বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর তিস্তাপাড়ের কৃষকের ফসলের মাঠে ক্ষতচিহ্ন ভেসে উঠেছে। একসময় ভালো ফলনের স্বপ্ন দেখলেও আকস্মিক বন্যায় তাদের জমির সব ধান বালুর স্তূপে ঢেকে গেছে। পানিতে ডুবে পচে গেছে রোপা আমন। কৃষি বিভাগ বলছে, বন্যায় লালমনিরহাটের পাঁচ উপজেলার কৃষিজমি ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পানিতে প্লাবিত হয় জেলার প্রায় ৮০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে তিস্তা অববাহিকার চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চল। শত শত হেক্টর জমির আমন ধান, চীনাবাদাম বীজতলা, আখ, শাকসবজিসহ বিভিন্ন ফসল পানিতে ডুবে, বালুর স্তূপে ঢেকে ও পচে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পাশাপাশি নদীতে বিলীন হয়েছে শত শত হেক্টর ফসলি জমি। এমন চিত্র জেলার আদিতমারী উপজেলার মহিষখোঁচা ইউনিয়নের বাহাদুরপাড়া, গরিবুল্লাপাড়া, কালমাটি, হরিণচড়া, সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ, রাজপুর, তাজপুর, হাতীবান্ধা উপজেলার গড্ডিমারী, সিংগীমারী, সিন্দুনা, ডাউয়াবাড়ি, পাটিকাপাড়া এবং পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রামের। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক বলছেন, পাকা ধান বালুর স্তূপে ঢেকে গেছে। পরিবার-পরিজন নিয়ে আগামীতে কী খাবেন তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তারা। কৃষি সম্প্রসারণ অফিসসূত্রে জানা গেছে, চলতি বন্যায় জেলার পাঁচ উপজেলায় ৯০ হাজার ২২ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ হয়েছে। এতে ৮৮১ হেক্টর আবাদি ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। কৃষি বিভাগ বলছে, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত পাঁচ উপজেলার ১৯ হাজার ১০০ কৃষককে ছয়টি ফসলে প্রণোদনা দেওয়া হবে। এর মধ্যে রয়েছে গম, ভুট্টা, চীনাবাদাম, পিঁয়াজ, সরিষা ও অড়হড়। হাতীবান্ধা উপজেলার ধুবনি গ্রামের খায়রুল ইসলামসহ অনেক কৃষক বলেন, তিস্তা নদীর পাশের জমিতে আমন ধান রোপণ করেছিলাম। হঠাৎ বন্যায় একরের পর একর জমি বালুর স্তূপ পড়ে ঢেকে গেছে। অনেক আবাদি জমি নদীতে বিলীন হয়েছে। সদর উপজেলার কৃষক আবদুল লতিফ বলেন, ‘৫ বিঘা জমিতে ধান লাগিয়েছিলাম। বন্যায় সব নষ্ট হয়ে গেছে। পরিবার-পরিজন নিয়ে কী খাব দুশ্চিন্তায় আছি।’ অতিরিক্ত উপপরিচালক সৈয়দা সিফাত জাহান বলেন, ‘রবি মৌসুম শুরু হয় ১৫ অক্টোবরের পর, ১৫ মার্চ পর্যন্ত চলে। জেলা উপপরিচালক ড. মো. সাইখুল আরিফিন বলেন, ‘বন্যায় আমনসহ অন্যান্য ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। কৃষি বিভাগ থেকে এসব জমি ও কৃষকের জরিপ করা হয়েছে। কীভাবে ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করা যায়, তা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে জানানো হয়েছে। রবি মৌসুমে এবার ১৯ হাজার কৃষকের মাঝে ছয়টি ফসল বিতরণ করা হবে।’