আগামী শনিবার উদ্যাপিত হবে ঈদুল আজহা বা কোরবানির ঈদ। এ সময় যারা কোরবানির পশু কিনতে বিভিন্ন হাটে যান তাদের মধ্যে বেশির ভাগেরই পশু পছন্দ বা দরদাম করার পূর্ব অভিজ্ঞতা থাকে না বললেই চলে। অথবা থাকলেও খুব কম। কারণ, বছরে শুধু এই ঈদকে কেন্দ্র করেই পশুর হাটে যাওয়া হয় এ সময়। এ ছাড়া অন্য সময় পশুর হাটে যাওয়া পড়ে না বললেই চলে। তাই পশু নির্বাচনের কিছু মৌলিক বিষয় জানা থাকলে নির্বাচনের ভুলভ্রান্তি কম হবে এবং একটি উৎকৃষ্টমানের পশু কেনা সম্ভব। এ ছাড়া বর্তমান প্রেক্ষাপটে হাটের পাশাপাশি অনলাইনে গরু কেনা-বেচাও বেশ জমে উঠেছে। ইতোমধ্যে বেশকিছু পোর্টাল বা প্ল্যাটফর্ম অনলাইনে গরু কেনাবেচায় নজর কেড়েছে। পাশাপাশি অনেকে এখন সরাসরি খামার থেকে গরু কিনে থাকেন। ইতোমধ্যে ঢাকা ও ঢাকার পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন খামারে ভিড় জমাচ্ছেন পশুর ক্রেতারা। যারা খামার থেকে গরু কিনে থাকেন তাদের বেশির ভাগই ইতোমধ্যে গরু কিনে ফেলেছেন। কেউ কেউ আবার গরু কিনে সেই খামারেই রেখে দিয়েছেন এবং ঈদের এক দিনে আগে বাসায় নিয়ে আসবেন। তবে হাট কিংবা খামারে যেখান থেকেই কোরবানির গরু বা পশু কেনা হোক না কেন এ বিষয়ে আমাদের একটু যত্নবান হতে হবে। থাকতে হবে কিছুটা সতর্ক। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, কোরবানিতে বেশির ভাগ মানুষই চর্বিযুক্ত নাদুসনুদুস পশু নির্বাচন করে থাকেন, যা একটি ভুল ধারণা বা ব্যাপারটা এতটা গভীরে কখনো ভাবিনি আমরা। স্বাস্থ্যগত দিক চিন্তা করলে দেখা যায়, পশুর চর্বি মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকি বৃদ্ধি করে হৃদরোগ, উচ্চরক্তচাপ ও শারীরিক ওজন বৃদ্ধিতে মুখ্য ভূমিকা রাখে। পশুর চর্বিতে প্রচুর পরিমাণে খারাপ কোলেস্টেরল বিদ্যমান থাকায় তা হৃৎপিণ্ড ব্লক তৈরিতে সহায়ক ভূমিকা রাখে। এত সব বিবেচনা করলে কম চর্বিসম্পন্ন পশু নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই। অন্যদিকে গবেষকরা বলছেন, হরমোন প্রয়োগে মোটাতাজা করা পশুর মাংস খেলে মানুষের ব্রেস্ট, কোলন এবং ফুসফুসের ক্যানসার হওয়ার আশঙ্কা থাকে। যদিও মোটাতাজাকরণের জন্য স্বীকৃত স্বাস্থ্যসম্মত পদ্ধতি রয়েছে কিন্তু গরুকে দ্রুত মোটা ওজনদার করার জন্য অনেক ক্ষেত্রেই কোনো কোনো খামারি অনৈতিকভাবে স্টেরয়েডসহ বেশ কিছু হরমোন প্রয়োগ করে থাকেন। তাদের উদ্দেশ্য থাকে বেশি ওজন মানেই বেশি মাংস; বেশি মাংস মানেই বেশি লাভ, যা মোটেও ঠিক নয়। এটা সত্য যে বর্তমানে এ ধরনের অসাধু কর্মকাণ্ড অনেকটাই কমে এসেছে। এরপরও এসব বিষয়ে আমাদের যথেষ্ট সচেতন থাকতে হবে।
সুস্থ গরু চেনার উপায়
* অতিরিক্ত মুনাফা লাভের আশায় কিছু কিছু অসাধু ব্যবসায়ী মোটাতাজাকরণ ওষুধ খাইয়ে স্বাভাবিকের চাইতে অতিরিক্ত মোটাতাজা করে হাটে নিয়ে আসেন। এসব গরু খুব একটা নড়াচড়াও করে না, ঝিমাতে থাকে। অন্যসব গরুর চেয়ে অপ্রত্যাশিত ফোলা থাকে। লক্ষ করুন আপনার পছন্দের গরু চটপটে কি না? কারণ, স্টেরয়েড খাওয়ালে গরু নড়াচড়ার বদলে ঝিম মেরে থাকবে। এ ছাড়া স্টেরয়েড ট্যাবলেট খাওয়ানো গরুর ঊরুতে প্রচুর মাংস থাকে। তাই এ বিষয়ে সচেতন হতে হবে।
* শিং ভাঙা, লেজ কাটা, জিহ্বা, খুর, মুখ, গোড়ালি খত আছে কি না তা ভালো করে দেখে নিতে হবে।
* সুস্থ গরু চিনতে হলে পাঁজরের হাড়েও খেয়াল করতে হবে। সুস্থ গরুর পাঁজরের হাড়ে উঁচুনিচু থাকে এবং চোখে নড়াচড়া করবে।
* এ ছাড়া যদি গরুর নাকের ওপরটা ভেজা ভেজা থাকে তাহলে বুঝতে হবে গরু সুস্থ। এ ছাড়া গরুর মুখের সামনে খাবার ধরলে যদি সঙ্গে সঙ্গে জিহ্বা দিয়ে টেনে নেয় বোঝা যায় গরুটি সুস্থ। কারণ অসুস্থ পশু খাবার খেতে চায় না।
* গরুর কুঁজ মোটা ও টানটান থাকলে বুঝতে হবে গরুটি সুস্থ।
* গরুর পাঁজরের হাড়ে যে তিন কোনা গর্ত থাকে যাকে ফ্লায়েন্ট জয়েন্ট বলে। তাতে কোনা রয়েছে কি না সেটি খেয়াল রাখতে হবে।
* গরুর শরীরে তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হলে বুঝবেন গরুটি অসুস্থ। অনেক সময় গরুর পিঠের দিকে কিছুক্ষণ হাত বোলালেই বোঝা যায় গরুটির শরীরের তাপমাত্রা কেমন।
* সুস্থ গরুর চামড়ার ওপর দিয়ে কয়েকটা পাঁজরের হাড় বোঝা যাবে।
* সুস্থ গুরু বাঁধা অবস্থায় প্রায়ই যেনতেনভাবে ছুটতে চাইবে। ঘন ঘন লেজ নাড়বে। হাঁকডাকে জোরালো হবে। এ দুরন্তপনার মধ্যেও পরক্ষণেই আবার সামনে রাখা খাদ্যে মুখ ডোবাবে।
* সুস্থ গরু চেনার আরেকটি উপায় হচ্ছে মুখে জাবর কাটবে। তাই যেখান থেকেই গরু কিনুন না কেন, এসব বিষয়ে যথেষ্ট খেয়াল রাখতে হবে।