চট্টগ্রামে পার্কের সংকট দীর্ঘদিনের। যে কটি উন্মুক্ত পার্ক ছিল তা-ও ধীরে ধীরে বাণিজ্যিক হয়ে গেছে। আবার অনেক পার্ক পরিত্যক্ত হয়ে পড়েছে। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন পরিচালিত নগরীর পাঁচলাইশ ‘জাতিসংঘ পার্ক’ তার অন্যতম উদাহরণ।
প্রায় এক যুগ ধরে সংস্কারের নামে পরিত্যক্ত হয়ে আছে পার্কটি। একসময় পার্কটিতে ছিল নগরবাসীর অবাধ যাতায়াত। সবুজে ঘেরা পার্কটিতে অবসর সময় কাটাত বিনোদনপ্রেমী মানুষ। তবে নানা জটিলতায় এক যুগেও সংস্কার না হওয়ার কারণে বন্ধ হয়ে আছে পার্কটি। তবে সংস্কারকাজ করা গণপূর্ত অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সংস্কারকাজ শেষ হয়েছে। এখন ফিনিশিং চলছে। আসছে শীতে ফের নগরবাসীর জন্য উন্মুক্ত হবে জাতিসংঘ পার্ক।
গণপূর্ত অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম অঞ্চলের (সার্কেল-১) নির্বাহী প্রকৌশলী কামরুল হাসান খান বলেন, ‘জুনে আমাদের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু দেশের সার্বিক পরিস্থিতি খারাপ হয়ে যাওয়ায় তা হয়নি। এখন আমাদের প্রায় সব কাজ শেষ হয়েছে, এখন ফিনিশিং চলছে। জাতিসংঘ পার্কে আমরা গাছ, ঘাস লাগিয়েছি। এ বর্ষা মৌসুমে পার্কটি সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। কারণ এ মুহূর্তে আমরা উন্মুক্ত করে দিলে যে ঘাসগুলো লাগানো হয়েছে তা নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তাই আসছে শীত মৌসুমে উন্মুক্ত করে দেওয়ার চিন্তাভাবনা করছি।’
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানান, একসময় শিশু-কিশোরসহ বিনোদনপ্রেমী মানুষের কাছে এ পার্কটি দর্শনীয় স্থান হিসেবে পরিচিতি পেয়েছিল। কিন্তু দিনে দিনে পার্কটির প্রতি অবহেলা আর অযত্নের ছাপ পড়তে থাকে। এতে পার্কটি জলুস হারায়। প্রায় পরিত্যক্ত অবস্থায় পৌঁছে যায়। ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়ে পার্কে থাকা একটি পুকুরও। এরপর ২০১২ সালের ৩ ডিসেম্বর জাতিসংঘ পার্কের একটি অংশে সুইমিং পুল নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর করেন তৎকালীন মেয়র এম মনজুর আলম। ২০১৫ সালের জুনে ৩ কোটি ৯৪ লাখ টাকায় দুটি সুইমিং পুল ও জিমনেসিয়াম নির্মাণকাজ শেষ হয়। যা নতুন করে পার্কটি সাজানোর জন্য ভেঙে ফেলা হয়। পরে ২০১৬ সালে পার্ক ঘিরে চসিকের বাণিজ্যিক পরিকল্পনা বাস্তবায়নের উদ্যোগ আটকে যায়। ২০১৭ সালে পার্ক উন্নয়নে প্রকল্প নেয় গণপূর্ত অধিদপ্তর। ওই প্রকল্পের বিরুদ্ধে আপত্তি জানিয়ে একই বছরের ৪ সেপ্টেম্বর চসিকের তৎকালীন মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন স্থানীয় সরকারমন্ত্রীকে একটি পত্র দেন। এর কয়েক দিন পর ৭ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির সভায়ও চসিক প্রতিনিধি গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রকল্পটির বিরুদ্ধে আপত্তি জানান। এতে স্থগিত করা হয় গণপূর্তের প্রকল্পটি। এরপর ২০১৯ সালের অক্টোবরে চসিকের তৎকালীন মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন এবং গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির তৎকালীন সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন পারস্পরিক আলাপে একমত হন, গণপূর্ত মন্ত্রণালয় প্রকল্প বাস্তবায়ন করে রক্ষণাবেক্ষণের জন্য চসিকে হস্তান্তর করবে। পরের বছর প্রশাসকের দায়িত্ব পালনকালে খোরশেদ আলম সুজন গণপূর্ত অধিদপ্তরকে প্রকল্প বাস্তবায়নে অনাপত্তি পত্র দেন। পাঁচলাইশ আবাসিক এলাকা কল্যাণ সমিতির করা রিটটিও প্রত্যাহার করা হয়। ফলে গতি পায় গণপূর্তের প্রকল্প।