ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নোট বাতিলের সিদ্ধান্তের ফলে দেশটির গড় আভ্যন্তরীণ উৎপাদন (জিডিপি)’র গত দুই বছর সময়ে সবচেয়ে নিচে নেমে এসেছে। ২০১৬-১৭ আর্থিক বছরের চতুর্থ ত্রৈমাসিকে জিডিপি বৃদ্ধির হার কমে হয়েছে ৬.১ শতাংশ। জিডিপি বৃদ্ধির হার কমে যাওয়ার ফলে এক ধাক্কায় ভারত বিশ্বের দ্রুততম আর্থিক বৃদ্ধির দেশের তকমাও হারিয়েছে বলেও মনে করা হচ্ছে। আজ কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যান অফিস (সিএসও) থেকে প্রকাশিত জিডিপি পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০১৬-১৭ আর্থিক বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ ত্রৈমাসিকে জিডিপি বৃদ্ধির হার ছিল ৬.১ শতাংশ। এর ফলে ২০১৬-১৭ পুরো আর্থিক বছরের সামগ্রিক বৃদ্ধির হার দাঁড়িয়েছে ৭.১ শতাংশ, যা আগের বছরের (৮%) বৃদ্ধিহারের চেয়ে অনেকটাই কম।
যদিও নোট বাতিলের ফলেই দেশের জিডিপি বৃদ্ধির হার কমেছে একথা মানতে রাজি নয় এনডিএ সরকারের অর্থমন্ত্রী অরুন জেটলি। বৃহস্পতিবার জেটলি সাফাই দিয়ে বলেছেন নোট বাতিলের জন্য নয়, জিডিপি’র হার কমানোর পিছনে রয়েছে একাধিক কারণ। কেন্দ্রের মোদি সরকার তৃতীয় বর্ষপূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলন থেকে এদিন জেটলি বলেন ‘নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগেই দেশে আর্থিক মন্দার লক্ষণ দেখা যাচ্ছিল। তাছাড়া ৭ বা ৮ শতাংশ বৃদ্ধির হার আন্তর্জাতিক মানদন্ডে খুবই ভাল আর ভারতের মাপকাঠিতে তো ভালই’।
মনমোহন সিংয়ের নেতৃত্বে ইউপিএ সরকারকেও দুষেছেন বর্তমান অর্থমন্ত্রী। তাঁর অভিযোগ ‘মনমোহনের আমলে গোটা প্রক্রিয়াটাই দুর্নীতিতে ভরে গিয়েছিল। তিন বছর আগে নরেন্দ্র মোদী সরকার ক্ষমতায় আসার পরে থেকে অবস্থা শোধরাতে শুরু করেছে’। জেটলি আরও বলেন ‘গত তিনবছরে অর্থনীতির বৃদ্ধির গতি ধীর ছিল। উত্তরাধিকার সূত্রে আমরা দুর্নীতিগ্রস্থ প্রক্রিয়া হাতে পেয়েছি। এরপরে গত তিনবছরে অর্থনৈতিক বিশ্বাসযোগ্যতা ফিরিয়ে আনতে সফল হয়েছে এই সরকার’।
তবে অর্থমন্ত্রীর এই সাফাইকে মানতে রাজি নয় বিরোধীরা। দেশটির জিডিপি-র হার কমায় কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদী সরকারকে তোপ দেগেছেন কংগ্রেস সহ-সভাপতি রাহুল গান্ধী। নিজের ট্যুইটার পেজে জিডিপি হার নিম্নমুখী সম্পর্কিত একটি প্রতিবেদন ট্যাগ করে বিজেপি সরকারকে তোগ দাগেন রাহুল। তিনি লেখেন ‘জিডিপি হারের পতন, বেকারত্বের হার বৃদ্ধির মতো গুরুতর ব্যর্থতা ঢাকতে সরকার এখন অন্য ইস্যুগুলি ঢাল করছে’।
আর্থিক উন্নতির এই অবনতির জন্য কেন্দ্রের সমালোচনা করেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। এদিন সকালের দিকে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে কেন্দ্রকে একহাত নিয়ে মমতা লেখেন ‘নোট বাতিলের সময়ই যা আশঙ্কা করেছিলাম, তা-ই আজ সত্যি হল’। এরপর বিকালে হুগলী জেলার তারকেশ্বরে একটি প্রকাশ্য জনসভা থেকে কেন্দ্রের সরকারকে ফের একবার নিশানা করেন মমতা। তিনি বলেন ‘ডিমনিটাইজেশন যখন হচ্ছিল, তখন বলেছিলাম যে ফল খারাপ হবে এবং দুই শতাংশ জিডিপি কমবে। আর এবার দেখুন চতুর্থ ত্রৈমাসিকেই দুই শতাংশ জিডিপি কমেছে কি না? ভারতে সেদিন আমিই প্রথম টুইট করেছিলাম, আর আজ ছয় মাস বাদে লোকে দেখতে পাচ্ছে যে- হ্যাঁ আমার আশঙ্কাই একেবারে সত্যি হলো’। মমতার অভিযোগ ‘এই ডিমনিটাইজেশনের ফলে অনেক মানুষের চাকরি চলে গেছে। আমাদের রাজ্যেই প্রায় লাখ খানেক ছেলেমেয়ে ফিরে এসেছে’।
উল্লেখ্য, গত নভেম্বরেই দেশ থেকে ৫০০ ও ১০০০ রুপির নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয় মোদি সরকার। সরকারের পক্ষে যুক্তি ছিল দুর্নীতি ঠেকাতে এবং কালো রুপির রমরমা ঠেকাতেই এই পদক্ষেপ। যদিও সেসময়ই নোট বাতিলের সিদ্ধান্তর সমালোচনা করেছিলেন কংগ্রেস নেতা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ ড.মনমোহন সিং। সংসদে দাঁড়িয়েই সরকারের এই সিদ্ধান্তকে ‘আইনিস্বীকৃত লুঠ ও পাহাড় প্রমাণ ব্যার্থতা বলে মন্তব্য করেছিলেন মনমোহন সিং। এর ফলে জিডিপি’এর হার ২ শতাংশ কম হবে বলেও পূর্বাভাষ করেছিলেন তিনি।
বিডি প্রতিদিন/এ মজুমদার