এক॥
আর্জেন্টিনার বিপ্লবী চে গুয়েভারার আত্মোৎসর্গের মাস অক্টোবর। ১৯৬৭ সালের ৯ অক্টোবর এই মহান বিপ্লবী লাতিন আমেরিকার দেশ বলিভিয়ায় বন্দি অবস্থায় হত্যাকাণ্ডের শিকার হন। বাংলাদেশের এক মহান বিপ্লবী কমরেড সিরাজ সিকদারের জন্মও একই মাসে ১৯৪৪ সালের ২৭ অক্টোবর। শরীয়তপুর জেলার ভেদরগঞ্জের লাকার্তা গ্রামে।
ডেটলাইন ১ জানুয়ারি, ১৯৭৫। চট্টগ্রামে নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হন সিরাজ সিকদার। তাঁর এই গ্রেপ্তার রহস্যাবৃত। বলা হয়ে থাকে সিরাজ সিকদারকে ধরিয়ে দেন তাঁর দলেরই এক কমরেড। নারী বা প্রেমঘটিত বিরোধকে কেন্দ্র করে। গ্রেপ্তারের পর সিরাজ সিকদারকে কঠোর প্রহরায় ঢাকায় আনা হয়। পরদিন ২ জানুয়ারি আর্জেন্টিনার বিপ্লবী চে গুয়েভারার মতো সাভারে বন্দি অবস্থায় হত্যাকাণ্ডের শিকার হন তিনি। সিরাজ সিকদারের জন্ম এক অভিজাত পরিবারে। তাঁর বাবা আবদুর রাজ্জাক সিকদার ছিলেন ছায়গাঁওয়ের জমিদার পরিবারের সন্তান। দেশের বিশিষ্ট ভাস্কর ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের অধ্যাপক শামীম সিকদার তাঁর বোন।
অনেকেরই জানা, বাংলাদেশের স্বাধীনতার কথা প্রথম উচ্চারিত হয় বামপন্থিদের মুখে। শুধু কথায় নয়, কাজেও তাঁরা সংগঠিত হন এ মহান উদ্দেশ্য সামনে রেখে। কিন্তু চীন ও সোভিয়েত ইউনিয়নের দ্বন্দ্বকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের বামপন্থিরা দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েন ষাট দশকে। দেশের স্বাধীনতা ও মুক্তির বদলে মস্কো ও বেইজিংয়ের পক্ষে তত্ত্ব কপচানি তাঁদের কর্তব্য হয়ে দাঁড়ায়। বাম রাজনীতির এই বিচ্যুতি থেকে সরে আসার দুঃসাহস দেখান এক তরুণ, যাঁর নাম সিরাজ সিকদার। যিনি ১৯৬৭ সালে ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি নির্বাচিত হন। ওই বছরের শেষ দিকে তিনি বুয়েট থেকে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রি অর্জন করেন। ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে যোগ দেন সিএন্ডবিতে। তিন মাস পর সরকারি চাকরি ছেড়ে একটি বেসরকারি কোম্পানি খোলেন ব্যবসার জন্য। সরকারি চাকরি কিংবা ব্যবসা কোনোটিতেই মন বসেনি সিরাজ সিকদারের। ১৯৬৮ সালের ৮ জানুয়ারি সমমনা কর্মীদের নিয়ে ‘পূর্ব বাংলা শ্রমিক আন্দোলন’ নামে একটি গোপন সংগঠন গড়ে তোলেন। সংগঠনের লক্ষ্য ছিল সব ধরনের সুবিধাবাদ পরিহার করে একটি সাচ্চা কমিউনিস্ট পার্টি গড়ে তোলা। পূর্ব বাংলা শ্রমিক আন্দোলনের তাত্ত্বিক মূল্যায়নে বলা হয়, পূর্ব বাংলা পাকিস্তানের উপনিবেশ। স্বাধীন গণপ্রজাতন্ত্রী পূর্ব বাংলা গঠনের ডাক দেয় তারা। স্বাধীনতার এই ডাক তরুণ সমাজের একাংশের মধ্যে সাড়া জাগায়। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় ঝালকাঠি জেলার ভিমরুলীর পেয়ারাবাগানে মুক্ত এলাকা গড়ে তোলা হয় সিরাজ সিকদারের নেতৃত্বে। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে ওই প্রতিরোধ সংগ্রামে বিপুলসংখ্যক তরুণ যুক্ত হন।
মুক্তিযুদ্ধকালে ১৯৭১ সালের ৩ জুন পেয়ারাবাগানের ঘাঁটি এলাকায় মার্কসবাদ, লেনিনবাদ ও মাও সে তুংয়ের চিন্তাধারার আলোকে পূর্ব বাংলার সর্বহারা পার্টি নামে একটি বিপ্লবী মতাদর্শের দল গঠন করেন। পেয়ারাবাগান ছিল ঝালকাঠি, পিরোজপুর ও বরিশালের সীমান্তবর্তী দুর্গম এলাকা। পেয়ারাবাগানকে ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করে সিরাজ সিকদার সর্বহারা পার্টিকে ধারেকাছের বিস্তীর্ণ এলাকায় এগিয়ে নিতে সক্ষম হন। স্বাধীনতার পর সর্বহারা পার্টি শেখ মুজিবের নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে সোচ্চার ভূমিকা পালন করে। ১৯৭৩ সালের এপ্রিল মাসে সিরাজ সিকদার পূর্ব বাংলার জাতীয় মুক্তিফ্রন্ট গঠন এবং মুজিব সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। জোতদার ও মহাজনদের নিধন করার কর্মসূচিও ঘোষণা করেন তাঁরা। ১৯৭৩ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত সর্বহারা পার্টি এবং জাসদের কর্মকাণ্ড আওয়ামী লীগ সরকারের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। সরকারবিরোধী এই দুটি সংগঠনের হাতে বিপুলসংখ্যক সরকারদলীয় সংসদ সদস্য ও নেতা-কর্মী নিহত হন। ১৯৭৩ সালের পর সর্বহারা পার্টি পার্বত্য চট্টগ্রামে ঘাঁটি গড়ার চেষ্টা চালায়। তাদের সঙ্গে যোগ দেয় মুক্তিযুদ্ধকালে পাকিস্তানি বাহিনীর সহযোগী হিসেবে ভূমিকা পালনকারী রাজাকার, আলবদর বাহিনীর সদস্যদের একাংশ। ১৯৭৪ সালে সেনাবাহিনী থেকে পদত্যাগ করেন মুক্তিযুদ্ধের বীর উত্তম কর্নেল জিয়াউদ্দিন। বাম মতাদর্শে বিশ্বাসী তাহের, মঞ্জুর ও জিয়াউদ্দিন মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানে আটকা পড়েন। ১৯৭১ সালের ২৬ জুলাই মেজর তাহের, মেজর মঞ্জুর, মেজর জিয়াউদ্দিন ও ক্যাপ্টেন পাটোয়ারী অ্যাবোটাবাদ সেনানিবাস থেকে গোপনে বেরিয়ে আসেন। তাঁরা রাতের আঁধারে একটি সেকেন্ড হ্যান্ড ভক্সওয়াগণ নিয়ে শিয়ালকোট হয়ে ২৭ জুলাই ভারতে পৌঁছেন। সেখান থেকে কলকাতা পৌঁছেন ৭ আগস্ট। মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন এই তিন বন্ধু। তাহের, মঞ্জুর ও জিয়াউদ্দিন তিনজনই তাঁদের বীরত্বপূর্ণ ভূমিকার জন্য বীর উত্তম পদকে ভূষিত হন। তাহের ও মঞ্জুর দুজনই মুক্তিযুদ্ধে সেক্টর কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করেন। বীর উত্তম তাহের সেনাবাহিনী থেকে অবসর গ্রহণ করেন ১৯৭২ সালে। পরে তিনি জাসদের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন। জাসদের সশস্ত্র সংগঠন বিপ্লবী গণবাহিনীর সর্বোচ্চ নেতা ছিলেন তিনি। ডেপুটি কমান্ডার ছিলেন হাসানুল হক ইনু।
কর্নেল তাহের ছিলেন ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বরের সিপাহি জনতার গণ অভ্যুত্থানের প্রধান রূপকার। বন্ধু জেনারেল জিয়াউর রহমানকে বন্দিদশা থেকে মুক্ত করেন তিনি। কিন্তু দুজনের সখ্য স্থায়ী হয়নি। সেনাবাহিনীতে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার অংশ হিসেবে কর্নেল তাহেরসহ শীর্ষ জাসদ নেতাদের গ্রেপ্তার করা হয়। কোর্ট মার্শালে ১৯৭৬ সালের ২১ জুলাই ফাঁসিতে ঝুলিয়ে কার্যকর করা হয় কর্নেল তাহেরের মৃত্যুদণ্ড। কর্নেল তাহেরের মতো জেনারেল মঞ্জুরও ছিলেন জেনারেল জিয়ার বিশ্বস্ত বন্ধু। চট্টগ্রাম সেনানিবাসের অধিনায়ক ছিলেন তিনি। ১৯৮১ সালের ৩০ মে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান চট্টগ্রাম সফরকালে সার্কিট হাউসে রাত যাপন করেন। সে সময় এক ব্যর্থ সেনা অভ্যুত্থানে তিনি নিহত হন। এ অভিযোগে সরকারের অনুগত বাহিনীর হাতে আটক হন জেনারেল মঞ্জুর। সেনা হেফাজতে থাকা অবস্থায় তিনি নাকি ক্ষুব্ধ সেনাসদস্যদের হাতে নিহত হন। অভিযোগ রয়েছে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও জেনারেল মঞ্জুরের হত্যাকাণ্ড ছিল সাজানো নাটক। যার পেছনে কলকাঠি নেড়েছেন সেনাপ্রধান জেনারেল এরশাদ।
বীর উত্তম কর্নেল জিয়াউদ্দিন ১৯৭৪ সালে হলিডে পত্রিকায় ভারতের সঙ্গে ২৫ বছর মেয়াদি চুক্তি নিয়ে প্রবন্ধ লেখার দায়ে সেনাবাহিনী থেকে বহিষ্কৃৃত হন। পরে তিনি সর্বহারা পার্টিতে যোগ দেন। বেছে নেন আন্ডারগ্রাউন্ড জীবন। ১৯৭৫ সালের ১ জানুয়ারি সিরাজ সিকদার চট্টগ্রামে গ্রেপ্তার হন। ২ জানুয়ারি সরকারি বাহিনীর হেফাজতে থাকা অবস্থায় নিহত হন তিনি। নাইম মোহাইমেন ‘গেরিলাজ ইন দ্য মিস্ট’ নামে সিরাজ সিকদারকে নিয়ে লেখা নিবন্ধে প্রাক্তন সর্বহারা সদস্যদের প্রসঙ্গে বলেছেন, কেউ বলে সিরাজ সিকদারকে প্রাইভেট বিমানে করে উড়িয়ে আনা হয়েছে, কেউ বলেছেন হেলিকপ্টারে। বিমানের গল্পে সিরাজের চোখ বাঁধা দেখে পাইলটদের বিমান চালাতে অস্বীকৃতির অধ্যায় আছে। এয়ারপোর্টে সিরাজের পানি খেতে চাওয়া এবং তাঁকে কষে লাথি মারার বিষয়টি আলোকপাত করা হয়েছে। সবচেয়ে নাটকীয় বিষয় হচ্ছে শেখ মুজিবের মুখোমুখি রক্তাক্ত সিরাজের উক্তি : বি কেয়ারফুল মুজিব, ইউ আর টকিং টু সিরাজ সিকদার।
বলা হয় পুলিশ প্রহরা থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টার সময় নিহত হন এই অসীমসাহসী বিপ্লবী। সিরাজ সিকদার নিহত হওয়ার পর জাতীয় সংসদে সরকারপ্রধানের পক্ষ থেকে বলা হয় ‘কোথায় আজ সিরাজ সিকদার।’
সিরাজ সিকদারের মৃত্যুর পর সর্বহারা পার্টি দুই ভাগে বিভক্ত হয়। এক ভাগের নেতৃত্বে ছিলেন দলে আগে থেকেই সেকেন্ড ম্যান হিসেবে পরিচিত রইস উদ্দিন আরিফ। অন্য ভাগের নেতৃত্বে কর্নেল জিয়াউদ্দিন। এ বিভক্তি একটি বিপ্লবী সংগঠনের আদর্শিক মৃত্যু ত্বরান্বিত করে। সর্বহারা পার্টি পরিণত হয় চাঁদাবাজ ও পেশাদার সন্ত্রাসীদের দলে। জাসদের গণবাহিনী সম্পর্কেও এ এক মহা সত্যি!
জাসদ ও সর্বহারা পার্টি উভয় দলই ছিল সমাজতন্ত্রে বিশ্বাসী। মুজিব ও আওয়ামী লীগ বিরোধিতায় দুই দলই চ্যাম্পিয়ন হওয়ার প্রতিযোগিতায় ছিল ব্যস্ত। তারপরও দুই দলের সম্পর্ক ছিল সাপ ও নেউলের মতো। সর্বহারা পার্টির বিভিন্ন দলিলে জাসদকে জাতীয় বেইমান বলে অভিহিত করা হতো।
জাসদ ও সর্বহারা পার্টির এমন অসুস্থ সম্পর্কের মধ্যেও খুলনার বিস্তীর্ণ এলাকায় তারা সহযোগী হিসেবে ভূমিকা পালন করেছে। সর্বহারা পার্টির অনেকেই ছিলেন ব্যক্তিগতভাবে আমার বন্ধু। পরবর্তী সময়ে সাংবাদিকতার জীবনে সর্বহারা পার্টির দুই সাবেক শীর্ষ নেতা রইস উদ্দিন আরিফ ও কর্নেল জিয়াউদ্দিনের সঙ্গে গড়ে উঠেছিল সখ্য। সিরাজ সিকদারের সঙ্গে কখনো দেখাশোনার সুযোগ না ঘটলেও সাভারের গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রে তাঁর স্ত্রী ছিলেন আমার সহকর্মী।
দুই॥
লেখার শুরুতে মহান বিপ্লবী চে গুয়েভারার কথা বলেছিলাম। লেখাটি শেষ করতে চাই তাঁকে দিয়েই। ১৯৬৭ সালের ৮ অক্টোবর বলিভিয়ার স্পেশাল ফোর্সের হাতে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় গ্রেপ্তার হন চে গুয়েভারা। তাঁকে গুলি করার চেষ্টা করেন এক সৈনিক। চে রাইফেলের নলের সামনে হাতের পাতা রেখে বলেন, গুলি করো না। আমি চে গুয়েভারা। মৃত চে গুয়েভারার চেয়ে জীবিত চে গুয়েভারার দাম তোমাদের কাছে অনেক বেশি। চে গুয়েভারার পায়ের ক্ষত থেকে রক্ত ঝরা অবস্থায় তাঁকে প্রায় চার মাইল হাঁটিয়ে বলিভীয় সেনারা নিয়ে এলেন বাইয়ে গ্রান্দের লা ইগেরা গ্রামে। সেখানে ভাঙাচোরা একটি মাটির স্কুলঘরে তাঁকে নেওয়া হলো। শুরু হলো জিজ্ঞাসাবাদ। সেনাবাহিনীর হাতে গুরুতর আহত চে গুয়েভারা ছিলেন নির্বিকার। বলিভীয় বিমানবাহিনীর পাইলট গুনজমান অবাক হন চে গুয়েভারাকে দেখে। মিডিয়াকে তিনি বলেন, আর্জেন্টিনার লোক হয়েও কিউবাকে স্বাধীন করতে রক্ত ঝরিয়েছেন চে গুয়েভারা। জিজ্ঞাসাবাদের সময় চে’র মাথা সব সময় উঁচু ছিল। তিনি সরাসরি প্রশ্নকর্তাদের চোখের দিকে তাকিয়ে একের পর এক প্রশ্ন শোনেন। কিন্তু উত্তর দেননি।
আহত চে’র ওপর নৃশংস অত্যাচার চলে। বলিভীয় আর্মি কমান্ডাররা তাঁর কাছ থেকে জীবিত কমরেডদের সম্পর্কে একটি শব্দও বের করতে পারেননি। বুটের লাথি, ছুরির খোঁচা, সিগারেটের ছ্যাঁকা সহ্য করেন অকাতরে। একপর্যায়ে জিজ্ঞাসাবাদকারীদের কাছে তামাক চান চে। গুনজমান তাঁকে এক প্যাকেট তামাক দেন। বিপ্লবী চে গুয়েভারা পাইপে তামাক ভরার পর গুনজমানকে ধন্যবাদ দেন।
রাতের বেলায় চে গুয়েভারার কাছ থেকে স্মারক হিসেবে রাখার জন্য তাঁর পাইপটি ঠোঁট থেকে ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন বলিভিয়ান আর্মি অফিসার ক্যাপ্টেন এসপিনোসা। হাত বাঁধা অবস্থাতেই তাঁকে জোড়া পায়ে লাথি মেরে দূরে ফেলে দেন চে গুয়েভারা। মৃত্যুর আগে মুমূর্ষু অবস্থায় তাঁর সঙ্গে খারাপ ভাষায় কথা বলায় বলিভিয়ার রিয়ার অ্যাডমিরাল উগার্তেচের মুখে থুতু ছিটান তিনি।
৯ অক্টোবর ১৯৬৭ দুপুরে চে গুয়েভারাকে ৯ বার গুলি করা হয়। টুঁ-শব্দও করেননি। গুলি খেতে খেতে চোখ খুলেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন চে গুয়েভারা। চে’র মৃত্যুর সময়ের একজন প্রত্যক্ষদর্শীর মতে, ‘তাঁকে সেদিন যীশুখ্রিষ্টের মতো দেখাচ্ছিল।’
চে গুয়েভারাকে হত্যার আধা ঘণ্টা আগে স্পেশাল ফোর্সের কমান্ডার ফেলিক্স রড্রিগেজ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বারবার শেষ চেষ্টা করেন। কিন্তু চে নিরুত্তর থাকেন। কমান্ডার তখন চে গুয়েভারাকে সৈন্যদের সাহায্যে নিজের পায়ে দাঁড় করান এবং ঘরের বাইরে নিয়ে আসেন। সমবেত সেনার সঙ্গে চে-এর ছবি তোলা হয় স্মারক হিসেবে। তারপর চে গুয়েভারাকে কমান্ডার রড্রিগেজ জানান, একটু পরে তাঁর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হবে।
একজন অফিসার চে’কে জিজ্ঞেস করেন, তিনি তাঁর অমরত্বের কথা ভাবছেন কিনা। চোখে চোখ রেখে চে গুয়েভারা বলেন, ‘না, আমি ভাবছি বিপ্লবের অমরত্বের কথা।’ এরপর চে গুয়েভারাকে হত্যার দায়িত্ব নেওয়া অফিসার সার্জেন্ট টেরান ঘরে ঢোকেন। চে গুয়েভারা নির্বিকারভাবে ঘাতককে বলেন, ‘আমি জানি, তুমি আমাকে মারতে এসেছ, না-ও তুমি আমাকে গুলি করো, মনে রাখবে তুমি কেবল একজন মানুষকে মারতে পারবে। তার মতাদর্শকে নয়।’
লেখক : সিনিয়র সহকারী সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রতিদিন
ইমেইল : [email protected]