ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ভোটের কাজে এবং প্রশাসনের রদবদল ও পদায়নে একটি বিশেষ দলের লোকদের প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বিএনপি। অন্তর্বর্তী সরকারের ‘নিরপেক্ষতা’ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে দলটি। সোমবার রাতে বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন নেতারা। দলটির নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র জানিয়েছে এ তথ্য। সূত্র জানান, প্রশাসনে সচিবদের নিয়োগ, রদবদল ও পদায়নের ক্ষেত্রে জামায়াতের লোকজনকে বেশি প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। বিশেষ করে বেছে বেছে তাদের লোকজনকে প্রশাসনসহ সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে পদায়ন করা হচ্ছে। বিএনপির কোনো সুপারিশও আমলে নেওয়া হচ্ছে না। এমন অবস্থায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস দেশে ফিরলে তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে বৈঠকে। তাঁকে বিএনপির উদ্বেগের কথা জানানো হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র আরও জানায়, দুই-এক দিনের মধ্যে স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খানের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল নির্বাচন কমিশনে যাবে। প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে তারা বৈঠক করবে। দলের উদ্বেগের কথা জানাবে প্রতিনিধিদল। জুলাই জাতীয় সনদে স্বাক্ষর নিয়ে বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনা হয়। স্থায়ী কমিটির সদস্যরা অভিমত দেন- সনদে স্বাক্ষরের আগে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের পক্ষ থেকে পাঠানো চূড়ান্ত জুলাই সনদ দেখতে হবে। সংলাপে বিএনপি যে মতামত তুলে ধরেছে, তা আছে কি না, দেখে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। যদি থাকে তাহলে স্বাক্ষর করা হবে। আলোচনায় দুই-একজন গণভোটের প্রসঙ্গ তোলেন। এ ব্যাপারে স্থায়ী কমিটির কোনো কোনো সদস্য বলেন, নির্বাচনের আগে গণভোট হতে পারে না। নির্বাচন কমিশন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন একই সঙ্গে গণভোট করতে পারে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য বলেন কিছু উপদেষ্টার বক্তব্য, তৎপরতা ও কার্যক্রমে সরকারের নিরপেক্ষতা ক্ষুণ্ন হচ্ছে। প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদে রদবদল-পদায়ন নিয়ে কিছু উপদেষ্টা পক্ষপাতমূলক আচরণ করছেন। বিশেষ করে জামায়াতে ইসলামীর পক্ষে কাজ করছেন। নির্বাচন সামনে রেখে মাঠপর্যায়ে ভোট গ্রহণ কর্মকর্তার যে প্যানেল প্রস্তুত করা হচ্ছে, সেখানেও জামায়াতে ইসলামীর লোকদের প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। যার তথ্য বিএনপির কাছে রয়েছে। এসব ঘটনায় তাঁরা উদ্বিগ্ন।
তিনি আরও বলেন, সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের স্বার্থেই সরকারের উচিত নিজেদের নিরপেক্ষ রাখা। এ লক্ষ্যে এখনই নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মতো করে তাদের চরিত্র দাঁড় করানো প্রয়োজন। যাতে সরকার ও প্রশাসনের শতভাগ নিরপেক্ষতা নিশ্চিত হয়। রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সোমবার রাত ৯টায় এ বৈঠক শুরু হয়ে শেষ হয় ১১টার দিকে। লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন। বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, আবদুল মঈন খান প্রমুখ।