টাকার অঙ্কে কাজ না দিয়ে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে কম্পিউটার নেটওয়ার্ক সিস্টেম লিমিটেডকে (সিএনএস) কার্যাদেশ দেওয়া হয়। প্রতিষ্ঠানটি শতকরা হারে মোট আদায় করা টোলের ১৭.৭৫ শতাংশ হারে সার্ভিস চার্জ মোট ৪৮৯ কোটি ৪৩ লাখ ৭৩ হাজার টাকা বিল তুলে নিয়েছে।
মেঘনা-গোমতী সেতুর টোল আদায় চুক্তিতে এ ধরনের অনিয়মের মাধ্যমে সরকারের ৩০৯ কোটি টাকার বেশি আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। এই অভিযোগে ভারতে পালিয়ে যাওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গতকাল সংস্থাটির সমন্বিত জেলা কার্যালয়, ঢাকা-১ এ মামলাটি করেন দুদকের সহকারী পরিচালক তানজিল হাসান।
মামলায় অন্য আসামিরা হলেন- সাবেক মন্ত্রী আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ওবায়দুল কাদের, আনিসুল হক, সাবেক প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান, সাবেক সচিব এম এ এন ছিদ্দিক, সাবেক অতিরিক্ত সচিব ফারুক জলিল, সাবেক উপসচিব মোহাম্মদ শফিকুল করিম, সাবেক প্রধান প্রকৌশলী ফিরোজ ইকবাল ও ইবনে আলম হাসান, সাবেক অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আফতাব হোসেন খান ও আবদুস সালাম এবং কম্পিউটার নেটওয়ার্ক সিস্টেম (সিএনএস) লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুনীর উজ জামান চৌধুরী, পরিচালক সেলিনা চৌধুরী ও ইকরাম ইকবাল। দুদকের মামলায় বলা হয়েছে, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে সরকারি ক্ষমতার অপব্যবহার করে প্রতারণার মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় অর্থ আত্মসাৎ করেছেন, যা দণ্ডবিধি এবং দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এর আগে ২০১৬ সালে সিএনএস লিমিটেডকে মেঘনা-গোমতী সেতুর টোল আদায়কারী হিসেবে নিয়োগ দিতে আগের দরপত্র ইচ্ছাকৃতভাবে বাতিল করা হয়। পরে ‘একক উৎসভিত্তিক দরপত্র’ আহ্বান করা হয়। পরে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলোচনা না করে শুধু সিএনএসের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে ওই দরপত্র অনুযায়ী পাঁচ বছরের জন্য টোল আদায়ের চুক্তি করা হয়। এতে টাকার অঙ্ক নয়, বরং মোট আদায় হওয়া টোলের ১৭ দশমিক ৭৫ শতাংশ হারে (ভ্যাট ও আয়কর ব্যতীত) সার্ভিস চার্জ নির্ধারণ করা হয়। দুদকের অভিযোগে বলা হয়, এ চুক্তির আওতায় সিএনএস মোট ৪৮৯ কোটি ৪৩ লাখ ৭৩ হাজার টাকা বিল গ্রহণ করে। কিন্তু আগে ২০১০-১৫ সাল পর্যন্ত একই সেতুর টোল আদায়ের জন্য এমবিইএল-এটিটি (দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান) যৌথভাবে মাত্র ১৫ কোটি ৫৮ লাখ টাকায় কাজ করে। পরে ২০২২-২০২৫ মেয়াদে ইউডিসি কনস্ট্রাকশন লিমিটেডকে ৬৭ কোটি ৫৪ লাখ টাকায় (ভ্যাট ও আয়করসহ) চুক্তি দেওয়া হয়, যা পাঁচ বছরে রূপান্তর করলে দাঁড়ায় প্রায় ১১২ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। সিএনএস তথাকথিত ‘নতুন প্রযুক্তি স্থাপন ও অবকাঠামো ব্যয়’ বাবদ আরও ৬৭ কোটি ৪৩ লাখ টাকা দাবি করে। তুলনামূলক বিশ্লেষণে দুদক মনে করছে সিএনএসকে কার্যাদেশ দেওয়ার ফলে সরকারের মোট আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩০৯ কোটি ৪২ লাখ ৪৫ হাজার ৮৯০ টাকা। সিএনএসের পরিচালক, সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সদস্যরা পরস্পর যোগসাজশে এ অনিয়ম করেছেন। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে গত বছরের ৫ আগস্ট দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। এর মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের ১৫ বছরের শাসনের অবসান ঘটে। এরই মধ্যে শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যদের ১২৪টি ব্যাংক হিসাবে থাকা ৬৩৫ কোটি ১৪ লাখ টাকা অবরুদ্ধ করেছে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। এ ছাড়া দুর্নীতির অভিযোগে শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা করেছে দুদক।