ইস্তিগফার। শাব্দিক অর্থ ক্ষমা প্রার্থনা করা। পরিভাষায় ইস্তিগফার মানে নিজের পাপরাশি থেকে মুক্ত হতে আল্লাহতায়ালার কাছে মাগফিরাত বা ক্ষমা চাওয়া ও নিজের অসহায়ত্ব প্রকাশ করা।ইস্তিগফার আল্লাহতায়ালার কাছে খুব পছন্দের আমল। কোরআন মাজিদে আল্লাহতায়ালা বিভিন্ন প্রসঙ্গে তাঁর প্রিয় বান্দাদের ইস্তিগফারের বিমল পথে হাঁটার নির্দেশনা দিয়েছেন। যাপিত জীবনে ইস্তিগফারের সৌরভে সুরভিত হতে বলেছেন। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও পরম মমতায় ইস্তিগফারের সৌন্দর্য নিজের মাঝে ধারণ করতেন। অন্যদেরও সেই সৌন্দর্যে বিমোহিত হওয়ার নির্দেশনা দিতেন।
কুরআনের ভাষায় ইস্তিগফারের ৫টি উপকারিতা
এক. উত্তম জীবন উপভোগ
আমরা সবাই উত্তম জীবন উপভোগ করতে চাই। এই উত্তম জীবন উপভোগের অনন্য মাধ্যম হচ্ছে ইস্তিগফার। ইরশাদ হয়েছে- (কুরআন নির্দেশনা দেয় যে) তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের কাছে ইস্তিগফার তথা গুনাহের ক্ষমা প্রার্থনা কর, অতঃপর তাঁর অভিমুখী হও। তিনি তোমাদের এক নির্ধারিত কাল পর্যন্ত উত্তম জীবন উপভোগ করতে দেবেন এবং যে কেউ বেশি আমল করবে তাকে নিজের পক্ষ থেকে বেশি প্রতিদান দেবেন। আর তোমরা যদি মুখ ফিরিয়ে নাও, তবে আমি তোমাদের জন্য এক মহা দিবসের শাস্তির আশঙ্কা করি। (সুরা হুদ : ৩)
২. আজাব থেকে মুক্তি
সব ধরনের আজাব গজব থেকে বাঁচতে পারা মানবমাত্রই আকাঙ্খার বিষয়। সেই আজাব গজব থেকে বাঁচার কার্যকরী উপায় হলো ইস্তিগফার। ইরশাদ হয়েছে এবং (হে নবী!) আল্লাহ এমন নন যে তুমি তাদের মধ্যে বর্তমান থাকা অবস্থায় তাদের শাস্তি দেবেন এবং তিনি এমনও নন যে তারা ইস্তিগফারে রত থাকা অবস্থায় তাদের শাস্তি দেবেন। (সুরা আনফাল : ৩৩)
তিন. ধনসম্পদে সমৃদ্ধি। চার. সন্তানপ্রাপ্তি, পাঁচ. ফসল ফলাদিতে উন্নতি। ইস্তিগফারের সুফল হিসেবে উপরিউক্ত তিনটি পুরস্কারের ঘোষণা আল্লাহতায়ালা একই সুরায় ধারাবাহিক তিনটি আয়াতে প্রদান করেছেন। আল্লাহতায়ালা বলেন, আমি তাদের বলেছি, নিজ প্রতিপালকের কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা কর। নিশ্চয়ই তিনি অতিশয় ক্ষমাশীল। তিনি আকাশ থেকে তোমাদের ওপর প্রচুর বৃষ্টি বর্ষণ করবেন। এবং তোমাদের ধনসম্পদ ও সন্তানসন্ততিতে উন্নতি দান করবেন এবং তোমাদের জন্য সৃষ্টি করবেন উদ্যান আর তোমাদের জন্য নদনদীর ব্যবস্থা করে দেবেন।(সুরা নূহ : ১০-১২)
হাদিসের ভাষায় ইস্তিগফারের ৫টি উপকারিতা
এক. সুসংবাদ প্রাপ্তি
যারা ইস্তিগফার করে তাদের আমলনামা সমৃদ্ধ হয়। আর ইস্তিগফারের মাধ্যমে যাদের আমলনামা সমৃদ্ধ তাদের জন্য সুসংবাদের ঘোষণা। সাহাবি আবদুল্লাহ ইবনে বুসর রা. থেকে বর্ণিত, নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন যাদের আমলনামায় প্রচুর পরিমাণে ইস্তিগফার পাওয়া যাবে তাদের জন্য সুসংবাদ রয়েছে। (সুনানে ইবনে মাজাহ : ৩৮১৮)
দুই. একটি অভ্যাসের সঙ্গে সাদৃশ্যতা
ইস্তিগফার আল্লাহতায়ালার প্রিয় আমল। তাই নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রচুর পরিমাণে ইস্তিগফার করতেন। অন্যদেরও ইস্তিগফারের নির্দেশনা দিতেন। হজরত আগার বিন ইয়াসার রা. থেকে বর্ণিত, নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন- হে লোকেরা! তোমরা আল্লাহর কাছে তওবা করো এবং তারই কাছে ইস্তিগফার করো। জেনে রেখো, আমি প্রতিদিন ১০০ বার আল্লাহর কাছে তওবা ইস্তিগফার করি। (সহিহ মুসলিম : ২৭০২)
লেখক : খতিব, আউচপাড়া জামে মসজিদ, টঙ্গী, গাজীপুর