার আগেই সুস্থ-স¦াভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে তাই এ স্ট্রোককে মিনি স্ট্রোক হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, রক্তে উচ্চমাত্রার কোলেস্টেরল বিদ্যমান থাকলে রোগীকে মিনি স্ট্রোকে আক্রান্ত হতে দেখা যায়। মিনি স্ট্রোক একটি পরিপূর্ণ স্ট্রোকের পূর্বাভাস। তাই কেউ মিনি স্ট্রোকে আক্রান্ত হলে পরবর্তী সময়ে পরিপূর্ণ স্ট্রোকের হাত থেকে মুক্তি পেতে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস ও রক্তের উচ্চমাত্রার কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি। মিনি স্ট্রোকের সময় স্ট্রোকের লক্ষণগুলো হালকাভাবে বা মৃদুভাবে পরিলক্ষিত হয়ে থাকে। সাধারণভাবে হৃৎপিণ্ডের রক্তনালির মতো মস্তিষ্কের রক্তনালিতেও ব্লকের সৃষ্টি হয়। এ ধরনের ব্লকের মাধ্যমে পরিপূর্ণ স্ট্রোকের আশঙ্কা বেশি। অনেক সময় হৃৎপিণ্ডের অসুস্থতার জন্য  হৃৎপিণ্ডের মধ্যে রক্তকনিকা জমাটবেঁধে ছোট ছোট আকারের গুটি সৃষ্টি হতে পারে। এসব জমাটবাঁধা রক্তের গুটি রক্তনালির মাধ্যমে প্রবাহিত হয়ে মস্তিষ্কের রক্তনালি বন্ধ করে দিতে পারে। এবং পরবর্তীতে তাড়াতাড়ি সেসব জমাট বাঁধা রক্তের গুটি গলে গিয়ে রক্ত সরবরাহ স্বাভাবিক হয়ে যায়। এ ধরনের জমাটবাঁধা রক্তের মাধ্যমে রক্তনালি বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে অধিকাংশ সময় মিনি স্ট্রোক হয়ে থাকে।

ডা. এম শমশের আলী (কার্ডিওলজিস্ট)

সিনিয়র কনসালটেন্ট (প্রা.), ঢাকা মেডিকেল

কলেজ ও হাসপাতাল, ঢাকা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর