সিএনজি অটোরিকশা নিয়ে শহরে ঘুরে বেড়ায় তারা। সহযাত্রী হিসেবে নারীদের পেলে টার্গেট করে। এরপর আলাপ জমিয়ে কখনো ২২ ক্যারেটের সোনারবার, আবার কখনো স্বর্ণালঙ্কার বিক্রির নামে হাতিয়ে নেয় টাকা। এরপর বাসায় ফিরে যখন ভুক্তভোগীরা প্রতারণার বিষয়টি টের পান, তখন আর করার কিছুই থাকে না। লজ্জায় কেউ আইনের আশ্রয়ও নেন না। তবে মাঝেমধ্যে এই প্রতারক চক্রের সদস্যরা ধরা পড়ে যান ভুক্তভোগীদের হাতে। তখন বের হয়ে আসে প্রতারণার বিষয়টি। সম্প্রতি এমন প্রতারক চক্রের সন্ধান পেয়েছে সিলেট মহানগর পুলিশ। পুলিশ জানায়, ৬ ফেব্রুয়ারি সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলার আনন্দপুর গ্রামের হরিমোহন রায়ের স্ত্রী জয়ন্তী রানী রায় ও তার মেয়ে পপি রানী রায় কুমারগাঁও বাসস্ট্যান্ড থেকে সিএনজি অটোরিকশাযোগে সিলেট নগরীর মির্জাজাঙ্গালে তাদের বাসায় ফিরছিলেন। ওই সময় অটোরিকশাটিতে চালক ও যাত্রীবেশী প্রতারকরা বসা ছিল। রাস্তায় জয়ন্তী রানীর সঙ্গে প্রতারক চক্রের সদস্য সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার ভাটিপাড়া গ্রামের সমছুননূরের ছেলে মুরাদ আহমদ গল্প শুরু করেন। একপর্যায়ে মুরাদ জানান, তার কাছে ২২ ক্যারেটের একটি সোনারবার আছে, কিন্তু বৈধ কাগজপত্র না থাকায় তিনি এটি বিক্রি করতে পারছেন না। কথাবার্তার ফাঁকে তিনি জয়ন্তীকে তার ও মেয়ের পরনে থাকা স্বর্ণালঙ্কার দিয়ে দিলে ওই সোনারবারটি দেওয়ার প্রলোভন দেখান। জয়ন্তী লোভে পড়ে তার লক্ষাধিক টাকার স্বর্ণালঙ্কার দিয়ে সোনারবারটি নেন। বাসায় আসার পর টের পান প্রতারণার বিষয়টি। কিন্তু প্রতারক চক্রের ভাগ্য মন্দ ছিল। ১৯ ফেব্রুয়ারি নগরীর বাগবাড়ী বর্ণমালা পয়েন্টে সিএনজি অটোরিকশায় প্রতারক মুরাদকে দেখতে পান জয়ন্তী। তখন ‘৯৯৯’-এ ফোন দিয়ে অটোরিকশাটি ধাওয়া করেন। তালতলায় আসার পর পুলিশ অটোরিকশাটির গতিরোধ করে মুরাদকে আটক করে। এ সময় তার আরও তিন সহযোগী পালিয়ে যায়। মুরাদের কাছ থেকে একটি নকল সোনারবার উদ্ধার করে পুলিশ, যেটির ওপর ইংরেজিতে ‘২২ কে’ লেখা ছিল।
সিলেট মহানগর পুলিশ জানায়, অনুসন্ধানে ওই চক্রের আরও তিন সদস্যের নাম পাওয়া গেছে। তারা হলেন সিলেট নগরীর মজুমদারীর আরজু মিয়ার ছেলে নয়ন, হাউজিং এস্টেটের রবিউল ওরফে লেম্বু ও সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলার বাদশাগঞ্জের নূর মিয়া। এদিকে প্রায় তিন মাস আগে সিলেট নগরীর পাঠানটুলা এলাকার রুবিনা বেগম নামের এক গৃহবধূর কাছে সোনার তৈরি দাবি করে একটি মূর্তি বিক্রি করেন সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার চকতিলক সাহারপাড়ার বাসিন্দা ইদ্রিস মিয়া। পরে রুবিনা বেগম মূর্তিটি জুয়েলার্সে নিয়ে পরীক্ষা করালে দেখতে পান, সোনার কালারের মূর্তিটি আসলে পিতলের তৈরি। এরপর রুবিনা নানাভাবে ইদ্রিসের সঙ্গে দেখা করার চেষ্টা করলেও তিনি আসেননি। পরে গোয়েন্দা পুলিশ আরেক ব্যক্তিকে ক্রেতা সাজিয়ে যোগাযোগ করান ইদ্রিসের সঙ্গে। ১০ জানুয়ারি পাঠানটুলার আরেকটি বাসায় নকল সোনারমূর্তি নিয়ে আসেন ইদ্রিস। এ সময় তাকে আটক করে গোয়েন্দা পুলিশ।
এদিকে অপর একটি চক্রের সদস্যরা রিকশাচালক সেজে প্রতারণা চালিয়ে যাচ্ছে মানুষের সঙ্গে। ওই চক্রের সদস্যরা রিকশায় যাত্রী ওঠার পর তাদের বলে, সে কুড়িয়ে সোনার মতো কিছু একটা পেয়েছে। তখন সে সোনারবার বা স্বর্ণালঙ্কার বের করে দেখায় যাত্রীকে। সোনার মতো হুবহু সোনারবার বা স্বর্ণালঙ্কার দেখে যাত্রীও সায় দেন এটা আসল সোনা বলে। তখন সে ওই যাত্রীর কাছে নকল সোনাটি বিক্রি করে টাকা নিয়ে পালিয়ে যান। এ রকম প্রতারণার ঘটনা সিলেট নগরীতে প্রায় প্রতিদিনই ঘটছে বলে জানা গেছে।
সোনা প্রতারকদের ব্যাপারে সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (গণমাধ্যম) বি এম আশরাফ উল্যাহ তাহের বলেন, যখনই পুলিশ এ রকম কোনো প্রতারক চক্রের খবর পাচ্ছে তখনই অভিযান চালিয়ে আটক করছে। বিভিন্ন ঘটনার পর আটক ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদে ওই চক্রের যেসব সদস্যের নাম পাওয়া গেছে তাদের গ্রেফতারে পুলিশ চেষ্টা চালাচ্ছে। তবে মানুষ সচেতন না হলে প্রতারণা নির্মূল করা যাবে না বলে মন্তব্য করেন তিনি।