গত ১৫ দিনের মধ্যে দ্বিতীয় বারের মতো ব্রিটেনে হামলার ঘটনায় থমকে গেছে লন্ডন! শনিবার রাত ১০টার দিকে এক সন্ত্রাসী হামলায় ৭ জন নিহত ও ৪৮ জন আহত হয়েছেন। এছাড়া পুলিশের গুলিতে হামলাকারী ৩ জনই নিহত হয়েছে। এখন পর্যন্ত হামলাকারী ৩ জনের পরিচয় পাওায়া যায়নি। ব্রিটেন সময় রাত ১২ টায় মেট পুলিশ এই হামলাকে সন্ত্রাসী হামলা হিসাবে উল্লেখ করেছে।
ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী টেরিজা মে এক ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, সহ্যের সীমা অতিক্রম করেছে!
৩ জুন শনিবার রাত দশটার দিকে প্রথম একটি ভ্যান নিয়ে লন্ডন ব্রীজের পথচারীদের উপর হামলা চালানো হয়। ১ জন মারা যায় এই ঘটনায়। এরপরই ভ্যান থেকে ৩ জন নেমে লন্ডন ব্রীজের অপর পাশে অবস্থিত বারা স্ট্রিট মার্কেটে হামলা চালায় ছুরি হাতে। এতে আরো ৬ জন নিহত হন। এর ঠিক পরই লন্ডনের বক্সহল এলাকায় বন্দুক হামলায় আরো একজন নিহত হোন। পুলিশ বক্সহল হামলাকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসাবে উল্লেখ করে। হামলায় আহত ৪৮ জনকে ৫টি বিভিন্ন হাসপাতালে নেয়া হয়েছে।
জাতীয় নির্বাচনের ঠিক ৪ দিন আগে এই হামলায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে পুরো ব্রিটেনে। সর্বাধিক সংখ্যক মুসলিম ও বাংলাদেশি অধ্যুষিত টাওায়ার হ্যামলেটস বারাহ থেকে মাত্র ১ মাইল দূরত্বে ঘটে যাওয়া এই ঘটনায় আতঙ্কে রয়েছেন এখানকার অধিবাসীরা। প্রায় সারারাতই এই অঞ্চলে পুলিশের এবং এম্বুলেন্সের সাইরেন শোনা গেছে।
রবিবার ব্রিটেন সময় সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত লন্ডন ব্রিজ থেকে শুরু করে অল্ডগেইট ইস্ট, হোয়াইটচ্যাপেল, মাইল এন্ড, বো, স্ট্রাটফোর্ড, ক্যানিং টাউন পর্যন্ত ঘুরে মনে হয়েছে জীবন যাত্রা যেনো থমকে গেছে। সাধারণত রবিবার ছুটির দিন থাকায় মানুষজন একটু পারিবারিক কেনাকাটার জন্য বের হোন। কিন্তু এইসব অঞ্চলের ট্রেন স্টেশন, বাস স্টপ, শপিং মল সবই যেনো ফাঁকা। ইস্ট লন্ডনের সবচেয়ে ব্যস্ততম বাস ২৫ নাম্বারে মাইল এন্ড থেকে স্ট্রার্টফোর্ড পর্যন্ত বাসে ৫ জন যাত্রী ছিলেন। এরমধ্যে একজনও এশিয়ান বা বাংলাদেশি ছিলেন না! ইস্ট লন্ডনের সবচেয়ে ব্যস্ততম স্ট্রার্টফোর্ড আন্ডারগ্রাউন্ড যেখানে অন্য ছুটির দিনগুলোতে মানুষের ভীড় সামলাতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হয় ট্রান্সপোর্ট ফর লন্ডন স্টাফদের সেখানে কোন ভীড়ই নেই! সবার মুখ থমথম করছে অজানা আশঙ্কায়! কথা হয় স্ট্রাটফোর্ড স্টেশনে কর্মরত ট্রান্সপোর্ট ফর লন্ডন এর কাস্টমার এসিষ্টেন্ট লিন্ডার সাথে। লিন্ডা জানায়, খুবই ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটেছে। অন্য রবিবারগুলোতে এই সময়ে যে মানুষের চাপ থাকে আজকে তার সিকিভাগও নেই! মানুষের মুখে হাসি নেই। এই ব্রিটেনতো আমরা চাই না!
স্ট্রাটফোর্ডে অবস্থিত ব্রিটেনের অন্যতম বড় শর্পি মল ওয়েস্টফিল্ডে গিয়ে দেখা গেলো একই চিত্র। মানুষ নেই, খালি দোকান খুলে পসরা সাজিয়ে বসে আছেন সবাই। এই মার্কেটে সিকিউরিটিতে চাকরি করেন মার্ক। তিনি বলেন, গতরাতের হামলার প্রভাব পড়েছে সবখানে।
স্ট্রার্টফোর্ড থেকে সিটি এয়ারপোর্টগামী স্টেশনগুলোও ছিলো ফাকা। ট্রেনের বগিগুলোতে নেই কোন ভীড়, নেই কোন তাড়াহুড়া। ট্রেনে একজন মাত্র বাংলাদেশি পাওয়া গেলো! তিনি বলেন, প্রত্যেকটা হামলার পর যেভাবে মুসলমানদের উপর বর্নবাদী হামলা বেড়ে যায়, তই বের হতেই এখন ভয় লাগে। সাদা বর্নবাদী লোকেরাতো বাদামী চামড়া দেখলেই ভাবে টেরোরস্টি!
৩ জুনের হামলার রেশ ধরে ৪ জুনের লন্ডন দেখে মনে হতেই পারে যে লন্ডন চলে সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে সেই লন্ডনের সময় যেনো থমকে গেছে!