দুই যুগের বেশি সময় সিরিয়া কব্জায় রাখা বাশার আল আসাদ এখন কেবলই একজন আশ্রয় প্রার্থী। রাশিয়ায় তার আশ্রয় হয়েছে নেহাত মানবিক কারণে। আসাদ পতনের সাথে সাথে তার পরিবারের টানা ৫৩ বছরের শাসনেরও অবসান হয়েছে। ২০০০ সালে আসাদ সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট হওয়ার আগে তার বাবা হাফিজ আল-আসাদ টানা ২৯ বছর সিরিয়া শাসন করেছিলেন।
এখন সিরিয়ার নেতৃত্ব দিচ্ছে হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস)। তবে প্রশ্ন উঠছে পালিয়ে রাশিয়ায় আশ্রয় নেয়া আসাদ ও তার পরিবারের ভাগ্যে কি ঘটতে যাচ্ছে?
১৩ বছর আগে সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ শুরুর পর থেকে দামেস্ক-মস্কো সম্পর্ক আরও জোরদার হয়। সিরিয়ার মাটিতে রাশিয়ার দুটি গুরুত্বপূর্ণ সামরিক ঘাঁটি রয়েছে। ২০১৫ সালে আসাদের সমর্থনে সিরিয়ায় বিমান হামলা শুরু করে মস্কো। সে যাত্রা রাশিয়া সফলও হয়। বহু বিদ্রোহের পর টিকেও যান আসাদ।
তবে ২০২৪ সালে আর শেষ রক্ষা হয়নি। রাশিয়াও আসাদকে বাঁচাতে খুব একটা কার্যকর ভূমিকা নেয়নি। তাই প্রশ্ন উঠেছে, রাশিয়া কেন আগের মতো বাশার আল আসাদের পাশে থাকল না, তাকে রক্ষা করল না?
বিশ্লেষকদের অনেকের মতে, ইউক্রেনে যুদ্ধ করতে করতে রাশিয়া হয়তো কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েছিল কিংবা আসাদকে সহায়তা করার জন্য মস্কো হয় আগ্রহী ছিল না, নয় পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে রুশ প্রশাসনের সক্ষমতা ছিল না।
আসাদের বড় ছেলে হাফিজের বয়স ২২ বছর। মস্কোয় পিএইচডি করছেন তিনি।
বাশার আল-আসাদের স্ত্রীর নাম আসমা আসাদ। তিনি যুক্তরাজ্য ও সিরিয়ার যৌথ নাগরিক। পশ্চিম লন্ডনে একটি সিরীয় পরিবারে আসমার জন্ম এবং সেখানেই বেড়ে ওঠা।
আসমা পেশায় বিনিয়োগ ব্যাংকার ছিলেন। এর আগে লন্ডনে পড়াশোনা করেন। ২০০০ সালে পাকাপাকিভাবে সিরিয়ায় চলে আসেন আসমা। বিয়ে করেন বাশার আল-আসাদকে। ওই বছরই বাবা হাফিজ আল-আসাদের মৃত্যুতে বাশার আল-আসাদ সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট হন।
লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকস অ্যান্ড পলিটিক্যাল সায়েন্সের (এলএসই) ভিজিটিং ফেলো নাসরিন আলরেফাই বিবিসিকে বলেন, আসমার ব্রিটিশ পাসপোর্ট রয়েছে। কাজেই রাশিয়ায় থাকার পরিবর্তে তিনি চাইলে যুক্তরাজ্যে ফিরতে পারেন।
তবে নাসরিনের মতে, বাশারপত্নী আসমা হয়তো রাশিয়াতেই থেকে যেতে পারেন। কেননা, আসমার বাবা ফাওয়াজ আল-আখরাস নিজেও এখন রাশিয়ায় অবস্থান করছেন। তার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য, আসমার বাবা ফাওয়াজ আল-আখরাস পেশায় চিকিৎসক। মা সাহার একজন অবসরপ্রাপ্ত কূটনীতিক। মেয়ে আর মেয়ের পরিবারের পাশে থাকতে তারা মস্কোয় থাকতে আগ্রহী।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, সিরিয়ার প্রধানতম ‘অর্থনৈতিক খেলোয়াড়দের’ সঙ্গে ‘ঘনিষ্ঠ পৃষ্ঠপোষকতার সম্পর্ক’ বজায় রেখে চলতেন আসাদ ও আসমা। ওই ব্যক্তিদের প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে দেশের বাইরে অর্থ পাচার করতেন এ দম্পতি। বিনিময়ে প্রতিষ্ঠানগুলো সরকারের কাছ থেকে অনৈতিক সুবিধা ভোগ করত।
প্রতিবেদনের তথ্য, সিরিয়ার অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় গঠিত অর্থনৈতিক কমিটিতে প্রভাব রাখতেন ফার্স্ট লেডি আসমা। এমনকি দেশের খাদ্য আর জ্বালানি খাতের ভর্তুকি, বাণিজ্য ও মুদ্রার বিষয়েও তিনি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত দিতেন।
২০২০ সালে তৎকালীন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও অভিযোগ করেছিলেন, স্বামী বাশার আল-আসাদ ও তার পরিবারের সদস্যদের সহায়তায় ফার্স্ট লেডি আসমা সিরিয়ার সবচেয়ে কুখ্যাত ‘যুদ্ধের মুনাফাখোরদের’ একজন হয়ে উঠেছিলেন।
ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের আরেকজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বাশারপত্নী আসমাকে তার ‘পরিবারের ব্যবসায়িক প্রধান’ ও ছোটখাটো একজন ‘শাসক’ বলে মন্তব্য করেছিলেন। তার মতে, বাশার আল-আসাদের ভাই রামি মাখলৌফের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমেছিলেন আসমা। রামি সিরিয়ার শীর্ষ ধনীদের একজন।
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল